ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের চোখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের চোখে বাংলাদেশ

পালাবদলের পরিক্রমায় বিজয়ের আমেজে আসছে আবারও বিজয় দিবস। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। তরুণরা উদ্ভাবন করছেন নিত্যনতুন বিষয়, গড়ে তুলছেন স্বপ্নের সোনার বাংলা। আজকের ডিপ্রজন্মে তরুণ প্রজন্মের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলো। তারা সকলেই বলেছেন দেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্নের কথা, জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধকে তারা কিভাবে দেখেন। সম্পাদনা করেছেন বেনজির আবরার জুবায়ের হোসেন প্রতিষ্ঠাতা- ভ্যাট চেকার, টপটিউব, ক্রিকভয়েজ মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, বুকের তাজা রক্তে পিচঢালা কালো পথকে লাল করেছিল সেই তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে। এ দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো আইসিটি। ডিজিটাল সেবা তৈরি এবং বিশ্বব্যাপী তা প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে হবে। দুর্নীতি রোধেও প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে এই তরুনদের। বিজয় অর্জিত হয়েছে ’৭১-এ কিন্তু অর্থনৈতিক বিজয় এর যুদ্ধ এখনও চলছে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, কার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকব আমরা? দেশটা তো আমাদেই... ইসরাত নাহের ইরিনা বিজয়ী, বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ্যাওয়ার্ড অপার সম্ভাবনার এই বাংলাদেশে আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার উৎস মুক্তিযুদ্ধ। ভালবাসার অনেক বহির্প্রকাশের মধ্যে দেশের এবং মাতৃভাষা জন্য এমন আত্মত্যাগ আমাদের একটি কথাই বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় ‘আমরাই পারি বাংলাদেশকে একটি সুখী রাজ্যে পরিণত করতে, কারণ আমরাই তো বাংলাদেশ।’ চাওয়া-পাওয়া অথবা উন্নতি-অনুন্নতির হিসাবকে একপাশে রেখে, তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে জাতি-বর্ণ-ধর্ম- সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং সবাই তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো করেই মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করতে শিখবে। উপমা আহমেদ প্রেসিডেন্ট, ইভোলিউশন ৩৬০ UN Women Champion মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ মাতৃভূমি কে রক্ষা করতে নারী-পুরুষ যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন, ঠিক তেমনভাবে দেশে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা হোক। বন্ধ হোক নারী নির্যাতন ও সুরক্ষিত হোক নারীর পথচলা। তরুণ হিসেবে দেশকে নিয়ে এটাই আমার স্বপ্ন ও চাওয়া। মহিউদ্দিন মধু সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন। মুক্তিযুদ্ধ মানে একটি দুঃখ, আনন্দ, আবেগ, অর্জন আর ত্যাগের গল্প। যে গল্প পাই একাত্তরের ডায়েরিতে, কেঁদে উঠি স্মৃতিকথায় ভেসে। যে ইতিহাসের পুনর্পাঠ আমাকে দেয় অর্জনের আনন্দ। বিজয় না এলে এই আজকের তরুণ আমি, হয়তো শৈশব-কৈশোরই খুঁজে পেতাম না। যে দিবসটির জন্য আজ কথা বলতে পারি, সত্যের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারি, সেই প্রাপ্তিটুকুই তো আবেগ। আর এই গল্পের রোমাঞ্চকর বর্ণনা যখন বাবার মুখে শুনি, তখন আফসোস হয় তার সারথী হতে না পারার। আমার কাছে গর্ব, স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ। তরুণদের গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যে ধাবমান আমার এই স্বাধীন দেশ। একটি দেশ বাঁচে সেই তরুণদের স্বপ্নে। আর আমার স্বপ্নে গড়তে চাই যুক্তিবাদী মানুষ। কাজ করছি যুক্তি-তর্কের সঙ্গে পথচলা সারা বাংলার ‘বিতর্ক’ সমাজ নিয়ে। এই বিতার্কিকদের মাঝে সত্য, সুন্দর, সাবলীল, গণবিবেচিত ও মূল্যবান এমন সংস্কৃতি বুনন করতে চাই। যা সংস্কার করবে মানবজীবনের চিন্তা-চেতনা, বিশ্বাস-প্রত্যয় ও আবেগানুভূতি। হতে চাই শত-সহ¯্র্র প্রতিভা বিকাশের প্রসূতি। সফলতরা স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে হবো বিশ্বের বুকে অজয়। ছড়িয়ে দিতে চাই হেরার বিচ্ছুরিত জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটা। হয়ে উঠব মেধাবীদের সংগ্রাহক, সংগঠক, উন্নত চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক। পথহারা ক্লান্ত পথিকের পথের