ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত সনদ!

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

বিতর্কিত সনদ!

রাজধানীসহ সারাদেশে ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ির বিষয়টি একরকম ওপেন সিক্রেট। এসবের মধ্যে তথাকথিত কিন্ডারগার্টেন, শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ইংরেজী মাধ্যমের ¯দুর্বলই বেশি। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ধারণা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে সারাদেশে দেড় হাজারেরও বেশি ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব প্রায় নেই কিংবা থাকলেও নামসর্বস্ব। উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সনদও ভুয়া। মূলত কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারী অর্থ লোপাট, সর্বোপরি অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সনদের ব্যবসা করতেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনই একটি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, যেটি সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাময়িক অনুমোদন পায় ১৯৯৩ সালে। অচিরেই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সারাদেশে আলাদাভাবে একই নামে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসে এবং নামসর্বস্ব আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সনদপত্র বিক্রি শুরু করে। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জঙ্গী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতাসহ অর্থায়নের অভিযোগও ওঠে। প্রতিষ্ঠানটির বিতর্কিত কর্মকা- নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন অর্থের বিনিময়ে সনদ বিক্রির প্রমাণ পায়। ২০১২ সালের এক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধেরও সুপারিশ করে কমিশন। এ বিষয়ে আদালতেরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। দুঃখজনক হলো, এত কিছুর পরও এর কার্যক্রম বন্ধ করা যায়নি। বরং মাউশি ও ইউজিসিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের গত সোমবার অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে দারুল ইহসান প্রদত্ত ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের আগের সব সনদের বৈধতা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অরও যা জানা গেছে তা হলো, এই বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ নিয়ে অনেকেই নানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বৈধতা দেয়ার এই সুযোগের বিনিময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, ইউজিসিসহ শিক্ষা অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাপক আর্থিক সুবিধাসহ অনৈতিক সুবিধাদি নিচ্ছেন তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সনদধারীদের কাছ থেকে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দারুল ইসসানের সকল কার্যক্রম বন্ধ এবং ভুয়া সনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এর বৈধতা দেয়ার চেষ্টা অত্যন্ত আপত্তিকর, অগ্রহণযোগ্য এবং নীতি-নৈতিকতাবিরোধী। টাকার বিনিময়ে কেনা কোন সনদকেই বৈধতা দেয়া বাঞ্ছনীয় নয়, সমীচীনও নয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তো আরও নয়। দেশে এমনিতেই শিক্ষার মান নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। সে অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, মাউসিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রত্যাশা। অবশ্য শুধু দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, এ রকম ভুয়া ও ভুঁইফোঁড় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রাজধানীসহ সারাদেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। শিক্ষা বাণিজ্যসহ ভুয়া সনদ বিক্রির প্রায় অবাধ ব্যবসা করে যাচ্ছে তারাও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বিপদ আরও বাড়বে আগামীতে। এর পাশাপাশি সার্বিকভাবে শিক্ষার মানের ক্রমাবনতিসহ শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়তেই থাকবে।
×