ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ আজ ১২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস। সম্মিলিত মুক্তি বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধে নরসিংদী শহরসহ পুরো জেলা হানাদার মুক্ত হয়েছিল এ দিনে। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস নরসিংদী জেলা বিভিন্ন স্থানে খ- যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ সব খন্ড- যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হয়েছিল ১১৬ বীর সন্তান। তন্মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ২৭, পলাশে ১১, শিবপুরে ১৩, মনোহরদীতে ১২, বেলাবতে ১৬ ও রায়পুরায় উপজেলায় ৩৭ জন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াবহ রাতের পর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানীদের বিমান হামলায় নরসিংদী শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এ হামলায় শহীদ হন আব্দুল হক, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, চাঁদ মোহন দাস, জগদীস দাস, নির্মল দাসসহ নাম না জানা আরও অনেকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নরসিংদীর পাঁচদোনা ব্রিজে বিভিন্ন যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পাকসেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা নিরীহ মানুষদের হত্যা করে ব্রিজের নিকট গণকবর দিয়েছে। এ স্থানটি বধ্যভূমি হিসেবে সরকার কর্তৃক চিহ্নিত করা হয়েছে এবং জেলার সবগুলো বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে নরসিংদীতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১২ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় নরসিংদী জেলা। এদিনে বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা উঠেছিল জেলার সর্বত্র। মুক্তির আনন্দে উচ্ছসিত মুক্তিযোদ্ধা, জনতার ঢল নামে শহরে। আদমদিঘী নিজস্ব সংবাদদাতা সান্তাহার থেকে জানান, আজ ১২ ডিসেম্বর বগুড়ার আদমদিঘী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী হানাদারের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বগুড়ার আদমদিঘী থানা সদরকে হানাদার মুক্ত করেন। তৎসময়ে উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় ছিল পাকি হানাদারদের দখলে। ছিল তাদের শক্ত ঘাঁটি। সেই ঘাঁটি থেকে পাকি হানাদাররা এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৭১ সালে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে প্রতিটি ঘরে ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা, নারী ধর্ষণ, করেছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী। তাদের অন্যায় অত্যাচারে বাঙালীর জীবনে নেমে এসেছিল কালো মেঘ। দেশকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধারা। জীবনের পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে শক্রর ওপর। শুরু করে গেরিলা হামলা। ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যারাত শুরু থেকে হানাদার বাহিনী ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কোন কূলকিনারা না পেয়ে ১২ ডিসেম্বর ভোর থেকে আদমদিঘী সদর ছেড়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে পালিয়ে যায় তাদের ঘাঁটি সান্তাহার জংশনে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ১২ ডিসেম্বর দুপুরের মধ্যে শক্রমুক্ত করে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে আদমদিঘী সদরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন। গোবিন্দগঞ্জ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, আজ ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাক হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালালে সারাদেশের ন্যায় গোবিন্দগঞ্জেও স্বাধীনতাকামী শত শত ছাত্র-জনতা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং ২৭ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী ব্রিজ ভাঙ্গতে শুরু করে তারা। এ সময় রংপুর থেকে আসা পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন মান্নান, বাবলু, বাবুসহ ৫ জন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর বিকেলে গাইবান্ধা থেকে নাকাইহাট, বোনারপাড়া থেকে মহিমাগঞ্জ এবং হিলি থেকে আসা মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে প্রায় ২০০ পাকসেনা নিহত হয়। অন্যরা ইউনিফর্ম খুলে লুঙ্গি, গেঞ্জি পড়ে সাধারণ মানুষের বেশে পালিয়ে যায়। পরদিন ১২ ডিসেম্বর সকালে জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ স্থানীয় হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
×