ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি যানজট ও সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার করলেন ৫ মেয়র প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

দুর্নীতি যানজট ও সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার করলেন ৫ মেয়র প্রার্থী

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১১ ডিসেম্বর ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নগর ও নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করার নানা অঙ্গীকার করলেন। তাদের অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বেকার সমস্যা সমাধান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা, শ্যামা সুন্দরী খাল সংস্কার, সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত-মাদকমুক্ত, যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত সিটি কর্পোরেশন গড়াসহ নগরীর সব সমস্যার সমাধান করা। তারা ওয়াদা করলেন নির্বাচিত হলে নিজেরা দুর্নীতি করব না, অন্যকেও দুর্নীতি করতে দেব না। সোমবার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর উদ্যোগে সিটি নির্বাচন ২০১৭ জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে তারা এ অঙ্গীকার করেন। এ সময় রসিক নির্বাচনের ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৫ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহামেদ ঝন্টু ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আসিফ শাহারিয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়র প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বিএনপির কাওসার জামান বাবলা, বাসদের আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্তফা ও এনপিপির সেলিম আক্তার। ভোটাররা এই ৫ মেয়র প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন করেন নির্বাচিত হলে তারা সিটি কর্পোরেশন উন্নয়নসহ কি কি পদক্ষেপ নিবেন। পাঁচ মিনিট বক্তব্যে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে আমার প্রথম কাজ হবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এছাড়া শ্যামা সুন্দরী খালটি সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। যানজট নিরসন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে পুরাতন সদর হাসপাতালটি চালু করব। দুর্নীতি দূর করব।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না তা নিয়ে এখনও জনগণের মাঝে শঙ্কা রয়েছে।’ বিএনপির কাওসার জামান বাবলা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত পরিচ্ছন্ন সিটি কর্পোরেশন উপহার দেব। আমি দুর্নীতি করব না, কাউতে দুর্নীতি করতে দিব না। মাদকমুক্ত এবং সন্ত্রাসমুক্ত নগর গড়ব। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাবে। এরপর বেকার সমস্যার সমাধান করব। শিক্ষার উন্নয়নে যা যা করা দরকার আমি তাই করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছি। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তাই আমি আবারও সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাই।’ বাসদের আবদুল কুদ্দুস নির্বাচনে কালো টাকা ও সরকারী প্রভাবমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যানজট নিয়ন্ত্রণে অটোরিকশা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দলীয়করণ ও সন্ত্রাসমুক্ত সিটি কর্পোরেশন গড়ে তুলব। শ্রমজীবী মানুষ ও নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।’ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্তফা বলেন, যানজট নিরসন ও বেকার সমস্যা সমাধানে আমার ব্যাপক কর্মসূচী থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে টাকা দিয়ে যাতে ভোট কিনতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের নজরদারী থাকতে হবে। ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি)র সেলিম আক্তার বলেন, ‘নির্বাচিত হলে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করব সিটিবাসীর জন্য। রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করব।’ এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সুজন’র সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুজন’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জেলা সভাপতি আকবর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন প্রমুখ। পরে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে দুই মেয়র প্রার্থীর না আসাকে দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে সুজনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনুষ্ঠানে আসার জন্য তারা লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছিলেন। কেন এলেন না তার কোনও ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কয়েকবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি। সুজন’র প্রধান বদিউল আলমের সঞ্চালনায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীরা জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেন। পরে সব প্রার্থী হাতে হাত রেখে নির্বাচনের পরেও রংপুর নগরীর উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। শেষে উপস্থিত নগরবাসী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য হাত তুলে শপথ নেন।
×