ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে চেইন মাইগ্রেশন বা আত্মীয়তা সূত্রে ভিসা পাওয়া বন্ধ হবে

অভিবাসন আইন কঠোর করার চিন্তা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

অভিবাসন আইন কঠোর করার চিন্তা

নিউইয়র্কের ম্যানহাটান সাবওয়েতে গত সোমবার বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহ্ পাইপবোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিষয় সামনে চলে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কটি বিভাগের প্রতিকার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। ম্যানহাটানে আকায়েদের বোমা হামলার ও দেড় মাস আগে ৩১ অক্টোবর আরেকটি ভয়াবহ ট্রাক হামলা হয়েছিল। এতে ঘটনাস্থলেই আট সাইকেল আরোহী ও পথচারী নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়। আকায়েদের ঘটনায় কেউ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত না হলেও এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না কিংবা সে অন্য কোন স্থানে এ ধরনের বোমা পেতে রেখেছে কি না তা নিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী খোঁজ খবর নিচ্ছে। আকায়েদ উল্লাহ্কে স্থানীয় বেলেভ্যু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে একাই বোমা বানিয়েছে এবং এককভাবে এই হামলার জন্য দায়ী, তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত নয়। কেন সে এ ধরনের কাজ করল-এর জবাবে আকায়েদ জানায়, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জর্জ বুশ, ওবামাসহ ট্রাম্পের সময় পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মার্কিন নীতির জন্য দেশটির প্রতি ক্ষুব্ধ থাকায় সে এ কাজ করেছে। এ ছাড়া ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রচার প্রপাগান্ডা তাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। এফবিআই ও নিউইয়র্ক পুলিশ আকায়েদ সম্পর্কে আরও খোঁজ খবর নিচ্ছে এবং মার্কিন ফেডারেল কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে বলে জানা গেছে। ২৭ বছর বয়স্ক আকায়েদ উল্লাহ্র বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া কোন এক আত্মীয়ের সূত্র ধরে। তার পিতা-মাতাসহ ২০১১ সালে অভিবাসী ভিসা নিয়ে সে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। বাংলাদেশের পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে তার কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। ব্রুকলিনে তার প্রতিবেশীরাও তাকে শান্তিপ্রিয় ধীরস্থির প্রকৃতির নিরীহ মানুষ হিসেবেই চিনে। কিন্তু তার এই সহিংসতার জন্য সে নিজেই শুধু বিপদে পড়ল না, তার এই আচরণ দেশের জন্যও বিব্রতকর পদক্ষেপ গ্রহণে ট্রাম্প প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এর আগে ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নীতি বাস্তবায়িত হলে চেইন মাইগ্রেশন বা আত্মীয়তার সূত্র ধরে মার্কিন ভিসা প্রাপ্তির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৩১ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহ্র জঙ্গী তৎপরতার সাদৃশ্য খুঁজে বলেন, এর মাধ্যমে আবার প্রমাণ হলো যে, মার্কিন জনগণের সুরক্ষার জন্য কংগ্রেসের জরুরীভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করা উচিত, যাতে অভিবাসী আইন আরও কঠোর করা যায়। তিনি বলেন, যে সব লোক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের জন্য মৃত্যুদ-সহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা উচিত। ট্রাম্প ছাড়াও এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা অভিবাসন প্রশ্নে অভিন্ন মত প্রকাশ করেন। নিউইয়র্কের মেয়র বিল দ্য ব্লাসিও বলেন, জনাকীর্ণ স্থানে এ ধরনের হামলা খুবই ভীতিকর বিষয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম তবে ভাগ্য ভাল যে, হামলাকারী তার উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম হয়নি। নিউইয়র্ক সিটি গবর্নর এন্ড্রু কুমো বলেছেন, হামলাকারীর অস্ত্র কার্যকরভাবে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা তেমন হয়নি। তবে যে কেউ ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ ধরনের বিস্ফোরক বানাতে সক্ষম হতে পারে। নিউইয়র্ক পুলিশ দফতরের সন্ত্রাস দমন প্রধান জন মিলার বলেন, বর্তমান জীবনের বাস্তবতা হচ্ছে আপনি নিউইয়র্ক, প্যারিস বা লন্ডন যেখানেই থাকেন না কেন, যে কোন স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। মিলার এ হামলার ঘটনা সম্পর্কে কারও কিছু জানা থাকলে তা পুলিশ বিভাগকে জানানোর আহ্বান জানান। আকায়েদ উল্লাহ্ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বোমায় তার তলপেটসহ শরীরে অন্যান্য স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে বিরত রয়েছে। -নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি
×