ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাঞ্জেলার দুর্বলতা পাশ্চাত্যের জন্য ভাবনার

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

এ্যাঞ্জেলার দুর্বলতা পাশ্চাত্যের জন্য ভাবনার

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বের অনেক নেতাই তাকে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসিয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আলোচনায় মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল তাদের দলে ভিড়েননি। তিনি তার প্রশংসায় গদগদ হয়ে কিছু বলেননি, জরুরী কোন আবেদনও জানাননি। তার পরিবর্তে সতর্ক শব্দচয়নে রচিত অভিনন্দন বার্তায় এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে সমর্থকদের উজ্জীবিত করার জন্য তিনি যা কিছুই বলে থাকুন না কেন, অতীতের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এবং মার্কেল নিজেও সেসব নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন ট্রাম্পও তাই করবেন। মার্কেল লিখেছিলেন, জার্মানি ও আমেরিকা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের প্রতি মর্যাদার মতো অভিন্ন মূল্যবোধ দ্বারা আবদ্ধ। মার্কেল আরও লেখেন : ‘এসব মূল্যবোধের ভিত্তিতেই আমি ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রস্তাব দিতে চাই।’ কিন্তু ট্রাম্পের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা থেকে মনে হয় না যে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ ও বহুপক্ষীয়বাদী ধ্যান-ধারণার প্রতি যে রকম আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এখন আর সে রকম আগ্রাহী আছেন। আর অন্যদিকে জার্মান রাজনীতির বর্তমান যে হালচাল তা থেকে বোঝা যায় যে, মার্কেল আর আগের মতো সেই সব মূল্যবোধকে রক্ষা করতে অতটা সক্ষম হবেন না। জার্মান রাজনীতিতে মার্কেলের যে অবস্থান ছিল এবারের হতাশাজনক নির্বাচনী ফলাফলের কারণে সেই অবস্থান ক্ষুণœ হয়েছে। মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য একটি সরকার গঠনে মার্কেল আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকার গঠন অত সহজে হচ্ছে না। সিভিইউ পার্টি এবং এর অনিচ্ছুক কোয়ালিশন অংশীদারদের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল গত ১৯ নবেম্বর তা ভেস্তে যায়। ফলে আলোচনা গড়িয়ে আগামী বছরেও চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই খবরগুলো ভাল নয়। বিশেষ করে ইউরোপের জন্য তো নয়ই। কারণ মার্কেল যদি হতোদ্যম হয়ে পড়েন তা হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বলে কিছু থাকবে না এবং সেটা ঘটবে এমন এক সময় যখন ইউরো জোনের সংস্কার করার জন্য শক্তিশালী নেতাদের প্রয়োজন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো আগামী মাসগুলোতে ইইউকে সংস্কারের এক উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপ তৈরির যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তাতে মার্কেলের সাহায্য তার বড়ই প্রয়োজন। কিন্তু এই দু’জনের মধ্যে ইতোমধ্যে বিশাল মতানৈক্য গড়ে উঠেছে। কারণ স্বদেশবাসীর কাছে কোন রকম কনশেসন বিক্রি করার মতো অবস্থা এখন মার্কেলের নেই। মার্কেল যদি সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হন এবং জার্মানিতে ২০১৮ সালে আবার নির্বাচন হতে হয় তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংস্কারের পরিকল্পনাটি শিকেয় ঝুলে যাবে। ইউরোপের বাইরেও মার্কেলকে তার দেশের রাজনৈতিক মর্যাদা বাড়াতে বা সমুন্নত রাখতে বেশ বেগে পেতে হবে। কারণ স্বদেশে তাকে সম্ভাব্য কোয়ালিশন অংশীদারদের খুশি রাখতে এবং চরম দক্ষিণপন্থীদের কোণঠাসা করে রাখতে যথেষ্ট ব্যস্ত থাকতে হবে। ইউরোপের যিনি হচ্ছেন আসল ভরসার পাত্র নিজ দেশের বিভেদমূলক রাজনীতির কারণে তাকে যদি বিভ্রান্তিকর ও হতোদ্যম অবস্থায় থাকতে হয় এবং ট্রাম্পের মনেও যদি এই প্রত্যয় জন্মে যে ওয়াশিংটনের পক্ষে তার দীর্ঘদিনের মিত্রদেরও আর বিশ্বাস করা সম্ভব নয় তাহলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আরও বেশি সংঘাতময় হয়ে উঠতে বাধ্য। তবে মার্কেলের ব্যাপার হলো তাকে অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না। তার দল সিডিইউ এখনও জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী দল। জনমত জরিপ অনুযায়ী তার জনসমর্থন এখনও ৫৪ শতাংশ। এমনকি কোয়ালিশন আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরও। জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। তার পরও আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া এ্যাঞ্জেলা মার্কেল কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন ক্লাউন নেতা যে ধরনের নেতৃত্ব যোগাতে পারেন পাশ্চাত্যের আজ তার চেয়েও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন।
×