ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বিজয় দিবসে গানে গানে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলবে ছায়ানট

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজয় দিবসে গানে গানে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলবে ছায়ানট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গানের সুরে শ্রোতার অন্তরে জাগিয়ে তোলা হবে দেশাত্মবোধ। শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাবেন উপস্থিত শ্রোতারা। এভাবেই সুরের আশ্রয়ে স্বদেশের প্রতি ভালবাসা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সর্বসাধারণের মাঝে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দিতে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য আয়োজনে যৌথ আয়োজক হয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজে সাজিয়ে সবাই গেয়ে উঠবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ শিল্পীরা গায়ে জড়াবেন লাল শাড়ি ও পাঞ্জাবি। দর্শকদের অনুরোধ করা হয়েছে সবুজ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়তে, যাতে লাল সবুজের পতাকার আদল আনা যায়। অনুষ্ঠানের আবহের মধ্যে জড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। হৃদয়ে থাকবে বাংলাদেশ। আজ শনিবার বেলা পৌনে চারটায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন ও দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে দীপ্ত টেলিভিশন। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকালে ছায়ানট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। আরও উপস্থিত ছিলেন দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উর্ফি আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি ড. সারওয়ার আলী। সারওয়ার আলী বলেন, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা কয়েকটি মাইলফলক অতিক্রম করেছিলাম। এগুলো হলোÑ ধর্মবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতাকে অতিক্রমের মাইলফলক। তেমনি জাতীয়তবাদ প্রতিষ্ঠার মাইলফলক। কিন্তু গত কয়েক বছর মনে হচ্ছে এই মাইলফলকগুলো ধসে পড়ছে। সাম্প্রদায়িকতার নৃশংস রূপ দেখছি, জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটছে। এদের প্রতিরোধে সংস্কৃতিচর্চাকেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ধরে এগুতে চাইছে ছায়ানট। আর তার সঙ্গে তরুণদের যুক্ত করা প্রয়োজন। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নৃত্যসহ ৯টি সম্মেলক গান, একটি করে একক গান ও আবৃত্তি এবং একটি দ্বৈত গান দিয়ে। নৃত্য পরিচালনা করছেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলায়েত হোসেন, সোনিয়া রশীদ, ফারহানা আহমেদ ও শ্রাবণী মজুমদার। সঙ্গীত পরিচালনায় আছেন সুমন মজুমদার ও বিজনচন্দ্র মিস্ত্রী। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কবিতা বাতাসে লাশের গন্ধ আবৃত্তি করবেন সৈয়দ হাসান ইমাম। একক কণ্ঠে গান শোনাবেন লাইসা আহমদ লিসা। দ্বৈত গান পরিবেশন করবেন ফারহানা আখতার শ্যার্লি ও বিজনচন্দ্র মিস্ত্রী। দেশের গানগুলো বেছে নেয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রাচুর্যপূর্ণ ভা-ার থেকে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশ-মানুষ-সমাজ নিয়ে আব্দুল লতিফ, গিরিন চক্রবর্তী, জয়দেব সেন, মোহিনী চৌধুরী ও শাহ আব্দুল করিমের সুরবাণী। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাঙালীর পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের ক্ষণকে স্মরণ করে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সমাপ্তি টানা হবে আয়োজনের। ছায়ানটের হাজার তিনেক শিল্পীর সঙ্গে এ আয়োজনে যোগ দেবে বাংলাদেশ স্কাউটস ঢাকা মেট্রোপলিটন, আটি ভাওয়াল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, হলিক্রস স্কুল ও কলেজ, উদ্দীপন ও নালন্দা বিদ্যালয়, একাডেমিয়া, এক্সেল একাডেমি, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল, সাউথ ব্রীজ, সানবীমস্ এবং স্কলাসটিকা স্কুল। কঞ্জুসের ৭০০তম মঞ্চায়ন ॥ নাটক দেখার আগেই চোখে পড়ে আরেক নাটক। প্রবেশপথে দৃশ্যমান হয় রিকশা। আরেকটু এগুতেই যেন অভ্যর্থনা জানায় গ্রামোফোন। এরই মাঝে চারপাশ থেকে ভেসে আসে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যযন্ত্রের সুর। এসব পেরিয়ে জাতীয় নাট্যশালার লবিতে ঢুকতেই দেখা মেলে এক বাকরখানি বিক্রেতার। তার পাশে দাঁড়িয়ে রঙিন পোশাকে পুরনো সব হিন্দি গান গাইছেন শিল্পীরা। এমন দৃশ্যে ধাঁধায় পড়া দর্শকের কাছে শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত পুরনো ঢাকা। এসব কিছুর পর বিশালাকৃতির পোস্টারটি বুঝিয়ে দেয় শুক্রবার ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক কঞ্জুস-এর ৭০০তম প্রদর্শনী। যে নাটকের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে পুরান ঢাকাকে কেন্দ্র করে। সেজন্যই পুরো নাট্যশালাতেই ছিল পুরনো ঢাকার আদলে। এমন আনন্দময় আবহে ৭০০তম বারের মতো মঞ্চায়িত হলো ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্যা মাইজার’ অবলম্বনে তারিক আনাম খান রূপান্তরিত ও লিয়াকত আলী লাকী নিদের্শিত নাটক ‘কঞ্জুস’। নাটক মঞ্চায়নের আগে জাতীয় নাট্যশালার লবিতে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর প্রযোজনাভিত্তিক আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাসের উপ-প্রধান জ্যঁ পিয়ের প্যসে, মঞ্চসারথী আতাউর রহমান, অধ্যাপক ড. আব্দুস সেলিম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা ও কঞ্জুসের নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী। এ অনুষ্ঠানে বিগত ৩০ বছর যাবত কঞ্জুস নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পী ও কলাকুশলীদের হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। ‘কঞ্জুস’ পুরনো ঢাকার বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রূপান্তরিত, যারা উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে এক বিশেষ ধারায় কথা বলেন। তাদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এ নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে পুরনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র কঞ্জুস বা হাড়কিপটে হায়দার আলী খানের বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোনো এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামানের। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া হায়দার আলী খানের খাস চাকর হয়ে যায়। এদিকে হায়দার আলী খানের ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এ হেন আচরণে তিক্ত-বিরক্ত হয়। কাযিম হাড়কিপটে হায়দার আলীর টাকা খসানোর মতলব আঁটে। এভাবেই হাসি-খুশি ও মিলনের মধ্য দিয়ে নাটকটি শেষ হয়। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্ত, জিয়াউদ্দিন শিপন, রুবেল শংকর, আজিজুর রহমান সুজন, আবুবকর বকশী, মাসউদ সুমন, ইশিতা চাকি, জুলফিকার আলী বাবু, খাদিজা মোস্তারী মাহিন, প্রিয়াংকা বিশ্বাস ও শাহরিয়ার কামাল। আবহ সঙ্গীত পরিচালনায় ইয়াসমীন আলী ও পলি কুজুর এবং আলোক প্রক্ষেপণে সুজন মাহাবুব। নাটকটির সেট ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ, পোশাক পরিকল্পনা কৃষ্টি হেফাজ ও লুসি তৃপ্তি গোমেজ, সঙ্গীত পরিকল্পনা লিয়াকত আলী লাকী। ১৯৮৭ সালের ৮ মে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শততম, ১৯৯৪ সালে ৫ ডিসেম্বর ২০০তম, ১৯৯৭ সালের ১১ জুলাই ৩০০তম, ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ৪০০তম, ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৫০০তম এবং ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল ৬০০তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মোনাকোসহ বিভিন্ন দেশে মঞ্চায়িত এ নাটকটি ১৯৯৩ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার অলিম্পিয়াডে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার স্বীকৃতি পায়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় উৎসব ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আগারগাঁওয়ে জাদুঘরের নতুন ভবনে ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক উৎসবের ষষ্ঠ ছিল শুক্রবার। এছাড়াও এদিন জাদুঘরের বিস্তৃত আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত মঞ্চে পথনাটক ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ পরিবেশন করে পদাতিক নাট্যসংসদ (টিএসসি)। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে ইস্কাটন গার্ডেন হাই স্কুল ও বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধান মিলনায়তনে নৃত্য পরিবেশন করে ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র। সঙ্গীত পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। ছিল আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় ভাস্কর্য অঙ্গনে ‘উল্টাগীত, গাছা, বান্ধা, হওলা’ পরিবেশন করে কক্সবাজারের উখিয়া লোকশিল্পী পরিষদ। জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, আমরা ক‘জন নবীন মাঝি, মৃদঙ্গ নৃত্যালয়, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), স¦প্নবীণা শিল্পকলা বিদ্যালয়, বনফুল সঙ্গীত একাডেমি, উদীচী (মিরপুর শাখা), আবর্তন, সঙ্গীতসমাজ কল্যাণপুর ও নাট্যকুঞ্জ। আলোকচিত্রে হিমালয়ের প্রকৃতি ও জীবন ॥ আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো তিন দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘প্লেইনস হিলস মাউন্টেইনস’। বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং এ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব ও ঢাকাস্থ নেপালি দূতাবাস যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। যাতে হিমালয়ের প্রকৃতি ও জীবন এবং পর্বতারোহণের ৫০টি দৃষ্টিনন্দন আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। শুক্রবার বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালি রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. চোপ লাল ভুসাল, অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং শিল্পী কণক চাঁপা চাকমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুইবারের এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেলা ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×