ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলে বোলিংয়ে সবার ওপরে সাকিব

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বিপিএলে বোলিংয়ে সবার ওপরে সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগের চারটি আসরে দুইবারই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন। ব্যাটে এবং বলে সমান তালে নৈপুণ্য দেখানোর কারণেই সেই স্বীকৃতি জুটেছিল বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জন্য। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাটের চেয়ে বোলিংয়েই তিনি প্রতিপক্ষদের বেশি যন্ত্রণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০তে আগের চার আসর মিলিয়ে তার উইকেট ছিল সর্বাধিক ৬২। তবে কোনবারই আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হতে পারেননি তিনি। এবার সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়েছেন। মঙ্গলবার যখন ফাইনাল চলছিল শুরুতেই একটি উইকেট শিকার করে এবারের বিপিএলে সর্বাধিক ২২ উইকেট ঝুলিতে পুরে ফেলেন তিনি। এক আসরে সর্বাধিক ২২ উইকেট শিকারই বিপিএলের রেকর্ড। ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসরে সেই রেকর্ডটি করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেভন কুপার। এখন সাকিবও সেই রেকর্ডের মালিক। গত আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন সাকিব। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে প্রথম শিরোপা। যদিও ২০১৩ সালে শিরোপার স্বাদ পান মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে। সেবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ বিপিএলে ১২ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে ৯ নম্বরে ছিলেন এবং ব্যাট হাতে ৩২.৯০ গড়ে ৩২৯ রান করেও ছিলেন ৯ নম্বর অবস্থানে। কিন্তু অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ঢাকার শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখার জন্যই সেবার আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম আসরে সাকিব ১১ ম্যাচে ২৮০ রান করে (১০ নম্বরে) ও বল হাতে ১৫ উইকেট নিয়ে (৩ নম্বর) হন বিপিএলের সেরা। সেই অবস্থাটা ২০১৫ সালে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সে বছর তার দল রংপুর রাইডার্স আর শিরোপা জিততে পারেনি। সাকিবও ছিলেন একেবারে নিষ্প্রভ। ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে চার নম্বরে থাকলেও ব্যাট হাতে মাত্র ১৩৬ রান করতে পেরেছিলেন। গত আসরেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ১৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩ উইকেট লাভ করেন এবং ব্যাট হাতে করতে পেরেছিলেন ১টি অর্ধশতকসহ ২২৬ রান। কিন্তু সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকায় ছিলেন ২১ নম্বরে। এ কারণে ঢাকা ডায়নামাইটসকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতাতে পারলেও নিজে সেরা হতে পারেননি। এবার বিপিএলের শুরু থেকে সাকিবকে ব্যাটে-বলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। টানা ব্যর্থ হয়েছেন তিনি উভয় ক্ষেত্রে। প্রথম ৭ ম্যাচে (একটি পরিত্যক্ত) তার উইকেট ছিল মাত্র ৫টি। কিন্তু এরপর থেকেই জ্বলে ওঠেন তিনি। বিশেষ করে বল হাতে ঝলসে ওঠেন। ২১ নবেম্বর রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করে স্বরূপে ফেরেন তিনি। এরপর থেকেই নিয়মিত তার ঘূর্ণি বলে সাফল্য আদায় করে নিয়েছেন সাকিব। লীগপর্বের বাকি ৫ ম্যাচে তিনি শিকার করেন ১৪ উইকেট! এর মাধ্যমে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে যান। পরে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আরও দুই উইকেট নিয়ে এক আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারির মর্যাদা দখলের সুযোগ তৈরি করেন। মঙ্গলবার ফাইনালে শুরুতেই রংপুর ওপেনার জনসন চার্লসের উইকেট দখল করে সেই রেকর্ডটাও ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট হয়ে গেছে তার ফাইনাল শেষ হওয়ার আগেই। এ আসরে তিনি ব্যাট হাতেও ফাইনালের আগ পর্যন্ত করেছেন ১৮৫ রান। তবে রান সংগ্রাহকের তালিকায় অনেক পিছিয়ে তিনি। কিন্তু এই প্রথম কোন আসরে বোলিং নৈপুণ্যেও এক নম্বরে আছেন তিনি। আর সেটা নিশ্চিতও হয়ে গেছে ফাইনাল শেষ না হলেও। বিপিএল শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রথম আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হন স্পিনার ইলিয়াস সানি। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ১৭ উইকেট নেন সানি। এরপর ২০১৩ সালে হয় বিপিএলের দ্বিতীয় আসর। এই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আলফোনসো থমাস হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। তিনিও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলেন। ২০ উইকেট শিকার করেন। ইলিয়াস সানির রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েন। এক বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসর মাঠে গড়ায়। এ আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেভন কুপার তো আগের দুইজনকেও হার মানান। বরিশাল বুলসের হয়ে খেলে ২২ উইকেট নেন। যা এক আসরে বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড। গত আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ডোয়াইন ব্রাভো সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হন। ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ২১ উইকেট নেন। ২ উইকেটের জন্য কুপারকে পেছনে ফেলতে পারেননি। কুপার এককভাবেই সেরার অবস্থানে ছিলেন। এবার সাকিব কুপারকে সেই রেকর্ড এককভাবে ধরে রাখতে দেননি। সবমিলিয়ে ৬১ ম্যাচে সাকিব ৮৩ উইকেট নিয়ে বিপিএলের সেরা বোলার। আবার ব্যাট হাতেও ১১৫৬ রান করে চতুর্থ সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বিপিএলেও ব্যাটে-বলে যে কারও চেয়ে সেরা।
×