ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী আক্তার সান

কোহলি মানেই রেকর্ড!

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

কোহলি মানেই রেকর্ড!

টেস্ট ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক হিসেবে’ সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েছেন বিরাট কোহলি। দিল্লীতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪৩ রানের ম্যারাথন ইনিংস উপহার দিয়ে ব্রায়ান লারাকে ছাড়িয়ে গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ওয়ান্ডার বয়’। অধিনায়ক হিসেবে ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাবেক ক্যারিবীয়ান গ্রেটকে পেছনে ফেলেছেন সুপার কোহলি। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পর আউট হয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে। ততক্ষণে আরও একটি অর্জনে নাম লিখিয়েছেন তিনি। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ২৩৫ রান। ভারত অধিনায়ক হিসেবে যেটি ছিল সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। এবার নিজের রেকর্ডকেই আরও এগিয়ে নিলেন হালের এই রান-মেশিন। কোহলি এখন কেবল প্রতিপক্ষ বোলরই নন, ক্রিকেটদের জন্যও আতঙ্ক! মাঠে নামছেন, রান-সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরির ফুল ফোটাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এলোমেলো করে দিচ্ছেন রেকর্ড বইয়ের অনেক পরিসংখ্যান। রচনা করছেন একের পর এক নতুন ইতিহাস। দিল্লীতে ২৮৭ বলে ২৫ চারে সাজানো ২৪৩ রানের ইনিংসটিও ব্যতিক্রম নয়। ১৫৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে রবিবার প্রথম সেশনেই ভারতীয় অধিনায়ক করে ফেলেন দ্বিশতক। টেস্ট ক্যারিয়ারে কোহলির একটি ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি। অথচ দেড় বছর আগেও ছিল না একটিও! অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় ৪৯৯ দিনের মধ্যেই করে ফেললেন ৬টি ডাবল। টেস্ট ইতিহাসে যেটি সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে আধা ডজন ডাবলের নতুন রেকর্ড। ডন ব্র্যাডম্যানের প্রথম থেকে ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিতে সময় লেগেছিল ৫৮১ দিন। কোহলির প্রথম ৪১ টেস্টে ছিল না একটিও ডাবল। গত ২২ টেস্টে ৩৩ ইনিংসেই করে ফেললেন ৬টি। নাগপুরে আগের টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেই ছুঁয়েছিলেন অধিনায়ক হিসেবে ব্রায়ান লারার ৫ ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। এবার গেলেন ছাড়িয়ে। অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক এখন কেবলই কোহলি। পাশাপাশি ৬ ডাবল সেঞ্চুরিতে কোহলি স্পর্শ করলেন ভারতীয় রেকর্ডও। ৬টি করে ডাবল করেছিলেন বিরেন্দর শেবাগ ও শচিন টেন্ডুলকর। আগের টেস্টেই একমাত্র ইনিংসে নাগপুরে করেছিলেন ২১৩ রান। টেস্ট ইতিাহসে পর পর দুই ইনিসে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান কোহলি। ১৯২৮ ও ১৯৩৩ সালে প্রথম দুই দফায় এমন কীর্তি গড়েছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি ওয়ালি হ্যামন্ডÑ ১৯৩৪ সালে ব্র্যাডম্যান, ১৯৯৩ সালে বিনোদ কাম্বলি, ২০০৭ সালে কুমার সাঙ্গাকারা ও ২০১২ সালে মাইকেল ক্লার্ক। এ নিয়ে টানা তিন টেস্টেই সেঞ্চুরি ছাড়ানো ইনিংস খেললেন কোহলি। