ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমি খুব বেশি মারকুটে নই

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

আমি খুব বেশি মারকুটে নই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা সময় ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোটা মনে হয়েছিল অসম্ভব। কারণ ২০১০ সালের আগে সেটা আর দেখা যায়নি। বিরল ঘটনা অদ্ভুতভাবে একবার ঘটতেই পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শচীন টেন্ডুলকর যখন গোয়ালিয়রে (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) ২০০ রান করে অপরাজিত থেকে নতুন মাইলফলকের সৃষ্টি করে ইতিহাস গড়লেন তখন সেটাকে সবাই বিস্ময়কর ও অদ্ভুত ঘটনাই মনে করেছিলেন। কিন্তু রোহিত শর্মা এটিকে একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বুধবার মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ৩০ বছর বয়সী এ ডানহাতি ওপেনার ২৩ টেস্ট খেলে কোন ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। অথচ টেস্ট ক্রিকেটেই ডাবল সেঞ্চুরি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ৫০ ওভারের ফরমেটে সেখানে তিনটি ডাবল। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার রোহিত? নাহ, তেমন নয়Ñ তিনি নিজেই দাবি করলেন ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করার জন্য খুব বেশি আক্রমণাত্মক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে মস্তিষ্ক কাজে লাগান রোহিত। তার দাবি এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল ও মহেন্দ্র সিং ধোনিরা অনেক বেশি শক্তিমান ও বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে রোহিতের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস কত রানের? শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ১৩ নবেম্বর ২০১৪ সালে তিনি খেলেছিলেন ২৬৪ রানের ইনিংস। স্বাভাবিকভাবে সেটা কোন টেস্ট ম্যাচের ইনিংস এমনটা বিনা প্রশ্নেই বলা যায়। কিন্তু ১৭৩ বলের সেই ইনিংসে ছিল ৩৩ চার ও ৯টি ছক্কার মার। এমন ইনিংস তো টেস্ট ক্রিকেটে সচরাচর দেখা যায় না। বোলারদের পিটিয়ে তুলোধুনা করার ক্ষেত্রে যারা সিদ্ধহস্ত তারাও টেস্ট ক্রিকেটে দেখেশুনেই খেলেন। রোহিত ওই ইনিংসটি খেলেছেন ওয়ানডেতে। যা এখন পর্যন্ত ইতিহাস। এর ঠিক এক বছর আগেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। ২ নবেম্বর ২০১৩, ব্যাঙ্গালুরুতে ১৫৮ বলে ১২ চার ও ১৬ ছক্কায় ২০৯ রানের একটি বিস্ময়কর ইনিংস ছিল সেটি। খুব বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন রোহিত? শেষ পর্যন্ত রান ও বলের সংখ্যাটা দেখলে সেটাই মনে হতে পারে! কিন্তু রগচটা স্বভাবের ব্যাটসম্যান হিসেবে কোন স্বীকৃতি কখনই নেই তার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও ধৈর্যশীল ইনিংসটি খেলেছিলেন টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা রোহিত। ৩৫ বলে করেছিলেন ২০ আর ৫০ পূর্ণ করতে লেগেছিল ৭১টি বল। ম্যাচের ৩৮তম ওভারে গিয়ে করেছিলেন সেঞ্চুরি। সবকিছুই স্বাভাবিক একজন ব্যাটসম্যানের মতোই ছিল। অথচ এরপরই তিনি ওয়ানডের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের গর্ব নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সেদিন। কোনভাবেই রোহিতকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা মারকুটে ব্যাটসম্যানদের কাতারে রাখা যাবে না। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২৬৪ রানের ইনিংস খেলার দিনেও ১৭ বলে করেছিলেন ৪Ñ আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। ৩৫ বলে ২০ করার পর থেকেই কিছুটা গতি বাড়িয়েছিলেন বলে ৩২তম ওভারে গিয়ে শতক পেয়েছিলেন। আর বুধবার মোহালিতে ছিলেন আরও শীতল। ৩৭ বলে ২০, ৬৫ বলে ৫০ রানের পর ৪০তম ওভারে গিয়ে করেন সেঞ্চুরি। তারপর আর আটকে রাখা যায়নি রোহিতকে। শেষ পর্যন্ত করলেন ১৫৩ বলে ১৩ চার, ১২ ছক্কায় অপরাজিত ২০৮। এ কারণেই নিজেকে নিয়ে এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমি এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল কিংবা এমএস ধোনির মতো কেউ নই। তাদের মতো শক্তি আমার নেই। মাঠটাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আমার মস্তিষ্ক কাজে লাগাতে হয়। আমার যতটুকু শক্তি আছে সেটা কাজে লাগানো অব্যাহত রাখি এবং সীমানা দড়ি পার করার জন্য মাঠটাকে নিয়েই খেলি। যখন তিন অঙ্কের রান পেরিয়ে যায় নিশ্চিতভাবেই ব্যাটিং করাটা অনেক সহজতর হয়। যদি কোন ভুল কেউ না করে সেক্ষেত্রে সে আউট হবে না। এটা শুধু তখন হতে পারে যদি খুবই ভাল একটা বল আসে। কিন্তু এরপরও বলব তেমনটা ঘটার সম্ভাবনা ১০ বারের মধ্যে মাত্র ২ বার।’ তাহলে কি ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করাটা এখন রোহিতের জন্য ‘ছেলের হাতের মোয়া’ হয়ে গেছে? চাইলেই কী তিনি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে সক্ষম? এ বিষয়ে রোহিত বলেন, ‘ক্রিকেটে কোনকিছুই সহজ নয়। যখন সবাই এটা টিভিতে দেখে সহজতর মনে করে, কিন্তু তেমনটা নয়। বিশ্বাস করুন, যখন আপনি উইকেটে থাকবেন তখন অবশ্যই মস্তিষ্কটাকে কাজে লাগাতে হবে এবং বলটাকে নিখুঁত টাইমিংও করতে হবে। এছাড়া ব্যাটিং কখনই সহজ নয়। আমি স্কুপ শট খেলা এবং পয়েন্টের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে চেষ্টা করি, ফিল্ডারদের নিয়ে খেলার চেষ্টা করি। এগুলোই আমার শক্তি। কারণ সবসময় সীমানা পার করাটা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ ৫ জন ফিল্ডার সীমানা পাহারা দেবেন। এ কারণে মাঠটাকে বুঝে শট নির্বাচন করা খুব জরুরী। বলটাকে খুব ভালভাবে পর্যবক্ষেণ করা জরুরী। এ সবই আমি করার চেষ্টা করি। পরিস্থিতিটা ব্রেন কাজে লাগিয়ে বোঝার প্রচেষ্টা চালাই। এটাই আমার খেলার ধরন।’
×