ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিইসি শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরলেই তফসিল

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে তথ্য উপাত্তসহ নির্বাচন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং পেপার প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। তবে কবে নাগাদ এ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জানা গেছে, সিইসি নির্বাচন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে অংশ নিতে বর্তমানে শ্রীলংকায় রয়েছেন। দেশে ফিরলে এ মাসেই তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে শুধু মেয়র পদে উপ-নির্বাচন হবে, না বাকি ১৮ ওয়ার্ডের একসঙ্গে নির্বাচন তবে এ বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে ধারণা পরিষ্কার করা হয়নি। সিটিতে যোগ হওয়া নতুন ১৮ ওয়ার্ডের নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। আইনি জটিলতা থাকায় এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন। তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত দেয় সেভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতা নেই। ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে ভোট আয়োজনের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসিকে অনুরোধ জানিয়ে রেখেছে। সেক্ষেত্রে এ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নির্বাচন করতে আর কোনো জটিলতাও নেই। তিনি জানান, কমিশন নিজেরা বসে প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করবে উল্লেখ করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন করে যোগ হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জটিলতায় পড়তে হতে পারে। কারণ মেয়র নির্বাচনে উপ-নির্বাচন হলেও যোগ হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যোগ হওয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা কতদিনের জন্য নির্বাচিত হবেন বিষয়ে আইনে পরিষ্কার করে কিছু উল্লেখ নেই। উত্তর সিটি নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। সাধারণ নির্বাচনের প্রতিনিধিরা সাধারণত ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এক্ষেত্রে তারা কতদিনের জন্য নির্বাচিত হবেন তা স্পষ্ট নয়। আবার এই ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচনের জন্য আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। ইসি সূত্রে জানা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে সেভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করবে ইসি। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন এলাকা যুক্ত হলে তার মেয়াদকাল কতদিন হবে এটা ঠিক করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাছাড়া এ বিষয়ে কোনো আইন বিধির পরিবর্তন করতে হলে সেটি করবে তারা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসিকে যেভাবে বলবে সেভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ইসি সূত্র জানায়, সিটি করপোশনের সঙ্গে নতুন কোনো ওয়ার্ড যুক্ত হলে কোন প্রক্রিয়ায় সেগুলোতে নির্বাচন হবে এ সংক্রান্ত কোনো বিধান নেই। এছাড়া কত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এটাও বলা নেই। তবে কোনো ইউনিয়নে নতুন কোনো ওয়ার্ড যুক্ত হয়, তাহলে একটি বিধান রয়েছে পূর্বতন প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে সেখানে সাধারণ নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে এসব কিছু বলা নেই। তাই এক্ষেত্রে ১৮ ওয়ার্ডের নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক গেজেট বিজ্ঞপিতে ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিটির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এ সিটিতে উপ-নির্বাচন দিতে হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ সিটিতে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই এ সিটিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় ইসি। ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন আয়োজনের চিঠিপত্র পেয়েছি। তথ্য-উপাত্তসহ নির্বাচন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং পেপার প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছেন সিইসি। তবে কবে কখন নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে সিইসি দেশে ফিরলে চূড়ান্ত হবে। জানা গেছে, গত সোমবার ইসির বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার আগে তথ্য-উপাত্ত সংক্রান্ত যাবতীয় ওয়ার্কিং পেপার প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা দিয়ে মঙ্গলবার সকালে তিনি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। আগামী শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দেশে ফিরেই ঢাকা উত্তর সিটিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিটি করপোরেশনে ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ এ দুই সিটি করপোরেশনের পার্শ্ববর্তী ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন ভেঙ্গে সিটি করপোরেশনের এলাকাভুক্ত করে গত ২৬ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে। এতে ঢাকা উত্তরের সঙ্গে নতুন করে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়। নবগঠিত এলাকা নিয়ে এ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা এখন ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৮টি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। লন্ডনে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ নবেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরপর গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ১ ডিসেম্বর থেকে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন), আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৫ (ঙ) মোতাবেক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ১ তারিখ থেকে ডিএনসিসিকে শূন্য ঘোষণা করা হলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই সিটিতে নির্বাচন করতে হবে।
×