ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বাচ্চাদের আমার মতো করে মানুষ করো’ শহীদুল্লা কায়সারের শেষ কথা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

‘বাচ্চাদের আমার মতো করে মানুষ করো’ শহীদুল্লা কায়সারের শেষ কথা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শহীদুল্লা কায়সার একটি ভয়ঙ্কর কাজ করেন। সেদিন রাতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তা অবরোধ করে। ব্যস্ততায় তিনি বাসায় ফেরার কথা ভুলে যান। চারদিক ছিল অন্ধকার। পুরোপুরি ক্র্যাকডাউন। শহরজুড়ে বিক্ষুব্ধ মানুষের চিৎকার। জগন্নাথ কলেজে গোলাগুলির শব্দ। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে সিদ্দিকবাজারে। ভয়ার্ত রাস্তাঘাট। পাকবাহিনীর অত্যাচারে আহত মানুষের কান্নাকাটি। আর্তনাদ। আগুন। গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। শহীদ মিনার ভাঙ্গা হচ্ছিল। সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল ঢাকা শহরজুড়ে। অন্যদিকে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল। সাধারণ মানুষের দাবি ছিল একটাই। তারা মুক্তি চান। এই পরিস্থিতিতে বাসায় নেই তিনি। তাঁর জন্য অপেক্ষা। স্বজনরা সবাই উদ্বিগ্ন। কান্নাকাটি। পরিবারের অনেকেই ভেবেছিলেন হয়ত আর ফিরতে পারবেন না শহীদুল্লা কায়সার। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর তা-বে পিছপা হননি তিনি। সবাইকে ফেলে আসেননি। বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ দিয়ে রাত আড়াইটায় বাসায় ফিরেন। আন্দোলন-সংগ্রাম আর জীবন ঝুঁকির মধ্যে মোটেও বিচলিত ছিলেন না তিনি। অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলেন। বাসায় ফিরে বলেন, সবাইকে নিচে বিছানা করে ঘুমাতে। তাকে দেখে ও কথা শুনে সবাই অবাক! ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও দেশীয় দোসররা বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে বরেণ্য ব্যক্তিদের ধরে নেয় তারা। তাদের একজন শহীদুল্লা কায়সার। পরিবারের পক্ষ থেকে শত চেষ্টায়ও তাঁর লাশের খোঁজ মেলেনি। একজন আপোসহীন মানুষ ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। সব সময় অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ন্যায়ের পক্ষে অবিচল ছিলেন এই সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। কখনও মৃত্যুকে ভয় করতেন না। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সংগ্রামী। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ছিল তাঁর আদর্শ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সকল আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক এই মানুষটি শ্রমিক-জনতার দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই বছরের তিন জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৫৫ সালে ফের গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনে আবারও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাকা-ের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা নির্ধারণ করেছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বৃদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবীসহ ১৬ জন শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। মৃত্যু তাকে ফিরিয়ে এনেছিল ॥ ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে শহীদুল্লা কায়সার বাসা থেকে চলে যান। পারিবারিক চাপের মুখেই এমন সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়েছিল। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর কারফিউ ওঠার আগে আবারও বাসায় ফিরে আসেন তিনি। সবাই অবাক। অজুহাত বই রেখে যাওয়ার। আসলেই তিনি এই মুহূর্তে যেতে চাচ্ছিলেন না। স্ত্রীকে বললেন, ১৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ পরের দিন যাব তোমাকে আর আম্মাকে নিয়ে। পরিবারের সদস্যরা জানালেন, ১৪ তারিখে আমরা বাড়ি থেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সেদিন কারফিউ ছিল। ঠিক সন্ধ্যার আগে বাসার সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। দেখলেন দূর থেকে দুজন লোক বাসার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে কি যেন বলছে। মনে খটকা লাগল। দৌড়ে এসে শহীদুল্লা কায়সারকে একথা জানিয়েছিলেন স্ত্রী পান্না কায়সার। তাকে বাসা ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। যাননি। