ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রিত আড়াই লাখ শিশুকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ডিপথেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে টিকাদান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

ডিপথেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে টিকাদান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের ডিপথেরিয়াসহ নানা রোগব্যাধি প্রতিরোধে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এ কার্যক্রমের আওতায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশুকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হবে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আশ্রিত মোট দুই লাখ ৫৫ হাজার শিশুকে টিকাদানের কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গাভির (গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন) এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় ছয় সপ্তাহ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের বিভিন্ন টিকা (ডিপথেরিয়া, পারটোসিস, টিটেনাস, হেমিওফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হেপাটাইটিস বি, নিউমোকক্কাল কনজোগেট ভ্যাকসিন, বিভালেন্ট ওরাল পোলিও) দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মোট ১২ স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্প টিকাদানের আওতায় আনা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবিডার বলেন, যেসব শিশু নিয়মিতদান কর্মসূচীর আওতায় টিকা পায় না এবং ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস করে তাদের ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এক্ষেত্রে বর্তমানে কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্থাপনায় অবস্থানকারী শিশুরা ঘাতক ডিপথেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি নবরতœসামি প্যারানিয়েথারান বলেন, ডিপথেরিয়ার বিস্তার ঠেকাতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি, যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে না পারে। এই টিকা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় থাকা প্রতিটি রোহিঙ্গা শিশুকে রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। টিকা কার্যক্রমের বাইরেও আমরা ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ও প্রয়োজনীয় ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থা নিতে, তাদের যোগাযোগের ঠিকানা খুঁজে বের করাসহ পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করছি। জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২ হাজার ডোজ ডিপথেরিয়া এ্যানটি-টক্সিন আনছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৪৫ ডোজ দিল্লী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরলি ওয়ার্নিং এ্যালার্ট এ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম (ইডবিডব্লিউএআরএস) ও মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) প্রকাশিত এক তথ্যানুসারে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ১২ নবেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭২২ সম্ভাব্য ডিপথেরিয়ার শিশু রোগী পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ডিপথেরিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ‘দ্য সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া অনুদান হিসেবে প্রতিরোধযোগ্য বিভিন্ন রোগব্যাধির তিন লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। পরের সপ্তাহে সাত থেকে পনেরো বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে তিন রাউন্ড টিটেনাস ডিপথেরিয়া (টিডি) টিকা দেয়া হবে। এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেড় লাখ শিশুকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিকা প্রদান করা হয়। উক্ত কার্যক্রমের আওতায় ৫৬ হাজার শরণার্থীকে এমআর টিকা, ২০ হাজার জনকে বিওপিভি এবং ১৫ হাজার জনকে ভিটামিন এ খাওয়ানো হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ১২ স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পে ৩৬ টিম কাজ করছে।
×