ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনসেবা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

জনসেবা

জনগণের কল্যাণ ও অগ্রগতি সাধন রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই কর্তব্যবোধ পালনে রাষ্ট্রের পক্ষে এগিয়ে আসতে হয় সরকারকেই। কল্যাণ রাষ্ট্রে মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে সরকার সব সময় তৎপর থাকে। মানুষের বেঁচে থাকা, বিশেষত নিরাপত্তার সঙ্গে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা সরকারের কর্তব্যকর্মের মধ্যে পড়ে। গণমানুষের অধিকার রক্ষা এবং তা পূরণে সচেষ্ট থাকতে হয় সরকারকেই। জনগণের সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেই রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে থাকে। সেই সরকার তার নির্বাচনী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গল নিশ্চিত করতে নিবিষ্ট হওয়ারই কথা। বিশ্বে অনেক কল্যাণ রাষ্ট্র রয়েছে, যেখানে জনগণের সুখ সুবিধা; অধিকারগুলোকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে কার্যকর করতে সচেষ্ট থাকতে হয়। জনগণের অধিকার, বিকাশ, বিস্তার যদি হয় সঙ্কুচিত, তা হলে জনজীবনে বিপর্যয় নামতে পারে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৌহার্দ্য বাড়ানোর ক্ষেত্র তেরি না হলে কোন কল্যাণই কার্যকর থাকে না। বর্তমান সরকার দেশকে কল্যাণ ও মঙ্গলমুখী করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। নানা ক্ষেত্রে জনগণের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে গণমানুষের অধিকার পূরণের পাশাপাশি তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ব্যাপক তাৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। যে কারণে দেশ আজ নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। আর সেই পথে জনজীবনও অগ্রগতি ও উন্নতির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের আয় উন্নতির ক্ষেত্রগুলোকে সম্প্রসারিত করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তেমনই নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য ‘ডাক টাকা’। ডাকঘরের মাধ্যমে দেশের মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনার জন্য চালু করা হয়েছে এই ডাক টাকা সেবা বিভাগ। মোবাইলের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন করার সুবিধা মিলছে। সর্বনি¤œ দুই টাকা রেখে এ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। এই টাকা ব্যালেন্স হিসেবে গণ্য হবে। এটা করার কারণ হচ্ছে, গ্রামে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে সাধারণত ব্যাংকের শাখা নেই। শাখা স্থাপন ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময় নেয়। তাই গ্রামীণ জনপদের মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছে। তাদের দোরগোড়ায় এক নতুন পদ্ধতি হিসেবে ডাকঘরের মাধ্যমে এই সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রামে বসেই তারা অর্থ লেনদেন, ভাতা পাওয়ারও ব্যবস্থা করতে পারছেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি অংশ বৈকি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চিঠিপত্র আদান-প্রদান বিলুপ্ত প্রায়। টেলিগ্রাম, টেলিগ্রাফ শব্দ আর উচ্চারিত হয় না। ফলে ডাকঘরগুলোর কাজকর্ম সীমিত হয়ে এসেছে। কোথাও তা বন্ধ হয়ে গেছে। একদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবা এই ডাক বিভাগকে কার্যকর করে তোলায় যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে ডাকঘরগুলো আবার সচল ও কর্মক্ষম হয়ে যাবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। ২০১৮ সালের মধ্যে তিন কোটি নন-ব্যাংকিং মানুষকে এই সেবার আওতায় আনা হয়েছে। মানুষের হাতের নাগালে সেবা পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। ‘ডাক টাকা’ দেশের মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধায় আনার পথ সহজ করে দিয়েছে। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে দ্রুত টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হতে যাচ্ছে ডাক টাকা। দেশে বর্তমানে এই সার্ভিসের গ্রাহক রয়েছে ৫ কোটি ৭৭ লাখ। ডাকঘর ফিরে এসেছে জনজীবনে এর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্দিপনায়। জনগণের সেবায় উন্নত দেশের মতো এদেশেও প্রথমবার কোন ব্যয় ছাড়াই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হচ্ছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই এ সুবিধা মিলবে। যে কেউ এই সুবিধা নিতে পারবেন প্রয়োজনানুয়ায়ী বিপুল জনগোষ্ঠীর জরুরী সেবা নিশ্চিত করতে কল সেন্টারটি চালু থাকবে ২৪ ঘণ্টা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করবে পুলিশ সদর দফতরের আইসিটি বিভাগ। ফলে বিপদে পড়লে অগ্নিসংযোগ ঘটলে কিংবা হাসপাতালে রোগী নিতে হলে এই সেবার মাধ্যমে সাড়া মিলবে। দেশের ৬৪টি জেলায় এই ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে। এই সেবাসমূহ প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। লাঘব করছে জনগণের নানাবিধ দুর্ভোগ। দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন যেখানে সরকারের লক্ষ্য সেখানে এই সেবা একটি যুগান্তকারী সংযোজন। এই সেবা যেন মুখ থুবড়ে না পড়ে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
×