ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের আলোকে বাংলাদেশের জন্য সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের আলোকে বাংলাদেশের জন্য সুপারিশ

মেলবোর্নে কনফারেন্সে যোগ দেয়ার দাওয়াত পেয়ে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পাসপোর্ট জমা দিলাম অক্টোবরের ৫ তারিখ। ১৯ তারিখ মেসেজ পেলাম যে আমার ভিসার আবেদন অস্ট্রেলিয়া এ্যাম্বাসিতে পৌঁছেছে। ২৫ তারিখের দিকে মেসেজ পেলাম আমার আবেদন দিল্লীর অস্ট্রেলিয়া এ্যাম্বাসি গ্রহণ করেছে। এরপর প্রতীক্ষার পালা। ১১ নবেম্বর রাত দুটোর দিকে (ততক্ষণে ১২ নবেম্বর হয়ে গেছে) ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেইল চেক করলাম- দেখি আমি ভিসা পেয়েছি। ভিসা পাওয়ার পর এক ধরনের দোদুল্যমানতা চলে এসেছে- এত স্বল্প সময়ে যাব কি করে? আমি মেলবোর্নে কনফারেন্সে এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি মেলবোর্নে শাখায় আমার কলিকের আমন্ত্রণ ছাড়াও দীর্ঘদিনের গবেষণা সহযোগীর আমন্ত্রণ ছিল সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ক্যাম্পাসের রিসার্চ স্কলারদের প্রেজেন্টেশনে হাজির থাকার। সস্তার এয়ারলাইন্স খোঁজার পালা শুরু হলো। আমার এক প্রাক্তন ছাত্র আমাকে মিনি রুটফ্রেন্ডসের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিলেন। উনি এয়ার এশিয়ায় মেলবোর্ন পর্যন্ত আসা-যাওয়া এবং কোয়ান্টামে মেলবোর্ন থেকে রক হোমটোনে আসা-যাওয়ার টিকেট কমিশন ছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে দিলেন এবং আমি নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রা করলাম। তবে উল্লেখ্য আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেখানে কিন্তু কনফারেন্সে এবং বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেয়ার জন্য কোন ধরনের নীতিমালা নেই। শিক্ষক মান উন্নয়নে হয়ত ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রয়াস গ্রহণ করা হবে। যাক নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত এয়ারলাইন্সে রওয়ানা দিলাম এবং সময় মত মেলবোর্ন পৌঁছালাম। মেলবোর্ন এয়ারপোর্টে নেমে বেশ সুশৃঙ্খল ও আন্তরিক লাগল। তাদের এয়ারপোর্টে ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্টের ব্যবস্থা হয়েছে। আমার পাসপোর্ট দিতেই কোন প্রশ্ন না করে সিল মেরে পথ দেখিয়ে দিল। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলামÑ আন্তরিকতার সঙ্গে বলল, তোমার সকল তথ্য আমাদের ডাটা বেজে আছে। দেখলাম কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। নির্দিষ্ট কতটুকু পথ আসার পর সেই লাল গালিচায় অবস্থানÑ ব্যাগ নিচে রাখতে বলল। একজন ভদ্রমহিলা কুকুর এনে বললেন, চেক। কুকুর আমার ব্যাগের ধারে কাছেও গেল না। তখন বললেন, গো। আমি দুষ্টুমি করে বললাম, ক্যান আই কিস দ্য ডগ। মহিলা আঁতকে উঠলেন। সিরিয়াসভাবে বললেন, নো, নো। মাথায় তখন আমার ইউজিসি চেয়ারম্যান স্যারের সেই লালগালিচা সংবর্ধনার কথাটি মনে পড়ছিল। যাক বাইরে বেরিয়ে এসে হোটেলের ঠিকানা দেখিয়ে বাসে যেতে চাইলাম। কিন্তু পুলিশ অন্যদিকে ঠেলে দেয়- ফলে তার সাহায্য চাইলে ট্যাক্সি ঠিক করে দেয়। ট্যাক্সিতে উঠে দেখি ট্যাক্সি ড্রাইভার পাকিস্তানী। আগে জানলে উঠতাম না। অনেক দূর ঘুরিয়ে ৬০ ডলারের জায়গায় বিল যখন ১০০ ছুঁই ছুঁই করে তখন হোটেলের দোরগোড়ায় নামিয়ে দিল। পাকিরা বিদেশে বসবাস করেও কতধূর্ত। রেনডোভাজ হোটেলের পেশাদারিত্ব ভাল লাগল। আমি সব সময়ে বিদেশে গেলে বুকিং ডটকমের মধ্যে বুক করে থাকি। ভিসা প্রসেসিংয়ের পূর্বে যখন বুক করতে গিয়েছিলাম তখন ১৯৯ ডলার চেয়েছিল। ফলে বুক করা হয়নি। ভিসা পাওয়ার পর বুকিং ডটকমের মাধ্যমে গেট সাউদার্ন হোটেলই মেলবোর্নে বুকিং করি। