ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেঁসে যেতে পারেন মুলারের তদন্তে

সাংবিধানিক সঙ্কটের পথে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

সাংবিধানিক সঙ্কটের পথে ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসের আইনজীবী টাই কব তার মক্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্ত রাখতে চাচ্ছেন এই বলে যে রবার্ট মুলারের তদন্ত শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে এবং তাতে অভিযোগ থেকে তিনি নিষ্কৃতি পাবেন। গত আগস্টে কবের ধারণা ছিল নবেম্বরের মধ্যেই সবকিছু থেকে পরিত্রাণ ঘটবে। যখন সেটা ঘটেনি, তখন তিনি বলতে লাগলেন ক্রিসমাসের আগেই সব সমস্যার ইতি ঘটবে। কিন্তু এখন ক্রিসমাসও এসে যাচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কঠিন সমস্যার কোন সমাধান আসছে না। এখন অবস্থা হচ্ছে এমন যে দিল্লী বহুদূর। তার আশা একে একে নিরাশায় পরিণত হচ্ছে। ফরেন পলিসি। তদন্ত যতদূর এগিয়েছে তাতে দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, ট্রাম্পের দুই উপদেষ্টা এ পর্যন্ত অপরাধের দোষ স্বীকার করেছেন। যখন ট্রাম্প প্রতারণা করেছেন বলে পরিষ্কার হবে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রতিক্রিয়া কী হবে। মুলারের তদন্তে তাৎপর্যহীন বলতে কিছু নাই। এটাকে বিষের সুরাহি বলা যাবে, যা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বিদ্যমান হুমকি হয়ে দঁাঁড়াচ্ছে না? তদন্তের ফলাফল এমনও হতে পারে যে ট্রাম্প জড়িত সবাইকে ক্ষমা করবেন অথবা বিশেষ কাউন্সেল কিংবা উভয়কে বরখাস্ত করবেন। তখন যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের সাংবিধানিক সঙ্কটে হাবুডুবু খাবে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর থেকে যেটা এ পর্যন্ত আর দেখা যায়নি। ঝড় এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আঘাত হানেনি। কিন্তু দিগন্তে ঘন কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। গত পহেলা ডিসেম্বর সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা দোষ স্বীকার করার পর থেকে ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। তিনি এফবিআইয়ের বিরুদ্ধে যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন। ট্রাম্প ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছেন, বিচারমন্ত্রণালয় ও বিশেষ কাউন্সিলের অফিস যেসব তথ্যপ্রমাণ দাঁড় করিয়েছেন, তার সবই তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতে ভরা। এফবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পেটার স্টার্ককে পুরোপুরি মুক্তি দিয়ে মুলার অসাবধানতাবশত আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন। পেটার স্টার্ক এক এফবিআই আইনজীবীকে ট্রাম্প সম্পর্কে অবমাননাকর বার্তা পাঠিয়েছিল। যে কোন পক্ষপাতিত্বের কলঙ্ক এড়াতে মুলারের দৃঢ়সংকল্পের এটাই বড় প্রমাণ। অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাদের মতো এফবিআই গোয়েন্দারাও কোন রকম শান্তির ভয় না করেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু বিষয়টা হলো, এফবিআই গোয়েন্দাকে নিষ্কৃতি দেয়ার ঘটনাকে মুলারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন হতাশাগ্রস্ত ট্রাম্প। এফবিআইয়ের বিশেষ গোয়েন্দা স্টার্ক এমনিতেই ব্যাপকভাবে সম্মানের পাত্র। কিন্তু ডান-পন্থী গণমাধ্যম হিলারি ক্লিনটনকে মুক্তি ও ট্রাম্পকে ফাঁসানোর অভিযোগ আনেন তার বিরুদ্ধে। মুলারের আরেক অধীনস্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ট্রাম্প গং নতুন অভিযোগ এনেছে। তিনি হলেন এটর্নি এন্ড্রু উইসম্যান। কিন্তু তার অপরাধ কী? তিনি হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী রাতের পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন এবং ডেপুটি এটর্নি সেলি ইয়েটসকে এক ইমেল বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি হিলারির জন্য গর্ববোধ করেন। পরবর্তীতে ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন সাংবিধানিক আদালতে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। আদালতের কাছে বৈধতা পেতে প্রশাসনকে নিষেধাজ্ঞার খসড়া পুরোপুরি নতুন করে লিখতে হয়েছে। সবার প্রতি এই কুৎসা ও কটাক্ষ ট্রাম্প শিবির থেকেই বেরিয়ে আসছে। এমন কথাও বলা হচ্ছে, ট্রাম্প পক্ষপাত করছেন, কারণ তিনি এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কোমির বন্ধু। ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনতে যে কারও চাইতে বেশি চেষ্টা করার পরেও কোমি এখন প্রেসিডেন্টের বিরোধী। মুলারের অধীনস্তরা ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রচার চালান বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। এরকম নানা ঠুনকো অজুহাত দিয়ে ট্রাম্প কেবল মুলারের তদন্ত দলকেই প্রশ্নের মুখে ফেলতে যাচ্ছেন না; বরং পুরো এফবিআই এখন তার মূল লক্ষ্য।
×