ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর মেধা ও ক্ষমতা

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

নারীর মেধা ও ক্ষমতা

রোকেয়া দিবসে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নারীর নিজস্ব মেধা ও ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন তিনি পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে, যারা দেশ ও সমাজের অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের বেগম রোকেয়া পদক-২০১৭ ভূষিত করেন। উল্লেখ্য, রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন উপমহাদেশে নারী শিক্ষা ও জাগরণের অগ্রদূত। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন যে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বরং সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নারীদের দাঁড়াতে হবে নিজের পায়ে। তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, নারী ও পুরুষ উভয় মিলেই উন্নত করে গড়ে তুলতে হবে দেশকে। এদিন গুগল ডুডলে উপমহাদেশের দুজন বিশিষ্ট নারীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। একজন বাংলাদেশের বেগম রোকেয়া, আরেকজন প্রথম নারী আলোকচিত্রশিল্পী হোমাই বিয়ারাওয়ালা। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার দুর্লভ আলোকচিত্র হোমাই তার ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন। এ থেকে বেগম রোকেয়ার আন্তর্জাতিকীকরণ অনেকটাই সম্পন্ন হওয়ার পথে এগিয়ে গেল। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বে নারীরা যে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপীই বঞ্চনার শিকার, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষণাগারগুলোর দ্বার দীর্ঘদিন নারীদের জন্য বন্ধ ছিল। এটাই পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে অর্গলগুলো ধীরে-সুস্থে হলেও খুলছে, এটা আশার কথা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সে কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য এই ধরনের তথ্য-পরিসংখ্যানকে মূল্যায়নসহ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারী ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর অনুপাতে ভারসাম্য বিরাজ করছে। তবে যা দুঃখজনক তা হলো নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শতকরা ৮৭ দশমিক ২ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছে পুরুষ। তবে গত ৫ বছরে নারী-পুরুষ লিঙ্গানুপাত কমেছে, উন্নত সমাজব্যবস্থার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ। তবে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম শীর্ষক বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া, আয়ও অসামান্য। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃজন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী ও শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। এক্ষেত্রে নারীর অবদান অসামান্য। বর্তমানে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বৈচিত্র্য ও বহুমুখিতা কম। সেক্ষেত্রে ধান-চালের পাশাপাশি কৃষির বহুমুখীকরণ তথা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে কর্মক্ষম নারী-পুরুষকে মনোযোগী হতে হবে। ভারি ও বহুমুখী শিল্পায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংক-বীমাসহ কারিগরি উৎকর্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে দেশেই। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে কূপমণ্ডুকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সিডও সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে অবস্থায় অঙ্গীকার পূরণে আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
×