ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় শিশুকে গলাটিপে খুন করেছে সৎভাই

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় শিশুকে গলাটিপে  খুন করেছে সৎভাই

গাফফার খান চৌধুরী ॥ কারণে অকারণে খুন হতে হচ্ছে শিশুদের। জমি নিয়ে বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা, অর্থ নিয়ে গ-গোল থেকে শুরু করে অনেক ঘটনার সূত্রধরেই বলি হতে হয়েছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীতে। ঘুমের সামান্য ব্যাঘাত ঘটায় এক শিশুকে নির্মমভাবে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে শিশুটি খুনী সৎভাইয়ের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করেছে। আর কোনদিন ঘুমের সময় শব্দ না করার কথা বলেছে। তাতেও মন গলেনি পাষ- খুনীর। রীতিমত ওই শিশুকে ডেকে নিয়ে গলাটিপে হত্যা করে নরপিচাশ। হত্যার পর লাশ নৌকার পাটাতনের নিচে ফেলে দেয়। খুনীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে খুনী হত্যাকা-ের সাবলীল বর্ণনা দিয়েছে। এই নৃশংস খুনী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতেও রাজি বলে পুলিশ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকার একটি নৌকা ঘাটের একটি ভাসমান নৌকা থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি নৌকার পাটাতনের নিচে লুকানো ছিল। প্রথম দিকে পুলিশ তেমন কোন কিছুই আঁচ করতে পারছিল না। জামা খোলার পর শিশুর গলায় সামান্য আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর তাতেই সন্দেহ হয় পুলিশ। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ এক ছেলের মা সুফিয়া বেগম লাশটি তার ছেলে সিমরানের বলে শনাক্ত করেন। তিনি উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয় সিমরানের সৎভাই বাপ্পীকে (২২)। এরপর পুলিশ বাপ্পীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শুরু হয় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ। আর তাতেই বেরিয়ে আসে সিমরানের মৃত্যু রহস্য। উত্তরখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার নাছির উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, সিমরানের পিতার নাম নাসির উদ্দিন। তিনি জাবের-জুবায়ের নামে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। ব্যক্তি জীবনে নাসির উদ্দিনের দুই স্ত্রী রয়েছে। নিহত সিমরান নাসির উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। প্রথম স্ত্রী হেলেনা বেগমের সন্তান বাপ্পী। বাপ্পীদের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বর্মী এলাকার বড়মা গ্রামে। সেখানেই বাপ্পী বড় হয়েছে। আর নিহত সিমরান তার ঢাকার উত্তরখান থানাধীন উত্তরপাড়ার উজাম গ্রামে তার নানার বাড়িতে থাকত। উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, সিমরানের পিতা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম স্ত্রী হেলেনা বেগমের অনেক আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। হেলেনার একমাত্র সন্তান বাপ্পী। বাপ্পী পুরোপুরি মাদকাসক্ত। সে গাজীপুরেই বড় হয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর নাসির উদ্দিন সুফিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। বসবাস করতে থাকেন উত্তরখানের উজাম এলাকার শ্বশুর বাড়িতে। ঘরজামাই হিসেবে সেখানেই বসবাস করছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেই একমাত্র সন্তান ছিল সিমরান। বাপ্পী সম্প্রতি তার পিতা নাসির উদ্দিনের উত্তরখানের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সারাদিন নেশা করে বেড়াত। সেখানে বাপ্পী সৎভাই সিমরানের সঙ্গে ঘুমাত। বৃহস্পতিবার বাপ্পী খুবই নেশা করে। নেশা করার পর ওই দিন বিকেল চারটার দিকে বাপ্পী শুয়ে আরাম করছিল। এসময় সিমরানও তার সঙ্গে শোয়। সিমরান খুবই চঞ্চল। সে সৎভাইয়ের সঙ্গে নানা রকমের দুষ্টুমি করতে থাকে। এতে বাপ্পী খুবই রাগ করে সিমরানের ওপর। কিন্তু শিশু সিমরান বিষয়টিকে মজা ভেবে আরও হৈ চৈ করছিল। এ সময় কষে ধমক দেয়। প্রায়ই এরকম হওয়ায় সিমরান বিষয়টি আমলে নেয়নি। এরপর বাপ্পী সিমরানকে বেড়ানোর কথা বলে ডেকে বাসার কাছে জলাশয়ে বেঁধে রাখা নৌকার ভেতরে নিয়ে যায়। নৌকার ভেতরে নিয়ে বাপ্পী সিমরানকে প্রচ- চড়-থাপ্পড় দেয়। এক পর্যায়ে সিমরানও বাপ্পীর ওপর চড়াও হয়। এসময় বাপ্পী হাত দিয়ে সিমরানের গলা চেপে ধরে। এক পর্যায়ে সিমরান মারা যায়। এরপর বাপ্পী নৌকার পাটাতনের নিচে সিমরানের লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
×