ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করেন বাবর ও পিন্টু

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করেন বাবর ও পিন্টু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ১৮তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সাক্ষীদের জবানবন্দীর আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভয়াবহ ওই হামলার আলামত নষ্ট, হতাহতের নির্মম ঘটনা এবং অপরাধীদের বাঁচাতে বিভিন্ন তৎপরতার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি সোমবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন , ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সারা দেশে পরিচালিত সব হামলায় গ্রেনেডসহ গোলাবারুদ সরবরাহ করে বিএনপি নেতা পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজ উদ্দিন। মুফতি হান্নান টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে ২১ আগস্ট হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা ষড়যন্ত্র এবং সিলেটসহ অন্যান্য গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকার করে বিভিন্ন তথ্য দেয়। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির বিষয়টি তৎকালীন উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমিন । এ ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, এ্যাডভোকেট মোঃ আমিনুর রহমান, এ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত ও এ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন , ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ে র‌্যাবের ডিজি আব্দুল আজিজ সরকারের জবানবন্দীর আলোকে দেখা যায়, জঙ্গী মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরকে জানানোর পর তিনি (বাবর) অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হন। মুফতি হান্নান টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে ২১ আগস্ট হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা ষড়যন্ত্র এবং সিলেটসহ অন্যান্য গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকার করে বিভিন্ন তথ্য দেয়। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির বিষয়টি তৎকালীন উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতে বলে, সাক্ষী আব্দুল আজিজ সরকার তার জবানবন্দীতে বলেন- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে যেন তিনি কোন পদক্ষেপ না নেন। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী (পিডব্লিউ-৭২) মেজর (অব) আতিকুর রহমান, (পিডব্লিউ-৭৩) নাহিদ লায়লা কাকন (জঙ্গী মাজেদ ভাটের স্ত্রী), (পিডব্লিউ-৭৪) মোসাদ্দেক বিল্লাহ , (পিডব্লিউ-৭৫) আতাহার আলী, (পিডব্লিউ-৭৬) লে.কর্নেল (অব) গোলাম রাব্বানী, (পিডব্লিউ-৭৭) পুলিশ সার্জেন্ট মোঃ সেকান্দার আলী, (পিডব্লিউ-৭৮) সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন, (পিডব্লিউ -৭৯) আলমগীর কবীর চৌধুরী (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিউ-৮০) উত্তম কুমার বিশ্বাস (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিউ-৮১) ছাব্বির আহমেদ মাসুদ, (পিডব্লিউ-৮২) র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি মোঃ আবদুল আজিজ সরকার, (পিডব্লিউ-৮৩) এসআই গোলাম রহমানের জবানবন্দীর আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ করে। (পিডব্লিউ -৮৪) মেজর (অব) সৈয়দ মুনিরুল ইসলামের জবানবন্দীর আলোকে যুক্তি পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান।
×