ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ;###;মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা;###; রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে শোকার্ত জনস্রোত

যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ চাই ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের দৃপ্ত শপথ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ চাই ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের দৃপ্ত শপথ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সময়ের ব্যবধানে বাঙালীর স্লোগান-দাবিও পাল্টে গেছে। স্বাধীনতার পর ৪৩ বছর ধরে দেশবাসীর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ছিল একই দাবি, তা হচ্ছে: একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর বিচার। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা বিচারের পরিবর্তে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে করেছে পুরস্কৃত, লাখো শহীদের রক্ত জাতীয় পতাকা গণহত্যাকারীদের হাতে তুলে দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে। বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। ২০১৩ সালে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কলঙ্ক মোচনের প্রক্রিয়া। এরপর বাঘা বাঘা নরহন্তারক যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে। তাই এবার স্বজন হারানোর বেদনা আর বুদ্ধিজীবী হন্তারকদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের স্বস্তি- এই ভিন্ন আবহেই বৃহস্পতিবার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করল কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যার দায়ে বদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর এবার দ্বিতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করল বাংলাদেশ। দীর্ঘ চার দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে শীর্ষ বুদ্ধিজীবী হন্তারকদের বিচারের রায় কার্যকরের তৃপ্তি নিয়েই গোটা জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পালন করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসের প্রতিটি কর্মসূচীতে তুঙ্গে ছিল -সকল যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি, একাত্তরের ঘাতক সংগঠন জামায়াত নিষিদ্ধ এবং পরাজিত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের দাবি। জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নির্মূল করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার আর যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ বিনির্মাণে এবার দিবসটিতে নতুন প্রজন্মের জোয়ার নেমেছিল সর্বত্র। রাজাকার-আলবদর-আলশামস ও তাদের দোসরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে একাত্তরের মতোই যেন জেগে উঠেছিল দেশের মানুষ। পথে পথে ছিল নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানিয়ে ‘সচেতন নতুন প্রজন্ম’ গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। জাতীয় জীবনের বেদনাঘন দিনটিতে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লাখো মানুষ। তাদের হাতে ছিল ফুল, কণ্ঠে ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবেলার দৃপ্ত শপথ। বুদ্ধিজীবী হন্তারক যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি প্রবল ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশে পালিয়ে থাকা সব যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের দাবিও ছিল প্রচন্ড। বেদনায় আচ্ছন্ন মন, শোকে মুহ্যমান হৃদয়- এমনই বেদনাবিধুর পরিবেশে জাতি স্মরণ করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। তবে ছিল না কোন আক্ষেপের সুর কিংবা হতাশার বাণী। শোক যেন এখন পরিণত হয়েছে শক্তিতে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করতে পারায় এবং দেশ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে লাখো মানুষের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের ধ্বনিও উচ্চারিত হয়েছে। সকাল সাতটা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্মৃতিসৌধে পৌঁছলে মন্ত্রিপরিষদের কয়েক সদস্য, ডেপুটি স্পীকার, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। অন্যদেরও বিচার প্রক্রিয়া চলছে। তাই তো এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসা সব বয়সী, শ্রেণী-পেশার মানুষের কণ্ঠে ছিল এমনই সুর। বৃহস্পতিবার দিনভর আবালবৃদ্ধ-বনিতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিল মিরপুর আর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে। তাদের হাতে ছিল ফুল, কণ্ঠে ছিল সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের দাবি। নতুন প্রজš§সহ দেশমাতৃকার সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অমর স্মৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আসা লাখো শোকার্ত মানুষের কণ্ঠে ছিল অভিন্ন আওয়াজ ‘সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’ মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল মিরপুর ও রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। শোকার্ত মানুষ মিরপুর এবং রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুলে ফুলে নিবেদন করেছেন তাদের প্রাণের অর্ঘ্য। এ দুটি স্থানে একটি বা দুটি ব্যানার নয়, পাক হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর হায়েনাদের দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যার পর বধ্যভূমিতে ফেলে রাখার অসংখ্য নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ আলোকচিত্রে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারও বাঙালীকে শিহরিত করে তুলেছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত আল বদরনেতাসহ কয়েক যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার পথ আরও মসৃণ হওয়ার আশা বুকে ধারণ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সকালে কলো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শোক শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। এ সময় সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া, কালো ব্যানারে আর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা ‘বুদ্ধিজীবীর স্মরণে ভয় করি না মরণে’ ‘বুদ্ধিজীবীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ‘জামায়াত, শিবির, রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’। আর কণ্ঠে একাত্তরের ঘাতক রাজাকার, আলবদর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেøাগান, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিমূলে যাওয়ার অপেক্ষা। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সবার দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার, জাতি আর এ কলঙ্ক বহন করতে চায় না। ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক সকাল সাতটা। শীত তেমন একটা নেই বললেই চলে। কিন্তু কুয়াশার চাদর পুরো মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঘিরে রেখেছিল। ৫ মিনিট পরেই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীন ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ এবং ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও একে একে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো শহীদদের ২৯ পরিবারের সদস্যরা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এক শহীদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, ‘প্রতিবছরই আসি। সারা জীবন কষ্ট করলাম। শেষবারের মতো স্বামীর মুখটা দেখতে পাইনি। এখানে আসি সান্ত¡না পাওয়ার জন্য। প্রতিবছরই আসি গ্রামের বাড়ি থেকে। রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদি উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠন সারিবদ্ধভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপুমনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বেলা পৌনে এগারোটার দিকে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এই দিনে পাকিস্তানীরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। তাদের এই আত্মত্যাগ কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তিনি বলেন, একাত্তর সালে যে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, স্বপ্ন দেখেছি- সেই গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত। এক অবরুদ্ধ অবস্থায় আমরা বাস করছি। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার দল সংগ্রাম করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা লড়াই করছি, এই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হব। রায়েরবাজারেও শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বধ্যভূমিতে নামে জনতার ঢল। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের সকালে সূর্য ওঠার আগেই রায়েরবাজার ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। দিনের আলোর উজ্জলতা যতই বাড়তে থাকে জনতার সারিও তত দীর্ঘ। সব বয়সী, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ফুল হাতে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে শহীদদের। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে পথে হাঁটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ এমন স্বপ্ন দেখছেন তারা। শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিচারের মাধ্যমে সব যুদ্ধাপরাধী সাজা পাবে বলে আশাবাদী তারা। নতুন প্রজš§কে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা জানাতে সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন অনেক অভিভাবকও। বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সংগঠন জামায়াতের আর্থিক উৎস বন্ধসহ রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান শহীদ পরিবারের সন্তানরা। স্মৃতিসৌধের পাশেই প্রতীকীভাবে সেই দিনের হত্যাকা-ের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মের কাছে। কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে একাত্তরের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন তারা। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, আজ আমরা আপ্লুত ও গর্বিত বোধ করছি। এখানে ভাবগম্ভীর পরিবেশে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি। স্মৃতিসৌধের পবিত্রতা বজায় রাখা দরকার। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে যে চেতনা ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের আত্মমুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জনতার ঢল ॥ এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে জনতার ঢল নামে। সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনুন- সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ॥ একাত্তরে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে ফাঁসির দ- পাওয়া বিদেশে পলাতক দুই যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে রায় কার্যকরের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একের পর এক হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকাররা। শিক্ষক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সাংবাদিকদের বেছে বেছে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে তারা। নতুন প্রজন্মকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেয়ারও আহ্বান জানান বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শামসুদ্দিন পিয়ারা, নারী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক মিনু, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান সাংবাদিক শাহিন রেজা নূর ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
×