ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোন দেশের নেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে মস্কো

রুশ সাইবার যুদ্ধ প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

রুশ সাইবার যুদ্ধ প্রস্তুতি

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান স্যার স্টুয়ার্ট পিচ এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়া আটলান্টিক সাগরের তলদেশে থাকা আন্তঃমহাদেশীয় সংযোগ তার কেটে দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ইন্টারনেট সেবায় বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। খবর গার্ডিয়ান। রাশিয়ান জাহাজগুলোকে প্রায় সময়ই আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসব সংযোগ কেবলের কাছাকাছি অবস্থান করতে দেখা গেছে। আটলান্টিক সাগরের তলদেশে অবস্থিত এসব তারের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় তথ্য আদান প্রদান করা হয়। স্যার স্টুয়ার্ট পিচ ব্রিটিশ বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ন্যাটো সামরিক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে ন্যাটো সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কী কী হুমকির সম্মুখীন হতে পারে তা এয়ার মার্শাল পিচ তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে তথ্য প্রবাহ সংযোগ তারগুলো আড়াআড়িভাবে পরস্পরকে ছেদ করেছে। এগুলো যদি কোন কারণে কাটা পড়ে তবে এক মহাবিপর্যয়ের কারণ ঘটবে। কারণ বিশ্বের প্রায় ৯৭ শতাংশ টেলিযোগাযোগ ও দৈনিক ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো ব্যবসায়িক লেনদেন এই কেবলগুলোর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। রাশিয়ার জাহাজগুলো এসব তার না কেটেও বিশেষ কৌশলে এই তারের মাধ্যমে প্রবাহিত গোপন তথ্য জেনে নিতে সক্ষম। এর আগে এ ধরনের কার্যক্রম ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও দীর্ঘদিন ধরে চালিয়েছিল। এই ব্রিটিশ এয়ার মার্শাল বিশ্বে ভøাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশটি চিরাচরিত যুদ্ধ কৌশলের বাইরে ভিন্ন রীতিতে তার আগ্রাসন তৎপরতার চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রুশ নৌ বহরকে মোকাবেলার লক্ষ্যে ব্রিটেন ও তার মিত্রদের নৌবহর আধুনিকায়ন করতে হবে। ব্রিটিশ রক্ষণশীল দলের পার্লামেন্ট সদস্য রিশি সুনাক তার এক লেখা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা তথ্য থেকে জানা গেছে, রুশ ডুবোজাহাজগুলো নিয়মিতভাবে আটলান্টিক তলদেশে রক্ষিত সংযোগ কেবলের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে গোপন তৎপরতা চালায়। সুনাক তার রিপোর্টে আরও উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করে নেয় তখন দেশটি বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী মূল কেবল লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। ক্রিমিয়া হামলার পর থেকেই ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ন্যাটো মিত্র রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বিপদের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করছিল। যদিও পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বিশেষ করে বাল্টিক উপকূলবর্তী দেশগুলোতে রাশিয়ার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করার সম্ভাবনা কম, তথাপি রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিন বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব আগের অবস্থানে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। এই উদ্দেশে সিরিয়া যুদ্ধে রুশ সৈন্য মোতায়েনসহ পুতিন ন্যাটো জোটকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তার এসব প্রচেষ্টার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সাইবার ওযারফেয়ার। কথা প্রসঙ্গে ব্রিটিশ এয়ার মার্শাল পিচ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এক যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, যা শুনে ন্যাটো পরিকল্পনাবিদগণ হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, সে যুদ্ধে রাশিয়ার গোলন্দাজ বাহিনী ড্রোন বিমানের সাহায্য নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই ব্রিগেড ইউক্রেন সৈন্যকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ব্রিটিশ বিমান বাহিনী প্রধানের এসব কথার পটভূমি হচ্ছে যে, সম্প্রতি সেদেশের সরকার ব্যয় সঙ্কোচন নীতির অংশ হিসেবে মেরিন সৈন্য ৭ হাজার থেকে ৬ হাজার এবং দুটি উভচর জাহাজ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করার নীতি আগামী বছরের প্রথমে ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। পিচ তার এসব কথার অবতারণা করে বোঝাতে চাচ্ছেন, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমন রণ প্রস্তুতির মুখে সামরিক ব্যয় হ্রাস তো নয়ই বরং ব্যয় বৃদ্ধির সময় এসেছে। রাশিয়া, পারমাণবিক ও অপরামাণবিক সাবমেরিন ও অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে যেভাবে তাদের নৌবহরের আধুনিয়াকন করে চলেছে, রুশ সমরসজ্জা মোক বেলায় আটলান্টিক মিত্রদেশ ও ন্যাটো জোটের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটে প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে স্যার স্টুয়ার্ট পিচ এসব কথা বলেন।
×