ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাঠ রক্ষায় জেনেটিক পরীক্ষা -জুবায়ের বারি

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

কাঠ রক্ষায় জেনেটিক পরীক্ষা -জুবায়ের বারি

জার্মানির ট্যুনেন ইনস্টিটিউটের ‘কাঠের গোয়েন্দারা’ কাঠের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বলে দিতে পারেন, কাঠ কোথা থেকে এসেছে ক্যামেরুন থেকে নাকি ঘানা থেকে। গরিব দেশ থেকে বেআইনী কাঠ পাচার রুখতে চান এই বিজ্ঞানীরা। ট্রপিক্যাল টিম্বার বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যের কাঠের চাহিদা এতই বেড়েছে যে, ঘানার বৃষ্টিপ্রধান অরণ্য থেকে আসা কাঠ সারা বিশ্বে রফতানি হয়। জার্মানি অবশ্যই তার মধ্যে পড়ে। ট্যুনেন কেন্দ্রের কর্মী গেরাল্ড জানালেন, ‘সাপেলি মেহগনি হলো আফ্রিকার সবচেয়ে মূল্যবান কাঠগুলোর মধ্যে একটি। আগে মেহগনির পরিবর্তে সাপেলি কাঠ ব্যবহার করা হতো। সাপেলির রং অনেকটা মেহগনির মতো, কাঠামো বানানোর জন্য খুব ভাল। আমাদের এখানে জানালার ফ্রেম বানানোর জন্য এবং মেঝে কাঠ দিয়ে মোড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। সাপেলি গাছ আফ্রিকার সর্বত্র পাওয়া যায়। বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে দামী কাঠগুলোর মধ্যে পড়ে এই সাপেলি।’ কাঠের ডিএনএ কাঠ পরীক্ষা করে চুরির হদিশও পাওয়া যেতে পারে। ট্যুনেন ইনস্টিটিউটে পাঠানো বিভিন্ন ধরনের কাঠের জেনেটিক পরীক্ষা করে সেই তথ্য জমিয়ে রাখা হয়, যাতে ভবিষ্যতে চোরাই কাঠ কোথা থেকে এসেছে, তার ডিএনএ থেকে তা বলে দেয়া যেতে পারে। গাছের ছাল ও পাতা থেকে ডিএনএ বের করা হয়। গাছটা কোন দেশের বা এলাকার, সে অনুযায়ী তার ডিএনএর হেরফের থাকবেÑ যেন একটা আঙ্গুলের ছাপ। কাজেই ঘানা থেকে যে কাঠ এসেছে, তাকে ক্যামেরুন থেকে এসেছে বলে ঘোষণা করা আর সম্ভব নয়। বেআইনী গাছ কাটার বিরুদ্ধে একটি নির্ভুল অস্ত্র এই জেনেটিক পরীক্ষা। ট্যুনেন ইনস্টিটিউটের আর এক ‘কাঠের গোয়েন্দা ব্যার্ন্ড ডেগেন বললেন, বেআইনী গাছ কাটার ফলে শুধু যে পরিবেশের ক্ষতি হয়, তা নয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, কারণ তারা শুল্ক কম পায়। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও কাঠের গোয়েন্দাদের লক্ষ্য হলোÑ গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপ্রধান অরণ্যের টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার। শুধু যেখানে গাছ লাগানো হচ্ছে, সেখানেই শুধু গাছ কাটা চলবে। বারো হাজার প্রজাতির কাঠ হামবুর্গের ট্যুনেন ইনস্টিটিউটে সারা বিশ্ব থেকে কাঠ আসে। ইনস্টিটিউটের ১২ হাজার প্রজাতির কাঠের সংগ্রহ বিশ্বের বৃহত্তম সংগ্রহগুলোর মধ্যে পড়ে। জার্মানিতে যে সব কাঠ আমদানি করা হয়, ইনস্টিটিউটের সংগ্রহের সঙ্গে মিলিয়ে তাদের উৎপত্তি পরীক্ষা করে দেখেন গেরাল্ড । কোন সংরক্ষিত প্রজাতির গাছ কাটা হয়ে থাকলে, সেটাও ধরা পড়ে গেরাল্ডের পরীক্ষায়। গেরাল্ড বলেন, ‘লোকে আমাদের কাঠের গোয়েন্দা বলে, প্রতিদিন আমাদের কাছে নতুন ‘কেস’ আসে যা আমাদের সমাধান করতে হয়।’ সরকারী কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যক্তি এই সব কাঠের নমুনা ট্যুনেন ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে থাকেন। কাঠের গোয়েন্দাদের কাজ হলো, যে কাঠের নাম দেখানো হয়েছে, নমুনায় সত্যিই সেই কাঠ কিনা, তা বের করা। অনেক সঙ্গীতশিল্পী তাদের বাদ্যযন্ত্রে কোন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানার জন্য ট্যুনেন ইনস্টিটিউটের দ্বারস্থ হন। কাঠের নমুনা জলে ফুটিয়ে নরম করে, পরে তা থেকে সরুসর চাকতি কেটে নেয়া হয়। সেই চাকতিগুলো পরীক্ষা করার সময় গেরাল্ড প্রথমে তার অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করেনÑ বহু ধরনের কাঠ তিনি চোখে দেখেই বলে দিতে পারেন। সঠিক বিশ্লেষণের জন্য নমুনাগুলো মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখা দরকার। কাঠের ধরন বা প্রজাতি ভুল দেখানো হলে, তার জন্য জরিমানা হতে পারে। ইনস্টিটিউটের সংগ্রহে যে সব কাঠের নমুনা রয়েছে গেরাল্ড তার সঙ্গে এই কাঠের নমুনা মিলিয়ে দেখেন। এখন পর্যন্ত তারা প্রতিটি কাঠের নমুনা শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে গেরাল্ডের দাবি। বিগত কয়েক বছরে নিয়ন্ত্রণ আরও কড়া হওয়ায়, কাঠের নাম ও জাতি ভুল দেখানোর ঘটনা কমে এসেছে। তবে ইনস্টিটিউটে পাঠানো নমুনাগুলোর মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কাঠের নাম ভুল দেখানো হয়েছে। গেরাল্ড বলেন, ‘বিশেষ করে কাটা কাঠের তক্তা ইত্যাদিতে কাঠের প্রকৃতি ভুল ঘোষণার সমস্যা থাকে। বাগানের জন্য কাঠের চেয়ার-টেবিলেও অনেক সময় যে কাঠ দেখানো হয়েছে, বস্তুত তার অন্য কাঠ থাকে। সেসব ক্ষেত্রে আমরা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দিই। সূত্র : ডয়েচ ভেলে, বিবিসি
×