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারা জানায় যে বুকিং ক্যান্সেল- কেননা আমার ক্রেডিট কার্ড নাকি ঠিক নেই। অগত্যা যখন আবার চেক করি দেখি রেনডোভাজ হোটেলে সেল দিচ্ছে এবং রেট কমে- ১১১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। মনে মনে খুশি হই এ কারণে যে দু’দিনের কনফারেন্সের ভ্যানু এ হোটেলে। সকালে যখন কনফারেন্সে যাচ্ছি দেখি ইস্ট ওয়েস্টের প্রাক্তন দু’জন কলিগ একজন ইতোমধ্যে পিএইচডি করে পার্ট টাইম ক্লাস নিচ্ছে সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবোর্ন ক্যাম্পাসে। অন্যজন পিএইচডি করছে দু’জনই আমাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হলোÑ কেননা তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার ইচ্ছে নেই। আমার প্রবন্ধটি ছিল ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে উদ্যোক্তা অর্থনীতিতে আধুনিক কর্মমুখী শিক্ষার ওপর কেস স্টাডি। এতে আমি তুলে ধরি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রয়াস, উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে আউট কাম বেজড টিচিং-লার্নিং এ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি যেভাবে গ্রহণ করেছেন, র‌্যাঙ্কিংয়ের নামে কোন প্রবীণ শিক্ষক বা পত্রিকা সুযোগ সন্ধানী না থাকতে পারে তার জন্য করণীয়; বর্তমান সরকার যেভাবে উদ্যোক্তা শিক্ষায় পাঠদানে উৎসাহিত করছেন, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের নেতৃত্বে সেভাবে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা তৈরির জন্য স্নাতকত্তোর পর্যায়ে পাঠদান শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্নাতক পর্যায়েও এটি জরুরী ভিত্তিতে স্নাতক পর্যায়ে উদ্যোক্তা অর্থনীতি শুরু করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক এবং পাঁচ বছরের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিংয়ের কাজ যা বর্তমান ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হচ্ছে সেটি যেন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়। এদিকে কেউ কেউ বেসরকারীভাবে র‌্যাঙ্কিং দেয়ার নাম করে এক ধরনের খেলাপ বিতরণ করছে- যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে পার্লামেন্টে আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে, ফ্যাকাল্টি পর্যায়ে, বিভাগ ও প্রোগ্রাম পর্যায়ে করার উদ্যোগ ইউজিসি নিতে পারে এবং গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত জার্নালেরও র‌্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ উপরোক্ত দুটো বিষয়ে উনি যদি একটু নজর দেন তবে অতিরিক্ত লোকবলসহ প্রয়োজনীয় সাপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরির কমিশন গ্রহণ করতে পারে। আরেকটি অনুরোধ রাখব বর্তমানে যে আইকিউসি আছেÑ এটি শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশ সহযোগিতা করছে। কয়েকদিন আগে আইইউএবির আইউকিউসির কার্যক্রম দেখে আমার মনে হলো অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবোর্নের তুলনায় ওই বিভাগ অনেক সুন্দরভাবে শিক্ষার মান প্রদান করছে। এ জন্যই আশা থাকবে বিশ্বব্যাংকের আওতায় হেকাপের