ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোর পঞ্চম ব্যালন ডি’অর

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

রোনাল্ডোর পঞ্চম ব্যালন ডি’অর

আগে থেকেই অনুমিত ছিল। বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। গত বৃহস্পতিবার শেষ হয় সেই আনুষ্ঠানিকতাও। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী আনুষ্ঠানিকভাবেই বিজয়ী ঘোষণা করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। এর ফলে পঞ্চম ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বাদ পান রিয়াল মাদ্রিদের এই পর্তুগীজ সুপারস্টার। সেইসঙ্গে বার্সিলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির পঞ্চম ব্যালন ডি’অর জয়ের রেকর্ডেও ভাগ বসান সিআর সেভেন। গত মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। স্প্যানিশ লা লীগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এমনকি উয়েফা সুপার কাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল। শুধু তাই নয়, পর্তুগালকে প্রথমবারের মতো ইউরো জেতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন রোনাল্ডো। যে কারণে এবারও ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে ফেবারিটের তকমাটা মাখানো ছিল তার গায়ে। স্প্যানিশ গণমাধ্যম আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিল তা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকিও পঞ্চম সাফল্যে বিশেষ সংস্করণ হিসেবে সীমিতসংখ্যক বুট তৈরি করে! শেষ পর্যন্ত সেইসব ভবিষ্যদ্বাণীই বাস্তবতার মুখ দেখল। বার্সিলোনার লিওনেল মেসিকে টপকে ‘ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর’ বর্ষসেরা খেলোয়াড় সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা ফুটবলার। তৃতীয় হয়েছেন মেসিরই সাবেক ক্লাব সতীর্থ নেইমার। গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই নতুন ইতিহাস রচনা করে বর্তমানে প্যারিসের ক্লাব পিএসজিতে খেলছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বাদ পান রোনালদো। এর পরেই মেসির রাজত্ব। ২০০৯ থেকে শুরু করে টানা চারবার জেতেন মেসি। চার বছর পর ২০১৩ সালে মেসিকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে সেখানে বসেন রোনাল্ডো। পরের বছরও ফুটবলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এই পুরস্কারটা রিয়ালের পর্তুগিজ উইঙ্গারেরই ছিল। ২০১৫ সালে মেসি পঞ্চমবারের মতো জেতেন ব্যালন ডি’অর। তারপর টানা দুইবার এই পুরস্কার নিজের শোকেসে তুলেন রিয়াল মাদ্রিদের এই পর্তুগীজ। আরও একবার ব্যালন ডি’অর নিজের শোকেসে তুলেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নিজেকেই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে মন্তব্য করেছেন। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সিআর সেভেন সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমিই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। সেটা ভাল সময়ে কিংবা খারাপ সময়েও।’ ৩২ বছর বয়সী সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা ফুটবলার সেই সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি প্রত্যেকের পছন্দকেই সম্মান জানাই। কিন্তু কখনোই আমার চেয়ে ভাল কাউকে দেখিনি, এটা আমি সবসময়ই ভাবি। আমি যা পারি তা আর কোন ফুটবলারই পারে না। আমার চেয়ে পরিপূর্ণ কোন ফুটবলারও নেই। আমি দুই পা দিয়েই ভাল খেলি। খুব দ্রুত, শক্তিশালী ফুটবল খেলি। মাথা দিয়েও দুর্দান্ত খেলি। গোল করতে পারি। গোল করাতেও সহায়তা করতে পারি। অনেকেই আছেন যারা নেইমার এবং মেসিকে অধিক ভালবাসেন কিন্তু আমি তাদের বলব, আমার চেয়ে পরিপূর্ণ কোন ফুটবলার নেই।’ কিভাবে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন রোনাল্ডো? জানালেন সেই অজানা গল্পও। সিআর সেভেন বলেন, ‘আমি যতগুলো ব্যক্তিগত ট্রফি জিতেছি তা আর কারও শোকেসে নেই। এখানে শুধু যে, ব্যালন ডি’অরের কথাই বলছি তা নয়। আমি জিমে যে পরিশ্রম করি এটা শুধু তারই ফলাফল নয়, যদিওবা অনেকেই এমনটা মনে করে। সত্যি বলতে, এটা অনেক কিছুরই যোগফল। ফ্লয়েড মেওয়েদার এবং লেব্রন জেমসের মতো কিংবদন্তিরা কোন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই পর্যায়ে চলে আসেননি বরং এর পেছনে অনেক গল্প আছে। কোনো কিছুর শীর্ষে ওঠা এবং সেখানে অবস্থান করতে হলে অন্য অনেকের চেয়েই আপনাকে অধিকতর মেধাবী হতে হবে।’ রোনাল্ডোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। সিআর সেভেনের এই পর্যায়ে আসার পেছনে বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা! হ্যাঁ, রোনাল্ডো বলেন, ‘মেসিরও আগে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলাম আমি। তারপর আমাকে ছাড়িয়ে যায় সে। একটা সময় টানা চারবার এই পুরস্কার জেতে সে। আমি তার কোন কিছুই লুকাব না আজ। এতে আমি খুবই ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। আমি পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানগুলোতে যেতাম কিন্তু কখনোই জিততে পারতাম না। একটা সময়ে খুবই হতাশ হয়ে পড়ি এবং সেগুলোতে শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য যাওয়া থেকে বিরত হই।’ এরপর রোনাল্ডো বলেন, ‘ধীরে ধীরে নিজেকে বদলাতে শুরু করি। নিজেকে নিজেই বলি, জীবনের শুরু এবং শেষ আছে। কিন্তু ফুটবলে শেষটাকেই মনে রাখে মানুষ, সূচনাটাকে নয়। আমি ধৈর্য ধরি এবং তারপর আরও চারবার ব্যালন ডি’অর ট্রফিটাকে নিজের শোকেসে তুলি।’ রোনাল্ডো সেই সাক্ষাতকারে কথা বলেছেন পরের ব্যালন ডি’অর প্রসঙ্গেও। তবে আগামী বছরেই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর জেতাটাকে খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তিনি। তাহলে কে উঁচিয়ে ধরবেন স্বপ্নের এই ট্রফি? আগামী ফেব্রুয়ারিতেই তেত্রিশে পা রাখতে যাওয়া রোনাল্ডোর জন্য তা সত্যিই কঠিন। অন্তত চলতি মৌসুমে তার লা লীগার পারফরম্যান্স কিন্তু সেই কথা বলছে। কেননা, মৌসুমের প্রায় অর্ধেকটা সময় খেলে ফেললেও রোনাল্ডো যে গোল পেয়েছেন মাত্র দু’টি। যদিওবা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে উড়ছেন তিনি ঠিকই। রোনাল্ডোর মতো লিওনেল মেসির পায়েও যেন নেই আগের সেই ধার! যে কারণেই ফুটবলবোদ্ধাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে মেসি- রোনালদোর পর কার হাতে উঠবে এই ব্যালন ডি’অরের ‘সাদামাটা’ ট্রফিটা। কেউ কেউ আবার ইতোমধ্যেই নতুন তালিকা তৈরিতে সময় দিচ্ছেন। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কাকার তালিকায় মেসি-রোনাল্ডোর পর রয়েছে নেইমারের নাম! এই মৌসুমে যাকে ঘিরেই ব্যাপক আলোচনা। এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই প্লে-মেকার বলেন, ‘ফুটবলটা আসলে বিজ্ঞান নয় যে কারণেই ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা সঠিকভাবে বলাটা খুবই কঠিন। কিন্তু আমি বলতে পারি ক্রিশ্চিয়ানো এবং মেসির পর এই পুরস্কার জিতবে নেইমার।’ ২০০৭ সালে মিলানের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের নায়ক ছিলেন রিকার্ডো কাকা। তার বদলৌতেই সেবার ব্যালন, ডি’অর জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। কাকার পর থেকেই শুরু হয় মেসি-রোনাল্ডোর সা¤্রাজ্য! যে কারণেই নেইমারের ব্যালন ডি’অর জয়ের পেছনে কাকার কথাতেও যথেষ্ট যুক্তি মিলে। ন্যু ক্যাম্প ছাড়ার পর পিএসজির হয়ে নেইমারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সও কিন্তু দিচ্ছে সেই ইঙ্গিত! তাছাড়া রেকর্ড পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বার্সা ছাড়ার পেছনে নেইমারও কিন্তু জানিয়েছিলেন যে, মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসাটাও তার অন্যতম কারণ! এসবের উত্তর এখন কেবলই সময়ের হাতে। তবে নেইমার ছাড়াও পরবর্তী ব্যালন ডি’অর জয়ের তালিকায় রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপেও। পিএসজির এই ফরাসি স্ট্রাইকারও যে রীতিমতো উড়ছেন। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গড়েছেন ১০ গোলের মাইলফলক। নেইমার-এমবাপে ছাড়াও মেসি- রোনাল্ডোর উত্তরসূরি হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন ইডেন হ্যাজার্ড, রবার্ট লেভানডোস্কি, হ্যারি কেন, পাওলো দিবালা এবং ফিলিপে কোটিনহোর মতো প্রতিভাবান ফুটবলারের নাম। তবে বুড়ো বয়সে এডিনসন কাভানি যেভাবে খেলছেন, ব্যালন ডি’অর জিতে গেলেও অবাক করার কিছুই থাকবে না!
×