ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যারা ছিলেন ভোরের আলো

অসাধারণ এক প্রতিভার নাম মুনীর চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

অসাধারণ এক প্রতিভার নাম মুনীর চৌধুরী

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বাঙালী সংস্কৃতির ওপর কোন আঘাত সহ্য করেননি শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী। যখনই ষড়যন্ত্র হয়েছে তখনই রুখে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন নিরন্তর। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ অবধি প্রায় প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন বিজ্ঞানমনস্ক এ মানুষটি। আদর্শিক রাজনীতি, আপোসহীন দেশপ্রেমিক মুনীর চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানপ্রেমীদের দৃষ্টিতে শত্রু। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দেশীয় দোসর আলবদরের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তিনি। বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে আর ফেরেননি বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ ও লেখক। বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববাংলার মানুষদের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বরাবরই ছিলেন তৎপর। তারা পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেন। এ কারণে পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানী শাসকদের বিরাগভাজন। বুদ্ধিজীবী হত্যা স্পষ্টতই ছিল সামরিক জান্তার নীলনক্সার বাস্তবায়ন। এই নীলনক্সার লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করে বাঙালী জাতিকে নেতৃত্বহীন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়ায় পরিণত করা। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে মুনীর চৌধুরীকেও হত্যা করা হয়। ‘একটি নাম নয়, ইতিহাস’ ॥ মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’ শিরোনামে লেখক শা ম স্ আ ল্ দী ন লিখেছেন, বাংলাদেশের সাহিত্যের উৎকর্ষসাধনে মুনীর চৌধুরী সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম শিল্পসফল ও কালোত্তীর্ণ। মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১) শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাস। অসাধারণ এক প্রতিভার নাম মুনীর চৌধুরী। তাঁর প্রতিষ্ঠার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল শিক্ষকের আদর্শবাদিতা, নিষ্ঠা, সফল নাট্যপ্রতিভা ও সমাজ-চেতনার সমৃদ্ধি। জীবনের ছেচল্লিশ অধ্যায়ে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে মুনীর চৌধুরী নিহত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত শহীদদের মধ্যে অন্যতম মুনীর চৌধুরী। তাঁর চেতনায় সর্বদা লালিত হয়েছে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘটনা প্রবাহসহ বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও সংগ্রামী চেতনা। তিনি ব্যক্তি জীবনে অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন, ছিলেন মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল। আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী পূর্ণাঙ্গ নাম মুনীর চৌধুরীর। জন্ম মানিকগঞ্জে। বাবা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী। মুনীর চৌধুরী চৌদ্দ ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। রাজনীতি না করার শর্তে কারামুক্তি ॥ মুনীর চৌধুরী ছাত্রাবস্থায় বামপন্থী রাজনীতির আদর্শকে মান্য করতেন। ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সরদার ফজলুল করিমসহ বিজ্ঞজনের প্রেরণায় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। বেশ কিছু সময় পর মুনীর চৌধুরী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করেন। কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি ১৯৪৯ সালে ইংরেজীর অধ্যাপক হিসেবে খুলনার ব্রজলাল কলেজে যোগদান করেন, তবে কিছুকাল সেখানে বাংলাও পড়িয়েছিলেন। কারাবরণ করেন মার্চে ঢাকায়। রাজনীতি করবেন না এ শর্ত দিয়ে তিনি কারামুক্তি লাভ করেন এবং এই বছরেই মুনীর চৌধুরী লিলি মীর্জাকে বিয়ে করেন। নাট্যসাহিত্যে অবদান ॥ নাট্যসাহিত্যে মুনীর চৌধুরীর অবদান বাংলার স্বপ্নকে জাগরিত করেছে। আর এই জাগরিত উৎসের মূলে মানসগঠনের ভিত্তি তাঁকে দান করেছে সমৃদ্ধি। ‘কবর’ তাঁর উল্লেখযোগ্য একটি নাটক। তাঁর পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ (১৯৬২), ‘চিঠি’ (১৯৬৬)। একাঙ্ক মৌলিক নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রাজার জন্মদিন’ (১৯৪৬), ‘মানুষ’ (১৯৪৭), ‘পলাশী ব্যারাক’ (১৯৪৮), ‘ফিটকলাম’ (১৯৪৮), ‘আপনি কে?’ (১৯৪৮), ‘নষ্ট ছেলে’ (১৯৫০), ‘দণ্ড’ (১৯৬২), ‘দণ্ডধর’ (১৯৬২) ও ‘দণ্ডকারণ্য’ (১৯৬৫) প্রভৃতি। তেমনি তাঁর অন্যান্য রচনার ক্ষেত্রেও রয়েছে সমান গুরুত্ব। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার মুনীর চৌধুরীর অনুবাদ রূপান্তরমূলক রচনাগুলো প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুনীর চৌধুরী আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে একটি অবিস্মরণীয় প্রতিভা। আমাদের দেশে আধুনিক নাটকের তিনিই জনক। রাজার জন্মদিনে নাটিকায় মুনীর চৌধুরীর যে নাট্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটেছিল, তা সার্থকতার সোপান বেয়ে বিকাশের এক পরিণত স্তরে পৌঁছেছিল ওথেলোতে। তাঁর এই উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নাট্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধিশালী করেছে।’ এক অবিস্মরণীয় শিক্ষক ॥ সরকার সোহেল রানা অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে লেখায় বলেন, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশে এক অবিস্মরণীয় শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশায়, বিশেষত শ্রেণীকক্ষে পড়ানো ও ছাত্রদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে মুনীর চৌধুরী বাংলাদেশে এক অদ্বিতীয় শিক্ষক। এক্ষেত্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি নিজেই। বিস্তর পঠন-পাঠন, বাচনভঙ্গির কারণে তিনি ছিলেন এক অতুলনীয় শিক্ষক। এক্ষেত্রে মনে হয়, তিনি যেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর যোগ্য উত্তরসূরি। তাঁর পড়ানোর ভঙ্গি নোট প্রস্তুতের অন্তরায় হতো। কেননা প্রমথ চৌধুরীর নীললোহিতের মতো তিনিও শুধু মুখে কথা বলতেন না, ‘তাঁর হাত-পা, বুক, গলা সব একত্র হয়ে একসঙ্গে বলত।’ তিনি ছাত্র-শিক্ষকের কোন কৃত্রিম সম্পর্কের বেড়াজাল তৈরি করতেন না। তাই শ্রেণীকক্ষের বাইরে ‘স্যার’ বলার চেয়ে ‘মুনীরভাই’ সম্বোধন ছিল তাঁর প্রিয়। তাঁরই অনেক প্রিয় ছাত্র আজও মুনীর চৌধুরীর পোশাকে ও বাচনভঙ্গিতে নিজেকে অবিরাম অনন্যরূপে শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করেন। একজন ভাষাবিজ্ঞানী ॥ মুনীর চৌধুরী ছিলেন একজন বড় মাপের ভাষাবিজ্ঞানী। বিশ্ববিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী চার্লস ফার্গুসনসহযোগে তাঁর লিখিত একটি প্রবন্ধ বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করেছিল। সাহিত্য, সংখ্যাতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ববিষয়ক লেখাগুলো ভাষা বিজ্ঞানে তাঁর জ্ঞান, পাণ্ডিত্য ও অনুরাগের বহির্প্রকাশ। তিনি যে ব্যাকরণ বইটি রচনা করেন, তা অদ্যাবধি বাংলা ব্যাকরণের ‘বাইবেল’ বলে খ্যাত। মুনীর চৌধুরীর অনন্য অবদান বাংলা বর্ণলিপির সংস্কার ও ‘আধুনিক’ টাইপ রাইটার। টাইপ রাইটারের জন্য তাঁর উদ্ভাবিত কিবোর্ড ‘মুনীর অপটিমা’ নামে খ্যাত। এটা তাঁর মৌলিক আবিষ্কার। এ কাজে যেন আমরা এক অন্য মুনীর চৌধুরীকে পাই। তাছাড়া তিনি ‘মীর মানস’, ‘তুলনামূলক সমালোচনা’, ‘বাংলা গদ্যরীতিসহ নানাবিধ প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া ‘সিতারা-ই ইমতিয়াজ’ খেতাব বর্জন করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমালোচনায় বন্দী ॥ শহীদ মুনীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৭ নবেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। পিতা খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়া তথ্যে জানা গেছে, মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী (১৯৪৭), বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (১৯৫৪) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে (১৯৫৮) স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি খুলনার ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)-এ অধ্যাপনার (১৯৪৭-৫০) মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (১৯৫০) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ও বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ, কমিউনিস্ট পার্টি, ভাষা আন্দোলন ইত্যাদির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে সভা হয় তাতে তীব্র ভাষায় বক্তৃতা দেয়ার অভিযোগে নিরাপত্তা আইনে সরকার তাঁকে বন্দী করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে গ্রেফতার হন ও তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সময় প্রায় দুই বছর তিনি দিনাজপুর ও ঢাকা জেলে বন্দী জীবনযাপন করেন। বন্দী অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দীদের অভিনয়ের জন্য লেখেন ‘কবর’ নামের একাঙ্কিকা। ১৯৫৩ সালে বামপন্থী রণেশ দাশগুপ্ত জেলখানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ জানান। নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভেতরে, যাতে কারাবন্দীরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সঙ্গী কারাবন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই অকালে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর স্থানে মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে যান। বাঙালী সংস্কৃতিতে কোন আঘাত নয় ॥ বাঙালী সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধাশীল মুনীর চৌধুরী সংস্কৃতির ওপর কোন আঘাতকে সহ্য করেননি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকার রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিলে তিনি তার প্রতিবাদ জানান। পরের বছর সংস্কারের নামে বাংলা বর্ণমালা বিলোপের উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি তারও প্রতিবাদ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুনীর চৌধুরী ফিরে আসার পর পরই স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু। তাঁর কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায়। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের সহযোগী আলবদর বাহিনী তাঁর বাবারবাড়ি থেকে অপহরণ করে ও সম্ভবত ঐদিনই তাঁকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জেল ॥ পান্না কায়সার সম্পাদিত ‘হৃদয়ে একাত্তর’ গ্রন্থে ‘বাবার স্মৃতি হৃদয়ে’ লেখায় আসিফ মুনীর লেখেন, ‘...আমার জন্মদাতা মুনীর চৌধুরী একাত্তরের মধ্য ডিসেম্বরে অজ্ঞাতনামা ছাত্র নামধারীদের সাথে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান’। ‘...একাত্তরের আগেই তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন। যে কর্মকা-ের জন্য সভা সমিতির আয়োজন করেছেন, জেল খেটেছেন। শেষ দিকে পড়া, লেখা আর সংসারের মাঝেই নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। ঘরে আসতে চেয়েছিলেন রাজনীতির নোংরা ব্যূহভেদ করে আমাদের হাত ধরে। পারেননি বলেই হারিয়ে গেলেন চিরতরে। আশ্চর্য লাগে, এত রক্তক্ষয় হল, এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল, তবুও মানুষের শিক্ষা হয় না। কারণ জীবন চলমান আর মানুষের চিন্তা চেতনা স্থবির।’ বাবা সম্পর্কে তিনি আরও লেখেন, ‘ আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। বাবা বিদেশে পড়াশোনার সময় তিনি আমাদের বাড়িতে গেছেন। একসাথে তারা জেলও খেটেছেন। সত্তরের নির্বাচনে আমার মা-বাবা দু’জনেই নৌকায় ভোট দিয়েছেন-দু’জনেরই জীবনের শেষ ভোট দেয়া।’ ‘...১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আমি শিশু। সে সময়ের আবছা দু’একটা ঘটনা স্মৃতিপটে রয়ে গেছে শুধু। মনে আছে একদিনের কথা। আমরা তখন ফুলার রোডের ফø্যাট ছেড়ে সেন্ট্রাল রোডে দাদার বাসায় থাকছি। সেদিন এয়ার রেইড চলছিল। থেকে থেকেই গুলি আর বোমার শব্দ। তখন আরো অনেক আত্মীয় স্বজনই আমরা ঐ বাড়িতে ছিলাম। একটি ঘরে সবাই আমরা মেঝেতে শুয়ে আছি চুপচাপ। শব্দ শুনছি সবাই। মাঝে মাঝে কেউ কেউ চমকে উঠছে। ...বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম একটা লাল আভায় আকাশ মাঝে মাঝে আলো হয়ে উঠছে।’
×