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার প্রসঙ্গে পান্না কায়সার বলেন, আমার স্বামী হত্যাকারী জামায়াত নেতা খালেক মজুমদারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেই শনাক্ত করেছিলাম। বিচারককে বলেছিলাম, খুনের বদলে খুন। আইনে হত্যাকারীর বিচার হবে না। স্বামীর হত্যাকারীকে নিজের হাতে খুন করতে চেয়েছিলাম সেদিন। শুধু বিশেষ দিন বা ঘটনা বলে কথা নয়। শহীদ শহীদুল্লা কায়সারকে প্রতিনিয়তই মনে পড়ে। তাঁর স্মৃতি আমার মনে শক্তি সঞ্চার করে। সামনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। একজন মুক্ত মনের মানুষ ॥ পান্না কায়সার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর ও ২৫ মার্চ রাতের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত। শহীদুল্লা কায়সার ছিল প্রচণ্ড সাহসী। বিয়ের পর তার অনেক সাহসিকতাপূর্ণ কাজের সঙ্গে আমি পরিচিত। অসাধারণ লোক ছিল সে। প্রতিদিনই তাকে নতুনভাবে চেনার মতো কাজ করত। সমাজের প্রতি কর্তব্য, মানুষের প্রতি মমতা, প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাকে মুগ্ধ করত। একজন মুক্ত মনের মানুষ তিনি। বিয়ের আগে তার লেখাও পড়তাম। বলতে গেলে একজন ভক্ত ছিলাম। কিন্তু সে কমিউনিস্ট পার্টি করত বলেই মা বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। মায়ের নির্দেশ অমান্য করেই একজন সৎ মানুষকে বিয়ে করি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাত। কায়েতটুলীর বাড়িতে ছিলাম আমরা। সেদিনও ছিল সবকিছু অন্ধকার। বাড়িতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আত্মীয়স্বজন আশ্রয় নিয়েছিল। সন্ধ্যায় শহীদুল্লা কায়সার ও চাচা শ্বশুর শাহরিয়ার কবিরের বাবা মিলে সোফায় বসে ভয়েস অব আমেরিকা শুনছিলেন। তখন আমি শমীকে দুধ খাওয়াচ্ছিলাম। এমন সময় দরজায় ঠক-ঠক শব্দ। আমার দেবর এসে শহীদুল্লা কায়সারকে বলল, বড়দা দরজায় শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাইরে থেকে দরজা খোলার জন্য বলছে। আমি দরজা খুলতে না করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। শহীদুল্লা কায়সার তখন বলল খুলে দাও। মুক্তিযোদ্ধারা এসেছে। সব অন্ধকার তখন। মোমবাতি নিয়েই ঘরে ও বারান্দায় হাঁটছে। ইতোমধ্যে দরজা খোলা গেছে। আমরা নিচে থেকে কোন শব্দই শুনতে পাচ্ছিলাম না। শহীদুল্লা কায়সার বলছিল কি ব্যাপার কে এলো? ও ভাবল কোন আত্মীয় হয়ত এসেছে। এ কথা বলতে বলতেই নিচতলা থেকে ওরা উপরের দিকে উঠছে। সিঁড়িতে আবার ঠক ঠক শব্দ। উপরে উঠতেই আমাদের বসার ঘর। মোমবাতি জ্বলছিল। এখানে শহীদুল্লা কায়সার কে ॥ ঘরে ঢুকেই ঘাতকরা জিজ্ঞেস করল, এখানে শহীদুল্লা কায়সার কে? ওরা শহীদুল্লা কায়সারকে চিনত না। ঘাতকদের সবাই ছিল মুখোশধারী। তখন সে নিজেই নিজের পরিচয় দিল। আমি শহীদুল্লা কায়সার। নিজের পরিচয় দেয়ার পরই তার হাত ধরে হেঁচকা একটা টান দিল। টান দিতেই দুধের শিশু শমীকে আমি ছুড়ে ফেলে দিলাম। দুধের বোতলটাও ছিটকে পড়ে যায়। তখন শমীর বয়স দেড় বছরের কম। ঘাতকরা শহীদুল্লা কায়সারকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি পেছন পেছন আরেকটি হাত ধরে টানছিলাম। কিন্তু তাকে টেনে ধরে রাখতে পারছিলাম না। ওরা যখন বারান্দায় ওকে টান দিয়ে নিয়ে গেল, তখন আমি বারান্দার সুইচটা অন করে দিলাম। বারান্দাটা আলো হয়ে গেল। পাশের রুমেই আমার ননদ ছিল। ও রুম থেকে অনেক কষ্টে বারান্দায় এসে দুঃসাহসী কাজ করে ফেলে। মুখোশ পরা এক ঘাতকের মুখের কাপড় টান দিয়ে খুলে ফেলে সে। আলোতে আমরা মুখোশ খোলা ঘাতককে চিনে ফেললাম। ঘাতকরা সময় নষ্ট না করে শহীদুল্লা কায়সারকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। তখন ওর হাতে আমার হাত ধরা ছিল। টানতে টানতে একপর্যায়ে ওর হাত থেকে আমার হাতটা ছুটে যায়। চলে যাওয়ার সময় একটা কথাই বলল সে ‘ভাল থেকো, সন্তানদের আমার মতো করে মানুষ কর’। বিড়বিড় করে আর কি বলছিল বুঝতে পারিনি। ওরা কিছু বলতেও দিচ্ছিল না। পান্না কায়সার বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমার দেবর বলে শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে জেলে যাবে। তখন আমার ধারণা হলো তাকে আগেও অনেকবার জেলে নেয়া হয়েছে। এবারও হয়ত জেলে আটকে রেখেছে। আমার দেবর ও আমি রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি। রায়েরবাজারে গিয়ে রিক্সা থামল। আমি এর আগে সেখানে যাইনি। সেখানে দেখা গেল অসংখ্য মানুষ। দেবরকে বললাম, তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ? যেখানে সবাই স্বজন হারানোর শোকে কাঁদছে। যেখানে হাজারো মানুষের আর্তনাদ-আহাজারি-শোকের মাতম। কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। আমি শক্ত হলাম। আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখি অসংখ্য লাশ। বলতে গেলে লাশের মিছিল। স্বামীর লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করি। নিজেই একটা একটা করে লাশ উল্টে-উল্টে দেখি। কতগুলো লাশ এভাবে দেখব আমি! শহীদুল্লা কায়সারের লাশ পেলাম না। কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসি। শিক্ষা-কর্ম ও রাজনীতি ॥ শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মাজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। তাঁর বাবার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ এবং মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। ‘সরকারী মডেল স্কুলে’ এবং পরে ‘মাদরাসা-ই-আলিয়া’র অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেছে, ১৯৪২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন ‘প্রেসিডেন্সি কলেজে’। ১৯৪৬ সালে তিনি এখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন এবং অর্থনীতিতে এমএ পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই সঙ্গে তিনি ‘রিপন কলেজে’ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর বাবা ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ ভর্তি হন। তবে এ ডিগ্রী লাভ করার আগেই পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটান। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য তাকে তাঁর বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি। শহীদুল্লা কায়সার ১৯৫৬ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় যোগদান করেন। এভাবেই তিনি যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫৮ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আটক রাখা হয়। মুক্তি লাভ করেই তিনি ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকা থেকে সাংবাদিক জীবনের হাতেখড়ি হলেও তাঁর সাংবাদিক জীবনের সমস্ত কৃতিত্ব ও পরিচিতি দৈনিক সংবাদকে ঘিরেই। শহীদুল্লা কায়সার সমসাময়িক রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ‘দেশপ্রেমিক’ ছদ্মনামে রাজনৈতিক পরিক্রমা ও ‘বিশ্বকর্মা’ ছদ্মনামে বিচিত্রা কথা শীর্ষক উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। আমৃত্যু তিনি কমিউনিস্ট পরিচয় বহন করেছেন। তাঁর লেখা আলোচিত উপন্যাস ‘সারেং বউ’। নীতির প্রশ্নের কখনও আপোস করেননি ॥ বামধারার রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদুল্ল্ াকায়সার কখনও নীতির প্রশ্নে আপোস করেননি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। শহীদুল্ল্ াকায়সারকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘শহীদুল্লা কায়সার: সংশপ্তক’ এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। তোফায়েল বলেন, ‘সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে হয়েও তিনি তার জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি তো মানুষ নন, ছিলেন এক মহামানব।’ শহীদুল্ল্ াকায়সারের স্মৃতিকথা ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি বারবার গ্রেফতার হয়েছেন, জেল খেটেছেন। কী এক জীবন তার! বিলাসী জীবন ত্যাগ করে এসে তার লক্ষ্যই ছিল গরিব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, আমি কখনও শহীদুল্ল্ াকায়সারকে দেখিনি। তার সঙ্গে আমার একমাত্র পরিচয় ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসের মাধ্যমে। এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে আমার টলস্টয়ের ‘ওয়ার এ্যান্ড পিস’ এর সেই বিশাল ক্যানভাসের কথাই মনে পড়ে। ‘পড়তে পড়তে আমার মনে হলো, আমরা তো সত্যি তার তেমন খোঁজখবর করিনি, তার স্মৃতিতর্পণ ইত্যাদি করা হয়নি।’ খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ ভাই ও সংবাদ এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা। তিনি ছিলেন আমাদের বড় ভরসার জায়গা, যার অভাব এখনও অনুভব করি আমরা। সাংবাদিক, রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি ছিলেন এক অসাধারণ সংগঠক। এক কথায় বলব, একজন ভার্সেটাইল জিনিয়াস ছিলেন তিনি।’ শমী কায়সার বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মনে হলো এ এক বিশাল জগত। ছোট্ট ফ্রেমে কোথা থেকে শুরু করব, তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাবাকে আমি নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। ‘বাবাকে ঠিক যতটুকু উপস্থাপন করা দরকার, ঠিক ততটুকুই আমি প্রামাণ্যচিত্রে উপস্থাপন করেছি। তার রাজনৈতিক জীবন, জেলজীবন, সাহিত্য জীবনকে তরুণ প্রজন্মের উপযোগী করেই আমি উপস্থাপন করেছি।’
×