ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজও স্বীকৃতি পাননি ’৭১-এ নির্যাতিত বিভা রানী

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আজও স্বীকৃতি পাননি ’৭১-এ নির্যাতিত বিভা রানী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বিয়ের পর যুদ্ধদিনের পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানার পর বীরাঙ্গনা বিভা রানীকে নিয়ে সংসার করতে রাজি হয়নি তার স্বামী। ফলে একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্রসহ বিভা রানীকে ত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমায় বিভার স্বামী অনুকূল মজুমদার। সেই থেকে প্রতিবন্ধী পুত্র সাগরকে নিয়ে বিভা রানী সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংসারের চাকা সচল রাখতে মাঝেমধ্যে তাকে ধাত্রীর কাজ করতে হয়। জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধী সন্তান সাগরকে নিয়ে বিভা রানীর আরেক সংগ্রাম। আজও স্বীকৃতি মেলেনি এ বীরাঙ্গনার। আড়িয়ালখাঁ নদের শাখা পালরদী নদী সংলগ্ন গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের বাসিন্দা মৃত উমেশ চন্দ্রের আড়াই কাঠা জমিতে টিনের ঘর। এ টিনের ঘরেই একমাত্র ভাই উপেন্দ্র নাথ ম-লকে নিয়ে বিভা রানী সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসতেই বিভা রানী অনেকটা আনমনা হয়ে যান। বলেন, আমার বাবা টরকীরচরে বহুদিন ধরে বসবাস করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। এখানে আমরা চার বোন ও এক ভাই ছিলাম। ১৯৭১ সালে আমি টরকী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে পাকিস্তানী মিলিটারিদের নিয়ে আসে রাজাকাররা। চারদিকে আগুন দিতে শুরু করে। লোকজন যে যেদিক পারে ছোটাছুটি করছিল। আমার বাবা তখন পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় সবাই বাবাকে স্থান ত্যাগ করতে বললে বাবা আমাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালকিনির রমজানপুরের দিকে ছুটলেন। কিন্তু তখন আমরা দিগি¦দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম। আমিসহ বেশ কয়েকজন আখক্ষেতে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। সেদিন ওদের হাত থেকে আমরা কেউ রেহাই পাইনি। পাশবিক নির্যাতনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে বাবা খুঁজে ঘরে নিয়ে আসে। টরকী বন্দরে এসে আমরা দেখতে পাই বন্দরটি পাকিস্তানী আর্মিরা সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিভা রানী আরও বলেন, শ্রাবণ মাসে একই গ্রামের অনুকূল মজুমদারের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। পরবর্তীতে আমরা দুটি পরিবারের ১০ সদস্য টরকী থেকে নৌকাযোগে আটদিন পর ভারতে গিয়ে পৌঁছি। দেশ স্বাধীনের পর সবাই আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমার স্বামী আমার ওপর পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানতে পেরে সংসার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরইমধ্যে আমাদের সংসারে সাগর জন্ম নেয়ার পর সে আমাকে ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভা রানী বলেন, যুদ্ধের সময়ে সম্ভ্রম হারানোর কারণে আমার সংসার ভেঙ্গে গেছে। আজও সরকারীভাবে আমি কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। এমনকি আমার নামও তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অথচ আমার জীবনের করুণ কাহিনী স্থানীয় সকল মুক্তিযোদ্ধারা জানেন।
×