ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে পূরণ হলো পাবনাবাসীর স্বপ্ন, চলল ট্রেন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

অবশেষে পূরণ হলো পাবনাবাসীর স্বপ্ন, চলল ট্রেন

তৌহিদ আক্তার পান্না ও কৃষ্ণ ভৌমিক, ঈশ্বরদী, পাবনা থেকে ॥ পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালু হলো। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় পরীক্ষামূলক যাত্রীবাহী ট্রেনটি মাঝগ্রাম জংশন থেকে যখন পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন হাজার হাজার মানুষ করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। নারী-পুরুষ-শিশুসহ সকল মানুষ উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে ট্রেন চলাচল প্রত্যক্ষ করেন। ট্রেনটি দাশুড়িয়া এবং টেবুনিয়া স্টেশনে কিছুক্ষণ যাত্রা বিরতি করে। কয়েক শ’ যাত্রী এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ট্রেনে চড়ে বসেন। অনেকেই দাঁড়িয়ে থেকে উপভোগ করেন। ট্রেনটি বেলা ১১ টায় পাবনা স্টেশনে পৌঁছে, আবার বারোটায় ফিরে যায় পাকশীর উদ্দেশ্যে। এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল জানান, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন থেকে ৩০ সদস্যের একটি টিম নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন যাত্রা শুরু করে। এ পথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করলে কম সময়ে পাবনাবাসীর সঙ্গে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর যোগাযোগের পরিধি বাড়বে। পাবনার লোকজনের চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানান কাজে এ ট্রেন সার্ভিস সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আসাদুল হক জানান, বর্তমান সরকার রেলবান্ধব সরকার। চলতি বছরের শেষে পাবনার সঙ্গে রাজশাহী ও আগামী বছরের শুরুতে পাবনার সঙ্গে ঢাকার রেল চলাচল শুরু হবে। বেলা সাড়ে ১১ টায় পরীক্ষামূলক এ ট্রেনটি পাবনা স্টেশনে পৌঁছলে হাজার হাজার মানুষ করতালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এ আনন্দঘন পরিবেশে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো ট্রেনটি বরণ করে নেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ মোশাররফ হোসেন, বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা অসীম কুমার তালুকদার, বাংলাদেশ রেলওয়ে সহকারী বাণিজ্য কর্মকর্তা মোঃ মজিবর রহমানসহ মিডিয়ার সংবাদকর্মী ও বিপুলসংখ্যক জনতা উপস্থিত ছিলেন। পাবনাবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইনের পাবনা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার নির্মাণ কাজের প্রথম ধাপের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। নবনির্মিত রেললাইনে বৃহস্পতিবার ট্রায়াল ট্রেন চালু হলো। ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে ঢালারচর পর্যন্ত মোট ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের মধ্যে পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত বাকি ৫৩ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজের দ্বিতীয় ধাপ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। ২০১০ সালে এই রেললাইনের নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা শহর হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ৫ অক্টোবর একনেক বৈঠকে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকায়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সরকারী এ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হলে সেই সময়েই ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত রেললাইনের দাবি তোলে পাবনাবাসী। দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার এই রেলপথটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তৎকালীন সরকার এই রেলপথ প্রকল্প বাতিল করে। দীর্ঘকাল পর আওয়ামী লীগ সরকার এ রেলপথটি বাস্তবায়ন করায় পাবনাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
×