ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক নজরে মহিউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

এক নজরে মহিউদ্দিন

আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের গহিরার সম্ভ্রান্ত বক্স আলী পরিবারে। হালদা নদীর বুক চিরে বিভাজিত রাউজান ও হাটহাজারী। প্রকৃতির সেরা দান হালদা নদী। এই হালদা নদীর এ পারে রাউজান ওপারে হাটহাজারী। দেশের মিঠা পানির মৎস্য প্রজননের একমাত্র আঁধার হালদা নদী। রাউজানের গহিরার শান্তির দ্বীপের মরহুম হোসেন আহমদ চৌধুরীর পুত্র মহিউদ্দিন চৌধুরী। মাতার নাম বেদুরা বেগম। ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর তার জন্ম। গায়ের রঙের কারণে বাবা-মা আদর করে ডাকতেন কালু। তার দাদার নাম আশ্রাফ আলী চৌধুরী ছিলেন ব্যবসায়ী। নানা দলিলুর রহমান ছিলেন পোস্ট মাস্টার। নানার বাড়ি রাউজানের সুলতানপুরে। আর দাদার পরিবার ছিল দাপুটে। পূর্বপুরুষ তৎকালীন বার্মার আকিয়াবে দাদার পরিবার ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। দাদারা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু মহিউদ্দিনের রক্তে প্রবাহিত হয় বিপ্লবী চট্টগ্রামের চেতনা। তৎকালীন ইস্টার্ন রেলওয়েতে পিতা হোসেন আহমদ চৌধুরীর চাকরির সুবাদে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রাইমারী থেকে এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বার বার বদল হয়েছে। হোসেন আহমদ চৌধুরী সর্বশেষ তৎকালীন রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পিতার ইচ্ছায় তার শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয়েছিল সীতাকুন্ডে- সদরের মনীন্দ্রনাথ প্রাইমারী স্কুলে। এ জাতীয় স্কুলকে তখন টোল বলা হতো। ওই টোলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম হয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। এরপর সীতাকুন্ডে হাইস্কুলে ক্লাস টুতে ভর্তি হন। এ স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী সম্পন্ন করে পিতার বদলির সুবাদে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে চলে যেতে হয় নোয়াখালী জিলা স্কুলে। এরপর আবার স্কুল বদল। পিতার বদলি। তার স্কুল বদলি। এ ছিল তার শিক্ষা জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নোয়াখালী জিলা হাইস্কুল থেকে এসে ভর্তি হন পটিয়ার রাহাত আলী হাইস্কুলে। এরপর চট্টগ্রামের প্রবর্তক বিদ্যাপীঠ। আরও পরে নগরীর কাজেম আলী হাইস্কুল। এরপর যান হাটহাজারীর খন্দকিয়া শিকারপুর হাইস্কুলে (বর্তমানে কেএস নজু মিয়া হাইস্কুল) ভর্তি হন অষ্টম শ্রেণীতে। স্কুল জীবনেই তার বিভিন্ন গুণাবলী প্রকাশ পেতে থাকে। স্বভাবে ছিলেন চঞ্চল এবং মেজাজে ছিলেন দাপুটে। তিনি সিনেমাভক্তও ছিলেন। ওই স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার শেষদিনেও তিনি বন্ধুবান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখেছিলেন। ১৯৬২ সালে ওই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর তিনি বর্তমান সিটি কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজে ফার্স্ট ইয়ার শেষ না হতেই পিতা সিদ্ধান্ত বদলিয়ে পুত্র মহিউদ্দিনকে প্রকৌশলী বানাতে ভর্তি করান চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। এ ইনস্টিটিউটে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি হয়েছিলেন বহিষ্কৃত। ফলে বাধ্য হয়ে আবারও চলে যান চট্টগ্রাম সিটি কলেজে। ১৯৬৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ’৬৭ সালে সম্পন্ন করেন গ্র্যাজুয়েশন। এবার তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ¯স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে। ছাত্র রাজনীতি নেশার কারণে তিনি মুজিববাদী ছাত্রলীগের হয়ে চাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। নানা কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মন টিকল না। সিদ্ধান্ত নিলেন আইন শাস্ত্রে লেখাপড়া করবেন। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করলেন গণটোকাটুকি। ফুঁসে উঠলেন মহিউদ্দিন। শুরু করলেন আন্দোলন। আন্দোলনের ধাক্কায় গণটোকাটুকি বন্ধ হলেও তার আর আইন পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়নি। ঘটল পড়ালেখার ইতি। ছাত্রজীবনে তিনি কাব, স্কাউট, সিএস স্কাউট ও রোভার স্কাউট করেছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা শেষ করে তিনি শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মিল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায়ে তিনি ছিলেন হার না মানা। এরপর তিনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ধাপে ধাপে বিভিন্ন পথ পেরিয়ে পৌঁছে যান সাধারণ সম্পাদকের পদে। সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নানের মৃত্যুর পর অধিষ্ঠিত হন এ সংগঠনের সভাপতি পদে। সে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৬ সন্তান। স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। জ্যেষ্ঠ কন্যা জেব-উন-নেছা চৌধুরী লিজা বিবাহিত। জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার চৌধুরী মুহিবুল হাসান নওফেল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দ্বিতীয় কন্যা ফওজিয়া আক্তার টুম্পা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দুরারোগ্য ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে এ সুন্দর পৃথিবীকে বিদায় জানান। দ্বিতীয় পুত্র চৌধুরী বোরহানুল হাসান সালেহীন লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। যমজকন্যা ইশরাত শারমিন প্রিয়া ও নুসরাত শারমিন পাপিয়া সম্প্রতি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
×