ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফর শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চিত ॥ ট্রাম্পের জেরুজালেম নীতিতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

প্রকাশিত: ০৩:২১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফর শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চিত ॥ ট্রাম্পের জেরুজালেম নীতিতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আগামী সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করবেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি তিনি আরব বিশ্বের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক আগের মতো জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন করে ফেলেন। খবর ইয়াহু নিউজের। ট্রাম্পের নীতির একজন গোড়া সমর্থক হিসেবে মাইক পেন্স তিনদিনের সফরে মধ্যপ্রাচ্য আসছেন। এ সময় তিনি মিসর ও ইসরাইলী নেতাদের সঙ্গে গত ৬ ডিসেম্বর কয়েক দশকের নিরপেক্ষতার নীতি বিসর্জন দিয়ে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো, ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন এই সিদ্ধান্তের বিরূপ সমালোচনা করে। এর পর মাইক পেন্সই প্রথম উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা যিনি এই অঞ্চল সফরে আসছেন। সুস্পষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট মার্কিন নীতির জন্য পেন্সের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেনÑ ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তাই পেন্সের এবারের মিসর সফরের লক্ষ্য কী তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সফরের একেবারে অন্তর্নিহিত লক্ষ্য কী তা জানা না গেলেও আপাতত মনে হচ্ছে পেন্স তার মিসর সফরে সেখানের খ্রীস্টান সংখ্যালঘুদের দুর্দশা লাঘবে প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়া জেরুজালেম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ইরানের বিরুদ্ধে কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণ, ইসলামী চরমপন্থী ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যেই তাদের আলোচনা সীমিত থাকবে বলে জানা গেছে। মাইক পেন্স মিসরের উদ্দেশে মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন এবং বুধবার মিসর ও ইসরাইল সফর করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ইসরাইল সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন -এর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইসরাইলী পার্লামেন্ট নেসেন্টেও বক্তৃতা করবেন বলে জানা গেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট অতপর জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়াল (পশ্চিম দেয়াল) পরিদর্শনে যাবেন। মাইক পেন্সের এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্পের জেরুজালেম সংক্রান্ত ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ অর্জিত হলো। বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়াকে ট্রাম্প প্রশাসন পেন্সের এই সফরের মাধ্যমে প্রকারান্তরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করল। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার মন্তব্য হচ্ছে, জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণার পর বিগত দশ দিনে পক্ষে বিপক্ষে যা হয়েছে তা ছিল প্রথম পর্ব, এখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের এই সফরের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হলো। পেন্স, ফিলিস্তিনীদের আলোচনার টেবিলে আনার জন্য মিসরের প্রেসিডেন্টকে কোন ধরনের চাপ দিবেন কী না? এ প্রশ্নের জবাবে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন যে, এ ধরনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে না। বরং আমরা মনে করিÑ যা ঘটে গেছে তা চুপচাপ হজম করে (মেনে নেয়া) নেয়াই ফিলিস্তিনীদের জন্য ভাল হবে। তারা যদি প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ভাল করে পর্যালোচনা করে তবে বুঝতে পারবে যে, একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে কোন শর্তের ব্যত্যয় হয়নি। যিশুখ্রীস্টের জন্মস্থান, মুসা নবীসহ ইহুদীদের অন্যান্য নবীর কর্মস্থল এবং মুসলিমদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দস হওয়ায় জেরুজালেম তিন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছেই অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এই জেরুজালেমের দখল নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে মুসলমান ও ইউরোপের খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা ক্রুসেডের নামে বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়। এই পবিত্র স্থান সব ধর্মের মানুষের জন্যই উন্মুক্ত থাকা উচিত ছিল। ট্রাম্পের হটকারী পররাষ্ট্রনীতির কারণে তা এক কথায় ইহুদীদের কব্জায় চলে গেল। যা মুসলিম জনগোষ্ঠী তো নয়ই বরং অনেক খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরাও মেনে নিতে পারছেন না। সে জন্য আসন্ন বড়দিন উপলক্ষে সেখানের খ্রীস্টান জনগোষ্ঠী মাইক পেন্সকে বেথেলহেমে স্বাগত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
×