ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়া টেকনাফে ক্ষোভ বাড়ছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘাতের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

উখিয়া টেকনাফে ক্ষোভ বাড়ছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘাতের শঙ্কা

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অবাধ সুযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলকে চরম বিপর্যয়ের মুখে রেখেছে। মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নে রোহিঙ্গাদের জীবনমান যখন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হয় তখনই তাদের প্রতি মানবতা প্রদর্শন করে অনুপ্রবেশ না ঠেকিয়ে মানবিকতার হাত সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে পুরনো ও নতুন মিলিয়ে ১৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা দেশের জন্য বড় ধরনের যে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে তা ইতোমধ্যে সরকার পক্ষেও ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দফায় দফায় বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালিয়েও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের মানুষ এ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে আগামীতে এসব রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সঙ্গে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত সংঘাতময় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চলছে দশকের পর দশক জুড়ে। কিন্তু গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে গণহত্যা শুরুর পর এদেশে অনুপ্রবেশে ঢল নামে। সারাবিশ্ব বিস্ময়কর দৃষ্টিতে এ পরিস্থিতি অবলোকন করেছে এবং পরিস্থিতি সমাধানের জন্য মিয়ানমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নানা মহলের পক্ষ থেকে বক্তব্যও এসেছে। কিন্তু এখনও সব বিফল হয়ে আছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত ২৩ নবেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এ সমঝোতা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকার ‘গো স্লো’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে বলে প্রতীয়মান। বিষয়টি বিশ্বের সকল সংস্থার কাছে প্রতিভাত হওয়ার পরও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পথ তারা বন্ধ করছে না। পক্ষান্তরে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি কখন শুরু হবে বা আদৌ শুরু হবে কিনা এমন নানা জল্পনা কল্পনার মুখে আগামী ১৯ ডিসেম্বর মিয়ানমার থেকে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সফরের কর্মসূচী নিয়েছে বলে সরকারী সূত্রে জানা গেছে। স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠক করে তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বুধবার নতুন কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তবে সীমান্তের ওপারে উত্তর মংডুর দংখালী এলাকায় এখনও প্রায় বিশ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়ে আছে। এদের অনুপ্রবেশে যেসব দালাল কাজ করছে তাদের ইশারা ইঙ্গিতে কখনও বড় গ্রুপে আবার কখনও ছোট গ্রুপে দলবদ্ধ হয়ে অনুপ্রবেশের পথ বেছে নেয়। সাগর পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে যারা মোটা অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে তাদের সহজে নিয়ে আসা হয়। আর যারা দিতে পারছে না তাদের অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ। সীমান্তের সবক’টি পথ এখনও খোলা রাখায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধ হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। বিজিবি সূত্রেও স্বীকার করা হয়েছে, এরা বিভিন্নভাবে ফাঁক ফোকরে উপকূলে পৌঁছে গেলে সরকারী নির্দেশনা অনুসারে মানবিক সহায়তা দিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে হয়। এতে ব্যত্যয় ঘটানোর কোন উপায় নেই। তবে এসব রোহিঙ্গারা আগামীতে উখিয়া টেকনাফসহ গোটা সীমান্ত অঞ্চলকে যে ঝুঁকিতে ফেলবে তা নিয়ে তাদেরও বড় ধরনের শঙ্কা রয়েছে।
×