ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্ঘশক্তির আবদার

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

সঙ্ঘশক্তির আবদার

সিএনজি অটোরিক্সাচালকদের সম্পর্কে যাত্রীসমাজ তথা ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। যাত্রী যেখানেই যেতে চাইবে অটোরিক্সার চালক সেখানে যেতে আইনত বাধ্য- এই নিয়মটি কখনই কার্যকর হয়নি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে যাত্রীর ইচ্ছায় নয়, সিএনজি অটোরিক্সা চলে চালকের ইচ্ছায়। আপনি যাবেন দক্ষিণে, তো উনি সোজা না করে দেবেন। উত্তরে যেতে তার ভাল লাগে, কিংবা সুবিধা। তাই তিনি উত্তরের দিকে যাত্রাকারীকে গাড়িতে তুলবেন। এটা তো চলতে পারে না। আপনি যে অভিযোগ করবেন চালকেরা সে ব্যাপারে জানে বলেই আগেভাগে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। খেয়াল করলে দেখবেন বেশিরভাগ অটোরিক্সার গায়ে সাদা রঙে লেখা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলো ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। নয়ত কায়দা করে তার ওপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক স্টিকার লাগানো হয়েছে। অথচ সড়ক পরিবহন বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, চালকেরা যাত্রীর পছন্দমতো গন্তব্যে যেতে রাজি না হলে এবং মিটারে না চললে অটোরিক্সার গায়ে থাকা নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। ঢাকা মহানগরীতে সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। এর মধ্যে বৈধ অটোরিকশা ১২ হাজার ৮৩০টি। সরকার গতবছর ১ নবেম্বর থেকে মিটার রিডিংয়ে ভাড়া নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। সিএনজি অটোরিকশার মালিকদের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৯০০ টাকা। সেখানে তারা নিচ্ছেন ১৪ থেকে ১৬শ’ টাকা। আইন না মানার সংস্কৃতি থেকে কিছুতেই রেহাই মিলছে না। ২০০২ সালে সিএনজি অটোরিকশা চালুর পর এবার নিয়ে পাঁচবার ভাড়া বাড়ানো হলো। তবে অটোরিকশা চালকরা গত এক যুগে কখনোই নির্ধারিত ভাড়ায় সন্তুষ্ট থাকেনি। যাত্রীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিছুতেই বন্ধ হয়নি। যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লেও তা দেখার যেন কেউ নেই। ডিজিটাল যুগে পরিবহন সেবা কেন পিছিয়ে থাকবে। সেখানেও নতুন সুবিধা ও আধুনিকতা যুক্ত হোক এটাই প্রত্যাশা। সরকার অনুমোদিত এ্যাপসভিত্তিক যাত্রীসেবা চালু হচ্ছে ‘হ্যালো‘ নামে। মোবাইল ফোনে অ্যাপ ব্যবহার করে ডাকা যাবে গাড়ি। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে এ্যাপসভিত্তিক ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ নগরীর পরিবহন সেবায় যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠেছে। ফলে সিএনজি অটোরিক্সার ওপর বিরক্ত মানুষের এখন নির্ভরতাও হ্রাস পেয়েছে। এ কারণেই সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা উবার, পাঠাওয়ের মতো এ্যাপসনির্ভর সেবা বন্ধসহ আট দফা দাবিতে রবিবার বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের নামে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের হাস্যকর আবদারের মধ্যে রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে ব্যবহারিক পরীক্ষা বন্ধ করা, অননুমোদিত পার্কিংয়ের জন্য মামলা না করা, নিবন্ধিত অটোরিক্সাচালকদের ঢাকা জেলার সব জায়গায় চলাচলের অনুমতি দেয়া। এর সবই যে আইন না মানার পাঁয়তারা সে কথা বলাই বাহুল্য। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ারই কথা। দাবি আদায় না হলে তারা প্রথমে দুদিনের ধর্মঘট পালন করার কথা বলেছে। এর পরেও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে লাগাতার ধর্মঘট শুরু করবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। আমরা মনে করি, আইন মেনে অটোরিক্সা চালনায় চালকদের বাধ্য করার জন্য দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যাত্রীস্বার্থে চালকদের বেআইনী কাজকারবার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। যাত্রী সাধারণের এটাই প্রত্যাশা।
×