ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

পাকি ক্যাপ্টেন শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

পাকি ক্যাপ্টেন শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উপর শুনানি শুরু হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ সোমবার শুনানি শেষ করেছে। আসামি পক্ষ শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করায় ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন ১৯ ডিসেম্বর। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর আবুল কালাম ও আসামি পক্ষে এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ শুনানিতে বলেন, ক্যাপ্টেন শহীদুল্লাহ যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি সোমবারই শেষ হয়েছে। এর পর আসামি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা শুনানির জন্য দুই মাসের সময় প্রার্থনা করেন। ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন ১৯ ডিসেম্বর। এর আগে ১৪ নবেম্বর ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো তিনটি অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর শহীদুল্লাই প্রথম সেনা কর্মকর্তা, যিনি বিচারের মুখোমুখি হলেন। ৭৫ বছর বয়সী শহীদুল্লার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির আমিরাবাদ গ্রামে। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে সে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, একাত্তরের ৭ জুন বিকালে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ পাকিস্তানী বাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে হোমিও চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর দাউদকান্দি ফেরিঘাটের পাশের গোমতী নদীতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। একাত্তরের ১৬ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহীদুল্লাহ পাকিস্তানী বাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালান। তারা স্বাধীনতার পক্ষের ২০ জনকে আটক করেন এবং পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আটকদের মধ্যে ছয়জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে তাদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়। সেখান থেকে একজনকে বের করে গোমতী নদীর পাশে নিয়ে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেন শহীদুল্লাহ। পরে অন্যদের ক্যাম্পে এনে নির্যাতনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর দেয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়। একাত্তরের ২১ জুলাই শহীদুল্লাহ পাকিস্তানী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে কালামিয়া নামে এক গাড়িচালককে ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরে কালামিয়াকে চান্দিনা থানার চান্দিনা হাসাপাতালের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেন ।
×