ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতা এড়াতে আজ বৈঠকে বসছে ইসি

আইনী জটিলতায় ঢাকা উত্তরের মেয়র উপনির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

আইনী জটিলতায় ঢাকা উত্তরের মেয়র উপনির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ বড় ধরনের আইনী জটিলতার ফাঁদে পড়তে পারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উপনির্বাচন। জানা গেছে, মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাাপাশি দুই সিটিতে নতুন যোগ হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডেও নির্বাচন করতে হবে। উপনির্বাচনে মেয়র পদে যিনি নির্বাচিত হবেন আইন অনুযায়ী তাকে বাকি মেয়াদ পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের মেয়াদ কতদিন হবে তা আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এই আইনগত জটিলতা মাথায় নিয়েই তারা মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি দুই সিটিতে নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও ইসি সচিব জানিয়েছেন এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইসি সূত্র জানায়, রবিবারের বৈঠকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি দুই সিটিতে নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে উপনির্বাচন এবং নতুন ওয়ার্ডের নির্বাচনের জন্য এ সংস্ত্রান্ত এজেন্ডাও তৈরি করা হয়েছে। এজেন্ডায় দুই সিটিতে সীমানা ও ওয়ার্ড বাড়ায় পরিষদের বা বর্ধিতাংশের কাউন্সিলর পদের মেয়াদ বা নির্বাচনের বিষয় কোন জটিলতা অথবা আইনগত দিক পরীক্ষা করার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও উত্তরের মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচনের বর্তমানের এখতিয়ারাধীন এলাকা, সীমানা ও ওয়ার্ড; শূন্য পদে উপনির্বাচনের জন্য ওয়ার্ড বিভক্তি ও ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস, বিভক্ত ওয়ার্ড ও পুনর্বিন্যস্ত ভোটার তালিকার সিডি প্রাপ্তির সর্বশেষ অবস্থান, উপনির্বাচনের প্রাক্কালে হালনাগাদ করা খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ও নিষ্পত্তি বিষয়ক কার্যক্রমে প্রভাবের বিষয় রয়েছে। জানা গেছে আগামীকালের (রবিবার) বৈঠকে আইনগত জটিলতার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সব নির্বাচনে প্রতিনিধিরা সাধারণত ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের পর পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে তাদের মেয়াদ শুরু হয়। মেয়াদ শেষের ৬ মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের বিধান রয়েছে। যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত কোন প্রতিনিধির মৃত্যু হলে সেখানে উপনির্বাচন হবে। উপনির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি বাকি মেয়াদ পূর্ণ করবেন। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হন তাকে সম্পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক গত ৩০ নবেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ১ ডিসেম্বর থেকে উত্তর সিটির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে উত্তর সিচির মেয়র পদে উপনির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেট প্রকাশের পর ইসির পক্ষ থেকে এ সিটিতে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উপনির্বাচনের পাশাপাশি নতুন যোগ হওয়া দুই সিটির ৩৬ ওয়ার্ডেও নির্বাচন করতে হবে এখন। গত ২৮ এপ্রিল ২০১৫ সালে একই দিনে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোট হওয়ার পর উত্তর সিটিতে ওই বছর ১৪ মে প্রথম সভা হয়। মেয়রের মৃত্যুর পর যিনি নির্বাচিত হবেন তাকে বাকি মেয়াদের জন্য অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু নতুন যোগ হওয়া কাউন্সিলররা কতদিনের জন্য নির্বাচিত হবেন না আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ বিষয়ে প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তারা যে নির্দেশনা দেন সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। যদিও ইসি সচিব জানিয়েছেন মেয়র পদে উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনগত কোন জটিলতা নেই। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন আইনগত জটিলতা নিরসন না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যেতে পারে নির্বাচন। বিশেষ করে কোন মহল থেকে আইনী জটিলতার বিষয়ে মামলা করলে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে। এছাড়াও উপনির্বাচনে নির্বাচিত মেয়রের মতো কাউন্সিলরদের বাকি মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করা হলেও জটিলতা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হবেন তারা মেয়াদ পূর্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে আইনগত জটিলতার বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি দুই সিটিতে নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা। আগামীকাল (রবিবার) কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত এজেন্ডা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘ওয়ার্কিং পেপার’ চূড়ান্ত করেছে ইসি সচিবালয়। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠিপত্র এসেছে। উত্তরের এ উপ-নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কিং পেপার তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি। ইসির বৈঠকে আলোচ্যসূচীর বিষয়ে ইসির উপসচিব (সংস্থাপন) মোঃ শাহেদুন্নবী স্বাক্ষরিত সভার নোটিসে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের শূন্য পদে নির্বাচন, সেই সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত অংশে নতুন গঠিত ওয়ার্ডগুলোয় নির্বাচন। জানা গেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত নতুন ওয়ার্ডগুলোর সীমানা ইতোমধ্যে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। এছাড়া এসব ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সব তথ্যও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র এবং ভোটার তালিকা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই দুই সিটি কর্পোরেশনে ৩৬ ওয়ার্ড বাড়িয়ে সীমানা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ নতুন ওয়ার্ড গঠনের গেজেট জারি করে। এরপর ৮ আগস্ট উত্তরের ১৮ সাধারণ ও ছয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণের ১৮ সাধারণ ও ছয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ভোট করতে ইসিকে অনুরোধ জানায়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পুরাতন ৩৬টির সঙ্গে নতুন ১৮ ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪। আর দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫। এখন নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে কিভাবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
×