ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার কোন যোগ্যতা নেই ॥ অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক দায় এড়াচ্ছে ॥ আরসিবিসি

৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরি ॥ দায় এড়াতে চাইছে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরি ॥ দায় এড়াতে চাইছে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) যে অভিযোগ করেছে, সেটি নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, রিজাল ব্যাংককে বলিরপাঁঠা বানানোর কোন চেষ্টা হচ্ছে না, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার কোন যোগ্যতা নেই। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এর আগে গত শনিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা নিয়েছে। পৃথিবী থেকে রিজাল ব্যাংকটাকেই বিদায় করতে হবে। তবে এর পেছনে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। অর্থমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পর আরসিবিসি জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিজেদের গাফিলতির দায় এড়াতে তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসিকে ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে চাচ্ছে। ব্যাংকটি এও অভিযোগ করে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকই দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকটির এ ধরনের অভিযোগের খবর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। ওই প্রতিবেদনে আরসিবিসির হেড অব লিগ্যাল এ্যাফেয়ার্স জর্জ ডেলা কুয়েস্তার বরাতে বলা হয়, আইনত যেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব, তার সবই ফিলিপিন্সের সিনেট এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছে আরসিবিসি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্ভব সব কিছুই লুকিয়েছে। ব্যাংক খাতে হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে বড় এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার যে তদন্ত করেছিল, তার প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছিল ফিলিপিন্স সরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত তখন বলেছিলেন, ফিলিপিন্স চাইলেও ওই প্রতিবেদন তাদের দেয়া হবে না। আরসিবিসি আগেও বলেছিল, এ ঘটনায় তাদের কোন দায় নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতেও তারা একই সুরে কথা বলেছে। ওই ঘটনায় অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় আছে। স্বচ্ছতার বিষয়ে তাদের যে আপত্তি, তথ্য চেপে রাখার যে টেষ্টা, তা সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতির শিকার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। ওই টাকার মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার অর্থ পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতে কোন দায় নিতে রাজি নয় ব্যাংকটি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গত মাসে এক কনফারেন্স কলে রিজলের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিউ ইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যেখানে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফটের দুজন প্রতিনিধিও ছিলেন বলে খবর দেয় রয়টার্স। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ নিউ ইয়র্কে একটি দেওয়ানি মামলা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও সেখানে বাদী হবে।
×