ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও সীমান্তের সব পয়েন্ট খোলা, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

এখনও সীমান্তের সব পয়েন্ট খোলা, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের স্থল, নদী ও সাগর এই তিনটি পথ এখনও উন্মুক্ত। আর এ উন্মুক্ত থাকার কারণে রোহিঙ্গারা এখনও রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে। স্থল সীমান্ত রয়েছে মূলত বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুমের তুমব্রু, ভাজাবুনিয়া ও চাকমা পাড়া। এর ওপারে রয়েছে তুমব্রু খক্ষ্যদইংগা। আর নদী পথ রয়েছে নাফ নদজুড়ে। এছাড়া আরও রয়েছে সাগর পথ। বর্তমানে যেসব রোহিঙ্গারা আসছে মূলত সাগর পথ দিয়ে টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। সোমবার সর্বশেষ এসেছে আরও ৬৫ জন। আর এ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ৮ লাখ ৪৭১ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা আগমন গত তিন মাসেরও অধিক সময় জুড়ে অব্যাহত থাকায় স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সীমান্তের এসব পয়েন্ট এখনও কেন খোলা রয়েছে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নাইক্ষ্যংছড়ির ছোট্ট স্থল পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের আগমন এখন নেই। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছেন, মিয়ানমার অঞ্চলের ঘুমধুম তুমব্রু ভাজাবুনিয়া ও চাকমাপাড়ার রোহিঙ্গাদের প্রায় সকলেই চলে এসেছে। এখন যারা আসছে তারা উত্তর মংডুর দংখালী পয়েন্ট দিয়ে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, হাদির ছড়া, লম্বরিপাড়া এবং শামলাপুর পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের উন্মুক্ত এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের পথসমূহ কেন সিল করা হচ্ছে না তা নিয়েও আলাপ-আলোচনার শেষ নেই। যে কোন পয়েন্ট দিয়ে এপারে চলে আসলে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফ অবস্থিত ১২ ক্যাম্পে নারী, শিশু ও পুরুষ মিলে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় হয়েছে। কী হবে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমন প্রশ্ন প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার পরও রোহিঙ্গা আগমন থামছে না। এসব রোহিঙ্গারা কখন প্রত্যাবাসিত হবে, আদৌ হবে কি না, হলেও কত সংখ্যক হবে এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনার অন্ত নেই। তবে অধিকাংশ মহলের আশঙ্কা মিয়ানমারে এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ইতোপূর্বে যে শর্ত আরোপ করেছে তার সঙ্গে নতুন নতুন আরও শর্ত জুড়ে দিতে পারে। এসব শর্ত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয়ার লক্ষ্যেই ছক কষে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। এদিকে, টেকনাফ-উখিয়ার ১২টি আশ্রয় ক্যাম্পে বসতি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ অস্থায়ী স্থাপনাও গড়ে তুলছে। এতে কয়েকটি এনজিও আর্থিক যাবতীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। এসব ধর্মীয় স্থাপনা পরিচালনাকারীদের মাসিক বেতনও ধার্য করে দিচ্ছে এনজিও সংস্থাগুলো। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ‘গোল বৈঠক’ও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে না যায়, সে ব্যাপারে নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় অধিবাসীদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত ১২ ক্যাম্প ঘিরে কাটা তারের বেড়া দেয়ার দাবি উঠেছে। যাতে করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ত্যাগ করে যত্রতত্র পালিয়ে যেতে না পারে এবং এর পাশাপাশি বহিরাগতদের আগমনও যাতে রোধ হয়। ওপারে স্থল মাইন বিস্ফোরণ ॥ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী যাতে পুনরায় ফিরে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার সীমান্ত এলাকাজুড়ে স্থল মাইন স্থাপন করে রেখেছে। এ স্থল মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের চার সেনা সদস্য আহত হয়েছে। গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটলেও তথ্য ফাঁস হয়েছে সোমবার। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিটওয়ে-মাইবুন সড়কের ওপর দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চারটি গাড়ি যাওয়ার সময় পর পর তিনটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। ঐ পথ দিয়ে মিয়ানমারের এক মন্ত্রীর গাড়ি বহর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার পর ঐ মন্ত্রীর সফর থমকে যায় তাকে পুনরায় সিটওয়েতে ফিরিয়ে নেয়া হয়। উল্লেখ্য, সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থল মাইন বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১২ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। নিজেদের পুঁতে রাখা মাইনে তাদেরই সেনাবাহিনী ৪ সদস্য গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
×