ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুকে উস্কানি

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

ফেসবুকে উস্কানি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। মানুষে মানুষে যোগ সাধনের এই প্রক্রিয়া ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনের এই মাধ্যম ফেসবুক মানুষকে আরও কাছাকাছি এনেছে। মুহূর্তের মধ্যে যে কোন বিষয় যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের কাছে। কত দূরের মানুষ চলে আসছে কত কাছে। প্রাণে প্রাণ মেলানোর এই মাধ্যমটির ইতিবাচক ব্যবহার মানুষের জ্ঞান ও তথ্য ভা-ারকে করছে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এর নেতিবাচক ব্যবহার বিপর্যয় টেনে নিয়ে আসে। ইতি-নেতির এই দোলাচলে ফেসবুক তবু মানুষকে আসক্ত করে রাখছে। কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় বৈকি ফেসবুক। কেউ কেউ তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন এই মাধ্যমে। আবার এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। জঙ্গীবাদীরা এই ফেসবুককে ব্যবহার করছে জঙ্গী তৎপরতায়। একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে পুঁজি করে রাজনীতি করতে সারাদেশে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারাই মূলত কোন ঘটনা বা বিষয় যাচাই-বাছাই করার আগেই আমজনতাকে উস্কানি দিয়ে জঘন্য সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক বিবাদ সৃষ্টি করে আসছে। পরে অজানা কারণে পুলিশের তদন্তের বাইরে চলে যায় ওই চক্রের ‘গড ফাদার’ নামধারীরা। আসলে এরা কারা? সে প্রশ্নের জবাব মেলে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে আমজনতাকে আরও সজাগ এবং সচেতন করার জন্য সরকারকেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তা না হলে আরও ঘটনার ফের জন্ম হতে পারে। অপরদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিচার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তিসহ আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করতে হবে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রাখা জরুরী। ফেসবুককে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা চালিয়ে আসছে মৌলবাদী ও অপরাজনীতিবিদরা। ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ভুয়া স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অবমাননার অজুহাতে হামলা, আগুন, ভাংচুর, লুটপাট করে তা-ব চালানো হয়েছিল রামু থেকে নাসিরনগর ও সর্বশেষ রংপুরে। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা, মূল অপরাধীদের গ্রেফতার না করা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতায় এসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। রংপুরের ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটানো হয় পরিকল্পিতভাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে সতর্ক থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না। নাসিরনগরেও ভুয়া আইডি ব্যবহার করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি এবং ব্যাপক তা-ব চালানো হয়। কিন্তু প্রশাসন ছিল নির্বিকার। রামুর বৌদ্ধবিহারে ব্যাপক হামলা; অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালানোর ঘটনার পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও প্রকৃত অপরাধীদের বিচার এখনও হয়নি। এ হামলায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা দায়ের করে গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়েছিল পুলিশ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দ-বিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ। কিন্তু বিভিন্ন সময় ধর্ম অবমাননার ঘটনায় যেসব অভিযোগ শোনা যায়, সেসবের বিচারের কথাও তেমন শোনা যায় না। এসব ঘটনায় ন্যায় বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষ আস্থা হারাবে একদিকে এবং অপরদিকে এ ধরনের অপরাধ বাড়তে থাকবে। যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং অপরকে ফাঁসানোর জন্যই। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অযোগ্যতা, অদক্ষতার কারণে এসবের সুরাহা হচ্ছে না। ফেসবুক কেন্দ্রিক উস্কানি এবং অপরাধ নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু নির্বিকার ও নীরব থাকা কোনভাবেই সমীচীন নয়। অচিরেই এসব নির্মূলে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জনগণের প্রত্যাশা।
×