দিশারী। আর তখন প্রতিটি মানুষের মাঝে যুক্তির বোধ জেগে থাকবে, সুন্দর রবে সোনার বাংলাদেশ। সজিব খান জেনারেল সেক্রেটারি, ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ এক ইতিহাস, ভালবাসা, গর্ব, সর্বোপরি একজন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে নিজ আত্মপরিচয় এর নাম। ভাবতেই আনন্দে শিহরিত হয়ে উঠি, এই আমার মতো তরুণেরাই আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে ধর্ম, বর্ণ, জাত, গোষ্ঠী, ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। তাদের আত্মত্যাগ ছিল বলেই আজ স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি । যখনই কোন মুক্তিযোদ্ধার মুখে সেই গৌরবমাখা দিনগুলোর গল্প শুনি, তখনই মনে হয়, ইশ আমিও যদি সেই সাহসী, দৃঢ়চেতা, মাতৃভূমির প্রেমে অটল কাফেলার সঙ্গী হতে পারতাম! পরক্ষণেই যখন বাস্তবতায় ফিরে আসি তখন অন্তর বলে উঠে, আমি তো চাইলেই তাদের রেখে যাওয়া সোনার বাংলার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। একজন তরুণ হিসেবে নিজ জায়গা থেকে দেশকে কিছু দেয়ার মাধ্যমে, এর উন্নতি এবং সার্বিক কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে। আমি একজন আইসিটি সেক্টর কর্মী হিসেবে চাই, বাংলাদেশে এই সেক্টরের মাধ্যমে যে বিশাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং উন্নতি অর্জন করার বিপুল সম্ভাবনার দ্বারা অপেক্ষমাণ আমি যেন সেই অগ্রযাত্রার পথিক হয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রেখে যাওয়া স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারি। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে যেন বিশ্বের মুখে আমরা সগৌরবে পরিচিত হতে পারি, যেখানে থাকবে না কোন বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা। সুহা তাবিল ভাইস প্রেসিডেন্ট, বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ-তরুণ সমাজের জন্য এক অপার অনুপ্রেরণার নাম। বহু কষ্টে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের শেখায় কিভাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে রণসজ্জায় সজ্জিত শত্রু পক্ষের থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হয়। তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে তরুণ প্রজন্ম দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নতির শিখরে, তুলে ধরবে দেশকে বিশ্ব দরবারে। সাহিদা ফাতেমা পুতুল ট্রেজারার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু“ হয় এবং সেই বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম ছিল বহুবিধ ঘটনা, বিরূপ পরিস্থিতি, অসম আর্থিক বণ্টন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বঞ্চনাসহ গুরুতর বিষয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতির চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ। নিজের অধিকারের জন্য গড়ে ওঠা এই অভ্যুত্থানে সশস্ত্রভাবে অংশ নেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী নির্বিশেষে সব-শ্রেণীর মানুষ। এই স্বাধীনতা যখন আমরা অর্জন করার জন্য নেমেছিলাম তখন এই দেশের জন্য আরও কিছু স্বপ্ন সেই যোদ্ধারা দেখেছিলেন! তারা চেয়েছিলেন এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে স্বাধীন চিন্তার জায়গা থাকবে ! ধর্ম, বণ , জাতি নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষ হবে শুধু বাঙালী! সবাই সবাইকে ভালবাসবে, সম্মান করবে! নিরাপদ এবং মুক্তচিন্তা পোষণকারী একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি আমি! যেই উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা চেয়েছি আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখি! জিহাদ আমিন মুখাভিনয় শিল্পী, সমন্বয়ক- স্ট্রে বার্ড মুক্তিযুদ্ধই আমাদের প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে কিভাবে বাঙালী বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে এক হয়েছে এবং বুকে ধারণ করা একটা বড় স্বপ্নের কিভাবে বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। আমিও তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহত্ত্বের গল্প শুনে এবং পড়ে এই একতার শিক্ষা পেয়েছি। আমাদের এই প্রিয় স্বদেশকে তখনই উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারব যখন আবার আমরা জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে একই বিশ্বাসের পতাকাতলে আসতে পারব।
×