ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পর্বত দিবসে আলোচনা

মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে পাহাড়ের জীববৈচিত্র

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে পাহাড়ের জীববৈচিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব শুধু সিটি কর্পোরেশনেরই থাকে না, নগরবাসীরও থাকে। প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ জায়গায় পরিচ্ছন্ন থাকলে প্রকৃতি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পাহাড় ধসে যাচ্ছে। পাহাড়ে চাষাবাদ এবং বন উজাড়ের মধ্য দিয়ে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য। অথচ পাহাড়ের সৌন্দর্য আহরণ না করলে, সৌন্দর্যের ইতিহাস রচিত হবে না। আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘পার্বত্য অঞ্চলের ঝুঁকি: জলবায়ু, ক্ষুধা, অভিবাসন’। পর্বতের টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব তুলে ধরেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিরহাট থেকে এক শোভাযাত্রা বের হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এতে বাংলাদেশের পর্বতারোহীর পাশাপাশি ঢাবির ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্য ও বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন নেপালী দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অব মিশন ধন বাহাদুর ওলী। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এখন উন্নয়নশীল দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নের পাশাপাশি কীভাবে দেশটাকে স্বাস্থ্যসম্মত দেশ হিসেবে গড়া যায়, সে বিষয়ে সরকারসহ সকলকে সচেতন হতে হবে। রাজধানীতে অনেকগুলো উড়াল সেতু হয়েছে এছাড়াও সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং হরহামেশাই তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের শহরের পরিবেশ কি সুন্দর হচ্ছে? কারণ নগরবাসীর মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার মানসিকতা তৈরি হয়নি। এজন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা ও অন্যকে পরিবেশ সংরক্ষণে উৎসাহ দেয়ার মানসিকতা। তিনি আরও বলেন, বিভাজনের পৃথিবী তৈরি হয়েছে বলেই জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। এভারেস্ট আরোহী নিশাত মজুমদার বলেন, আমরা পাহাড় ভালবাসি। আর পাহাড়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই বারবার ছুটে যাই। হিমালয়ের সাদা পর্বত এখন কালোতে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি আরও বলেন, পর্বতে যারা থাকে, তারা পর্বতের ক্ষতি করে না। কিন্তু যারা পর্বতের বাইরে থাকে, তারাই মূলত পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে পর্বতের ক্ষতি করছে। তিনি আরও বলেন, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, বন-জঙ্গল ও গাছ উজাড়ের কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় তিনি সকলকে নিজের পরিবেশটাকে পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান। আয়োজক ক্লাবের সভাপতি পর্বতারোহী এম এ মুহিত বলেন, ‘২০০৫ সাল থেকে আমরা দিবসটি উদযাপন করে আসছি। এবার আমাদের সঙ্গে ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাসও অংশ নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রকৃতি উপভোগ করুন, কিন্তু প্রকৃতির ক্ষতি করে নয়। আমরা সচেতনভাবেই প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ক্ষতি করে চলেছি। পাহাড়-পর্বতে গিয়েও আমরা ময়লা আবর্জনা ফেলছি। ফলে দিনে দিনে প্রকৃতির বিপর্যয় ঘটছে। অনুষ্ঠান শেষে বেলুন উড়িয়ে ‘পর্বত দিবস’ উদ্বোধন ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। একই সঙ্গে নেপালের দু’জন পর্বতারোহী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা পরিষ্কার করে জনসচেতনতা তৈরির প্রয়াস ঘটান।
×