মাধ্যমে আইকিউসির যে প্রকল্পের পাঁচ বছরব্যাপী কার্যক্রম শুরু হয়েছেÑ এটি বন্ধ না হয়ে বরং ২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা এবং এ জন্য যা যা প্রয়োজনীয় তা করার। যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইকিউসির আওতায় আসেনি তাদের আনতে হবে। আবার যারা নিজেদের অক্ষমতার কারণে প্রকল্পের অর্থ খরচ করতে পারছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রকল্পের প্রতিটি অর্থ স্বচ্ছ এবং সুন্দরভাবে খরচ হলে অবশ্যই কর্ম উদ্যোগী মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব- যাদের মধ্যে স্কিল ডেভলপমেন্ট করা সম্ভব। আসলে দক্ষতা ও কার্যকারিতার বিকল্প চাকরি বাজারে নেই। নচেত আমাদের দেশে গুণমানসম্পন্ন শিক্ষার্থী যদি অদক্ষ, কারিগরিবিহীন এবং আবৃত্তিমূলক হয় তবে দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে পত্রিকায় দেখা যায় বছরে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশী নাগরিকরা এদেশে কাজ করে নিয়ে যায়। এখন সময় এসেছে গবেষণা করে দেখা কোন ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ওই কাজ করতে কেন পারে না এবং সে গবেষণার আলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিলেবাস সংশোধন সংযোজন করতে পারে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বেশ দক্ষতার সঙ্গে জ্ঞানের আলো ও স্কিল ডেভলপ কাজে নিয়োজিত। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন মন্তব্য করেছেন, দেশের স্বার্থেই যোগ্য নাগরিক তৈরি করতে হলে শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে হবে। কনফারেন্সে আমার উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর সিডনি বিজনেস স্কুলের প্রফেসর, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসরের মন্তব্য বেশ প্রেরণা যোগাল, পূর্ব কর্মসূচী অনুযায়ী ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবোর্ন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করি, আমার কলিগের সঙ্গে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করি। কিন্তু তাদের ক্যাম্পাসটি আমার ভাল লাগেনিÑ এ দেশের তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। জিয়া হকের ওয়ার্ল্ড বিজনেস ইনস্টিটিউটের কনফারন্সের পর উনি ট্যাক্সি করে স্কাই বাসে তুলে দিয়ে গেলেন। সেখান থেকে রকহেম্পটনে যাত্রা। ভাল লাগল কোয়ান্টাসের অধিকাংশ বিমানবালা বয়স্ক। যেহেতু ব্রিসবেনে এসে আবার অন্য প্লেনে উঠতে হলো তখনও দেখলাম বিমানবালারা অনেক বয়স্ক। কিন্তু তাদের কর্ম আর আতিথেয়তা ভোলার নয়। আমার পাশে ছিল আশি ঊর্ধ্ব দম্পতি কোটপিন লাগানো ভিআইপি। ডুবন্ত সূর্যের আভা লাল না হয়ে নীল হয়ে চারাদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অপরূপ লাগছিল। বিশাল রকহোম্পটনে না গেলে বুঝতাম নাÑ কি মায়াবী শহর। এখনও গ্রামীণ পরিবেশ রয়ে গেছে। মাত্র পঁয়ষট্টি হাজার মানুষের বাস। রকহোম্পটনকে বলা হয়ে থাকে গোশতের রাজধানী। সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ডিনের সঙ্গে আলাপ হলো। অস্ট্রেলিয়ান অধ্যাপিকা বেশ দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে আলোকপাত করলেন। পরের দিন তাদের ১১টি শাখার রিসার্চ স্কলারদের প্রেজেন্টেশন দেখলাম। বিশাল সুন্দর ক্যাম্পাস। আকস্মিক দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন ব্লিডিংভিত্তিক এ্যাসেম্বলি লাইনের ব্যবস্থা আছে। প্রকৃতি যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মান অবশ্য প্রথম, দ্বিতীয় টায়ারের মধ্যে পড়ে না। অথচ সেখান থেকে এসে এদেশে গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় যে দাপট দেখায় সে জন্যই বর্তমান ইউজিসির চেয়ারম্যান বিদেশী কুকুরদের দিয়ে পাহারার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও সংশোধিত হলো না। সম্প্রতি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের ভর্তি পরীক্ষায় ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন স্যারের সহজ প্রশ্ন এনপিভি, আইআরআর, সিজিপি ৩.৪১ এমনিতে পেয়েও অনেকে বলতে পারেনি। অন্যদিকে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ স্যার যখন জিজ্ঞেস করলেন এবার অর্থনীতিতে কে এবং কিসে নোবেল প্রাইজ পেয়েছে অনেকেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে কম বলাই ভাল। অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসারদের ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ অত্যন্ত ভাল। আমি রকহোম্পটন থাকার সময় আমার ব্যাগটি এয়ারপোর্টে রাখলে নিজে টেনে রেখে দেন। আবার যখন আমাকে চেক করবে তখন বলেন যে, এক্সপ্লোসিভ চেক করছি। রকহোম্পটন থেকে যখন মেলবোর্ন এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম তখন ৭ ঘণ্টার ব্যবধান। ব্যাগে তখন শ্যাম্পু ছিল- আমি ভুলে গেছি। ইমিগ্রেশন অফিসার শ্যাম্পুগুলো ফেলে দিতে চাইলেন- আমি বললাম লাগেজে দেব। বললেন, ডিপারচারের তিন ঘণ্টা আগে চেক ইন করতে। কি সুন্দর ব্যবহার। চেক ইনের সময় দেখলাম এয়ার এশিয়ার ব্যবসার। ফ্লাইমবোর্ড বেভের নাম করে মেলবোর্ন থেকে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত নিচে ৪০০ ডলার। কি আজব কা-। প্রায় চার শ’ যাত্রীর মধ্যে ১২ জন কিন্তু কিনে ফেলল। তবে ক্যাপ্টেনদের ধন্যবাদ জানাতে হয় প্রচ- ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও প্রায় দু’ঘণ্টার বেশি সময় তারা সুন্দর ও দক্ষভাবে প্লেনটি কুয়ালালামপুরে নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট পূর্বে পৌঁছায়। তবে প্লেন যখন শান্ত আবহাওয়ায় ছিল তাদের খাবারের পাশাপাশি পণ্য সম্ভার বিক্রির পালা শুরু হয়েছিল। এদিকে মালয়েশিয়ায় এসে ষোলো ঘণ্টার ট্রানজিট ভিসা নেই। আগের থেকেই আমন্ত্রণ অনুযায়ী ‘ইন হাউজ মাল্টি মিডিয়া কলেজের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আমি ‘উচ্চশিক্ষায় গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান, পরীক্ষা পদ্ধতি ও কর্ম উপযোগী মানব সম্পদ’-এর ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেই। ড. সবুর খানের আন্তরিকতায় সেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। এতে দেখি যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। উভয় পক্ষের আলোচনাটিকে বেশ উপভোগ্য মনে হলো। ইতোপূর্বে অবশ্য দেশে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক-প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নিয়েছি। মালয়েশিয়ার জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার উচ্চ। বাংলাদেশীদের অভাব নেই। মালয়েশিয়ান এয়ারপোর্টও বেশ বড়। সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল ইমিগ্রেশনের পর পণ্যের দাম সত্যিই সত্যি কমে যায়- গলা কাটা দামে দক্ষিণ এশিয়ার মতো দেশগুলোতে বিক্রি হয় না। বরং পণ্যের গুণগত মানও বেশ ভাল। অস্ট্রেলিয়ার বেশ অনেক কিছু ভাল দিক আছে। অতিথিপরায়ণ ও পারস্পরিক সৌজন্যবোধ এবং মানুষের প্রতি তাদের সম্মান। তবে আমার একটি ছোট্ট সমস্যা হয়েছিলÑ গ্রেট সাউদার্ন হোটেল মেলবোর্ন সেখানে তারা আমার ক্রেডিট কার্ড ইনভেলিড বলে ক্যান্সেল করে দিয়েছিল সেই বিদেশে গিয়ে ওপেন করেছিÑ তৎক্ষণাৎ তারা ১৩৭.