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। এই নিয়ে কোহলির সবশেষ তিনটি টেস্ট ইনিংস হলো ১০৪*, ২১৩, ও ২২৫*! ২০তম টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে লাগল ১০৫ ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে দ্রুত ২০টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন মাত্র ৪ জন ব্যাটসম্যান। তাঁরা হলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (৫৫), সুনীল গাভাস্কার (৯৩), ম্যাথু হেইডেন (৯৫) ও স্টিভেন স্মিথ (৯৯)। টেস্টে ৫০০০ রান পূর্ণ হয়েছে তাঁর, গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর শেবাগের পর ভারতীয় হিসেবে যা তৃতীয় দ্রুততম। কোহলি কি শচীনকে ছাড়িয়ে যাবেনÑ সেই প্রশ্নটা এখন আরও জোরালো। গত মাসেই ২৯তম জন্মদিন পালন করেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এত কম বয়সে তার ক্যারিয়ারে যত অর্জন তা সত্যিই বিস্ময়কর! ক্রিকেট লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকারের পর ‘রান মেশিন খেতাব পাওয়ার একমাত্র যোগ্য হিসেবে কোহলিকেই বেছে নেন অনেকে। চলতি বছরটি স্বপ্নের মত কেটেছে কোহলির। রেকর্ড গড়েছেন বেশ কিছু। সেই রেকর্ডগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক- ** বছরের শুরুতেই কোহলি ওয়ানডে ক্রিকেটে রান তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। পরে ব্যাটিং করে সর্বোচ্চ ১৪টি সেঞ্চুরির মালিক ক্রিকেট লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকার। ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বরের পাশে যে নামটি এখন শোভা পাচ্ছে তা হলো বিরাট কোহলি। ** এ বছরই মহেন্দ্র সিং ধোনির থেকে দলের নেতৃত্ব পেয়েছেন কোহলি। ভারতের তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই নেতৃত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটে অধিনায়ক বিসেবে সবচেয়ে দ্রুত ১ হাজার রানের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন কোহলি। ** ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯৬ রানের ইনিংস খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত ৮ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন কোহলি। কোহলি ১৭৫ ইনিংস খেলে ৮ হাজার রান করেন। তার আগে এবি ডিভিলিয়ার্সের দখলে ছিল এই রেকর্ড। প্রোটিয়া হার্ডহিটারের লেগেছিল ১৮২ ইনিংস। ** গত ২২ অক্টোবর দুর্দান্ত এক মাইলফলকে পৌঁছান কোহলি। ক্যারিয়ারের ২০০ তম ওয়ানডে খেলে ফেলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১২১ রানের ইনিংস খেলে নতুন রেকর্ড গড়েন ভারত অধিনায়ক। এর আগে কোন ক্রিকেটার ২০০তম ম্যাচে এত রান করতে পারেননি। ** নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই সিরিজেই শেষ ম্যাচে ১১৩ রানের আরেকটি ইনিংস খেলে সবচেয়ে দ্রুত ৯ হাজার রান সংগ্রহের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন কোহলি। ক্যারিয়ারের ৩২তম এই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তিনি সাবেক অজি অধিনায়কের সেঞ্চুরি সংখ্যাকে ছাপিয়ে যান। এখন তার সামনে কেবল শচীন টেন্ডুলকার। ** এ বছরই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান কোহলি। ২০৪ রানের ইনিংসটিসহ পরপর ৪ সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি সংগ্রহ করেন তিনি। সেটি এখন আরও ওপরে। ** কোহলির অধিনায়কত্বের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে শ্রীলঙ্কা সফরে। হালের খর্বশক্তি শ্রীলঙ্কাকে তিন ফরম্যাটেই হোয়াইটওয়াশ করে শক্তিশালী ভারত। এর আগে ভারতের কোন অধিনায়কের এমন রেকর্ড নেই। কোহলির কৃতিত্ব এখানেই। ২০০৮ সালে ওয়ানডে দিয়ে আগমন। বয়স ২৯। ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোহলি মোট সেঞ্চুরি ৫২টি! সেখানে টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে দুই যুগে শচীনের সেঞ্চুরি সংখ্যা ১০০। এভাবে চলতে থাকলে কোহলি যে আরও অনেক রেকর্ড গড়বেন, সেটি অনুমেয়।
×