ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফজলুল হক খান

বুদ্ধিজীবী হত্যা, দালাল আইন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বুদ্ধিজীবী হত্যা, দালাল আইন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের উষালগ্নে আমরা হারিয়েছি দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পরিণতির ঠিক আগ মুহূর্তে জামায়াত, শিবির, রাজাকার, আলবদর কর্তৃক বহু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাক হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় জেনে বাঙালী জাতিকে মেধাহীন করার জন্য হিং¯্র ছোবল হেনেছিল বুদ্ধিজীবী সমাজের উপর। স্বাধীনতার উষালগ্নে রাজাকার আলবদর বাহিনী শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার পাশা, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ডাঃ ফজলে রাব্বি, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, আলতাফ মাহমুদ, জ্যোর্তিময় গুহ ঠাকুরতা, সিরাজউদ্দিন হোসেন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মোঃ মোর্তাজা ও মুনীর চৌধুরীসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কবিতা, গান, সাহিত্য শিল্পকর্ম, নাটক, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জাতীয় চিন্তা-চেতনায় জাতীয়তাবাদী ভাবধারা গড়ে তোলা এবং তার বিকাশ ও পুষ্টিসাধনের কাজটি করেছিলেন বুদ্ধিজীবী সমাজ। এ জন্য ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনার সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের হত্যারও পরিকল্পনা করা হয়। পাকিস্তানী সেনারা অপারেশন চলাকালীন সময়ে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ২৫ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয়। এভাবে দীর্ঘ নয় মাসই চলে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকা-। তবে হত্যার ব্যাপক অংশটি ঘটে যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুদিন আগে। স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে ৬৩৯ জন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, ২৭০ জন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, ৫৯ জন সাংবাদিক, ১৮ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৪ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৪১ জন আইনজীবী, ১৩ জন সাংবাদিক, ৫০ জন চিকিৎসক, ১৮ জন শিল্পসাহিত্যিকসহ সর্বমোট ১ হাজার ১১২ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। আর তাকে তালিকা প্রস্তুতিতে সহযোগিতা ও হত্যাকা- বাস্তবায়নের কাজে যুক্তছিল মূলত জামায়াতে ইসলাম কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিল বদর বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও প্রধান জল্লাদ ছিল আশরাফুজ্জামান খান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর দুঃসহ নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য দুষ্কর্মে সহযোগিতা করার জন্যই গঠন করা হয়েছিল রাজাকার, আলবদর বাহিনী। উপরন্ত পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সারাদেশে গ্রাম পর্যায়ে গঠন করা হয়েছিল পিস-কমিটি, যার সদস্যরা দালাল নামে পরিচিত। এদের বিচার করার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু স্বদেশ ফিরেই ঘোষণা করেছিলেন, বিশ্ব মানবতার ইতিহাসের জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শাসনভার গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই ২৪.০১.১৯৭২ সালে জারি করেন ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭২।’ এই আইনের অধীনে বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সারাদেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দালালদের গ্রেফতার ও বিচারের জন্য পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়। ওই অধ্যাদেশ জারির পর ১৯৭৩ সালের নবেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ জন রাজাকার, আলবদর ও দালালকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৭৩-এর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৪৮টি বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। ২ হাজার ৮৪৮ জন আসামির মধ্যে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ৭৫২ জন দোষী সাব্যস্ত হয় এবং বিভিন্ন দ-ে দ- দেয়া হয়। বাকি ২ হাজার ৯৬ জন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পায়। অবশিষ্টদের বিচারকাজ তখনও চলছিল। ইতোমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৭২ সালে দালাল আইন জারির পর যারা সরকারের এ পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার অভিযোগ তুলেন। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভে বাংলাদেশের আবেদন বিবেচনায় চীন ভেটো প্রদান করে। ওদিকে ভুট্টো খেলেন আর এক খেলা। পাকিস্তানে আটকে পড়া চার লাখ বাঙালীকে ৯০ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর মুক্তির জন্য হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানে আটকে পড়া চার লাখ বাঙালীর মধ্যে এক লাখ ষাট হাজার ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা, তেত্রিশ হাজার ছিলেন সামরিক বাহিনীর সদস্য। ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন ক্যাম্পে রাখা হয়। চাকরিচ্যুত বাঙালীদের অনেকেই পরিবারবর্গ নিয়ে বন্দী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করেন। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালীদের ফিরিয়ে আনা অতি জরুরী হয়ে পড়ে। এছাড়াও বাস্তবতায় দেখা যায় ১৯৭৩ এর অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৪৭১ জন বন্দীর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৮৪৮ জনের বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এ অবস্থায় সাইত্রিশ হাজার অপরাধীর বিচারকাজ সম্পন্ন করতে বারো বছর সময়ের প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা সাক্ষ্য প্রমাণাদির অভাবে ২ হাজার ৮৪৮ জনের মধ্যে ২ হাজার ৯৬ জনই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পায়। বঙ্গবন্ধু সরকার বিষয়টিকে উপলব্ধি করে ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর বাংলাদেশ দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের যারা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করে। ওই ঘোষণায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়, ‘এই আদেশ বলে দ-বিধির ৩০২ (হত্যা), ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা), ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৪৩৫ (অগ্নিসংযোগ কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন), ৪৩৬ (ঘরবাড়ি ধ্বংসের অভিপ্রায়ে অগ্নিসংযোগ কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন), ৪৩৮ (জাহাজে অগ্নিসংযোগ কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন) মোতাবেক অভিযুক্ত ও দ-িত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১ নম্বর অনুচ্ছেদ মোতাবেক ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক সাধারণ ক্ষমার পরিধি ছিল সীমিত। শুধু নিরাপরাধ ব্যক্তি যাতে বিচারের আশায় বছরের পর বছর হাজতবাস করতে না হয় সেজন্য মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সীমিত আকারে সাধারণ ক্ষমতার আওতায় আনা হয়েছিল। দোষী ব্যক্তি বিশেষ করে উপরোক্ত ৬টি অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছিলেন সাধারণ ক্ষমার আওতা বহির্ভূত। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক ফরমানের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ কোলাবোরেটর্স (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশটি বাতিল করা হয়। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ কোলাবোরেটর্স (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) বাতিল অর্ডিন্যান্সে বলা হয় ‘উক্ত আদেশটি বাতিল হওয়ায় কোন ট্রাইব্যুনাল, ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত সমীপে এই আদেশ বাতিলের অব্যবহিত পূর্বে মুলতবি থাকা সমস্ত বিচারকাজ বা অন্যান্য মামলা এবং ওই আদেশবলে কোন পুলিশ অফিসার বা অপরজন কর্তৃপক্ষ দ্বারা বা সমীপে পরিচালিত সমস্ত তদন্ত কাজ বা অন্যান্য মামলা বাতিল হয়ে যাবে এবং সেগুলো আর চালানো হবে না।’ পরে জেনারেল জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ওই আদেশটি শাসনতান্ত্রিকভাবে বৈধ করে নেন। তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু সরকার নির্দোষ রাজাকার, আলবদর ও দালালদের সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন সত্যি কিন্তু তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করেননি। সংবিধানের ১২ এবং ৩৮ ধারার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে দ-িত ও মুক্তিপ্রাপ্ত দালালদের সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নম্বর ৪-এর ২য় তফসিলবলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২ ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাংশ এবং ৬৬ অনুচ্ছেদের (ঙ) উপদফা বিলুপ্ত করেন এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়গুলোকে শাসনতান্ত্রিকভাবে বৈধ করে নেন। এভাবে দালাল আইন বাতিল ও সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে উপরোক্ত ৬টি ধারায় অভিযুক্ত এবং দ-িত দালালরাও কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দু’লাখ মা’বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ফিরে আসা, শাহ আজিজের মতো রাজাকারের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পেছনে জেনারেল জিয়ার অবদান পুরোটাই। জেনারেল জিয়া গোলাম আযমকে দেশে ফেরার এবং থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেননি। অথচ তার উত্তরসূরি যারা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬-এর জুন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তারা গোলাম আযমের নাগরিকত্বর ফিরিয়ে দিয়েছেন। গোলাম আযম একজন যুদ্ধাপরাধী। বঙ্গবন্ধু সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ রহিত করেছিলেন এবং সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করার অধিকারও রহিত করেছিলেন। তা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে দাবিদার বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংবিধান বহির্ভূতভাবে গোলাম আযমকে সুপ্রীমকোর্টে নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছিল এবং কৌশলে তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিল। এই বিএনপি সরকারের আমলেই শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি উঠেছিল এবং প্রতীকী বিচারে গোলাম আযমের ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি সরকার তাদের দাবি আমলে নেয়নি। বরং প্রহসনের বিচারের নামে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিল এবং ২৪ জন দেশবরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে নিজামী, মুজাহিদের মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে। বাঙালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পতাকার এ অবমাননা মেনে নিতে পারেনি। তাই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে বিশেষ করে তরুণ সমাজের মাঝে ব্যাপক সচেতনার সৃষ্টি হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরালো হয়। বিষয়টি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করে এবং ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয় লাভের পর ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। ১৯৭৩ সালের প্রণীত আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। অবশেষে স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর শুরু হয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণাদি, শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম, আবদুল আলীম ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) কারাদ-ে দ-িত করে। আবদুল কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গংদের মৃত্যুদ- প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে কলঙ্ক মোচনের অধ্যায়। বাংলাদেশ পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এটাই আমাদের আশাবাদ। লেখক : বীমা ব্যক্তিত্ব
×