৬৯ অস্ট্রেলিয়ান ডলার কেটে নিয়েছেÑ অথচ আমি তাদের হোটেলে যাইনি এবং এমনকি কার্ডও ব্যবহার করিনি। ২১ নবেম্বর থেকে জানাচ্ছি ২৭ নবেম্বর কারা জানিয়েছে ব্যাঙ্কারের মাধ্যমে কেবল কথা বলবে। আমার ব্যাঙ্কার প্রাইম ব্যাংককে বলেছি তারা যেন বিষয়টির সত্যিকার সমাধান করেন। ২১ তারিখ যখন টের পেয়ে প্রতিবাদ জানাই তারপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে বেশ ভয় লেগেছে। আসলে এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার নতুন। অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে একটি সমস্যা অমরহম প্রবলেম। এ সমস্যাটি আমাদের দেশেও ক্রমশ বাড়ছে। কেননা বর্তমানে দেশে জীবন আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার আদলে চাকরি থেকে রিটায়ার করলে সামাজিক কাজে পুনর্বাসন করা যায় সে ব্যাপারে বাংলাদেশে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ দরকার। মানুষ তো কাজ ছাড়া বাঁচতে পারে না। অস্ট্রেলিয়ানরা অত্যন্ত কর্মঠ ও মিশুক। তারা যে উন্নত রাষ্ট্র হয়েছে তার পেছনে রয়েছে সময়নিষ্ঠা। বর্তমানে শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বগুণে আমরা এগিয়ে চলেছি। এদেশে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপন এবং উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক টেইলর মেথড বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দেশে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের এনজিওর বিভিন্নভাবে অস্ট্রেলিয়ার উন্নয়ন কর্মকা- থেকে এবং সামাজিক সংশ্লিষ্টতা থেকে উপকৃত হতে পারে। এ জন্য দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করে তা থেকে আমাদের দেশের ব্যবসায়ী এবং খাদ্য গ্রহণকারী উভয়কেই শিক্ষা নিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব উভয় পক্ষের। অস্ট্রেলিয়ান হাসপাতালের একটি শাখা যৌথ মালিকানায় চালু করা উচিত। আবার এদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি-পণ্য বিনিময় এবং মানবসম্পদ রফতানি, পোশাক রফতানি ও অন্যান্য পণ্য বহুধাবিভক্তিকরণ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার চাহিদা অনুযায়ী রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা দরকার এবং তদানুযায়ী ব্যবসা গ্রহণ করা। সরকারী উচ্চ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে অস্ট্রেলিয়ান প্রথম টায়ারের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির সঙ্গে উদ্যোক্তা অর্থনীতিতে পিএইচডি কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগ নিতে পারে। বর্তমানে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ যেভাবে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে এবং বর্তমান সরকারের দেখানো পথে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ স্বল্প খরচে দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে উচ্চ শিক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িকতা। যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে তারা যে দলেরই হোক, দেশ, জাতির শত্রু। লেখক : অর্থনীতিবিদ [email protected]
×