নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১৩ ডিসেম্বর ॥ ভোটের উৎসব এখন নগরজুড়ে। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই নানামুখী শঙ্কায় পড়ছেন প্রধান তিন দলের মেয়র প্রার্থীরা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জাতীয় পার্টির, ভোট সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কা বিএনপির। তবে প্রার্থীদের নিজেদের প্রতি আস্থা ও ধৈর্যশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রংপুরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা জানান, মানুষ সচেতন। ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার সুযোগ এখন আর নেই। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম এখন সোচ্চার। প্রার্থীদের শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের বাকি আর মাত্র আট দিন। যার মধ্যে প্রচারের সুযোগ পাওয়া যাবে মাত্র সাত দিন। তাই চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে সর্বত্রই এখন ভোটের আলোচনা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের। প্রার্থীরা ছুটছেন রংপুর শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ভোটারদের মন ভোলাতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বুধবার সকালে ধাপ বাজার, মেডিক্যাল মোড়, চেক পোস্ট, ডিসির মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন ঝন্টু, বিএনপি প্রার্থী প্রচারণায় যান নগরীর শালবন, কামালকাছনা, শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকায়। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা নগরীর লালবাগ, কলেজ রোড, শাপলা চত্বর সালেক মার্কেট, জামাল মার্কেট এলাকায়। এ সময় অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা। তিনি বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের অতীতের নির্বাচন দেখেছেন। নির্বাচন এলে তাদের পক্ষে জয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা করবে।
সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন তার সঙ্গে দ্বৈত আচরণ করছে। বুধবার দুপুরে নগরীর ধাপ বাজার কাঁচাবাজার এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগকালে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের ঝন্টু বলেন, আমি আচরণবিধি মেনে যেখানেই পথসভা করছি সেখানেই বাধা দিচ্ছে কমিশনের নিয়োগপ্রাাপ্ত নির্বাচন মনিটরিং কমিটির লোকেরা। তিনি অভিযোগ করেন, অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা সমাবেশ করছে। কিন্ত নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা দ্বৈত নীতি গ্রহণ করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, অনেকেই সড়কের ওপর মঞ্চ তৈরি করে জনসভা করছে আর আমি চেয়ার নিয়ে উন্মুক্ত জায়গায় জনসংযোগে কথা বললেই বলছে এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। তাহলে এটা আমার প্রতি দ্বৈতনীতি নয় কি? যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই আমার পেছনে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাহলে আমি কিভাবে জনসংযোগ করব। স্পষ্ট বলতে চাই আমি ও আমার কর্মীরা কোন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না।
এক প্রশ্নের জবাবে ঝন্টু বলেন, আমার কোন কালো টাকা নেই। সুতরাং নির্বাচনে কালো টাকা ব্যয় করার কোন প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের বিশ্বাসী বলেই জনগণ এই নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করবেন। নৌকার গণজোয়ার দেখা যাচ্ছে। যেখানেই যাচ্ছি শুধু নৌকা আর নৌকা। সুতরাং নৌকাকে বিপুল ভোটে জনগণ বিজয়ী করবে বলে আশা করেন তিনি।
অপরদিকে, নিজের বিজয় শতভাগ নিশ্চিত দাবি করে ভোটের মাঠ যেন লেভেল প্লেয়িং থাকে সেই দাবি সরকারের অন্যতম শরীক জাপার প্রার্থী মোস্তফার। তিনি বলেন, যেখানে যাচ্ছি সেখানে সাড়া পাচ্ছি ভোটারদের। লাঙ্গলের জয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না বলে জানান তিনি। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদিন আহমেদ ঝন্টু মনে করেন, গত ত্রিশ বছর এই নগরে এমপি ছিলেন এরশাদ। উন্নয়নের কিছুই করেননি তিনি। তাই লাঙ্গলে ভোট না দেয়ার আহ্বান তার। ঝন্টু বলেন, রংপুরের যে উন্নয়ন হয়েছে তা বর্তমান সরকারের আমলে হয়েছে। তাই উন্নয়নের জন্য রংপুরের মানুষ নৌকায় ভোট দেবেন।
সুজনের রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনা বেঞ্জু জানান, ভোটাররা গণতন্ত্র রক্ষাকবচ। তারা ভোট দিয়েই গণতন্ত্র রক্ষা করবেন। আর পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব প্রার্থীদের। এজন্য প্রয়োজন নিজের প্রতি আস্থা, ভোটারদের প্রতি আনুগত্য, ধৈর্য এবং সহনশীলতার। নির্বাচনে অবিশ্বাস, শঙ্কা আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যেন সত্য না হয় সেদিকে কড়া নজর দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৬৬ ভাগ ভোট কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় । এসব কেন্দ্রের অবস্থান বেশির ভাগ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন এলাকায়। এর কোনটিতে নেই ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, কোথাও কোথাও বিদ্যুত সংযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটির দায়িত্বে থাকবেন ২৪ জন অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সকল প্রার্থী সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কারও পক্ষে কাজ করছে না, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে সকলেই সমান বলে জানান তিনি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৩ ওয়ার্ডের ১৯৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ১২৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আর্মড পুলিশ, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এসব কেন্দ্র আলাদা নজরদারিতে রাখা হবে। যেহেতু রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অন্যান্য সিটির মধ্যে প্রথম নির্বাচন তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের শঙ্কা, ইসির পরামর্শ শঙ্কিত না হওয়ার
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: