ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ান প্লানেট সামিট

প্রধানমন্ত্রী আজ প্যারিস যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী আজ প্যারিস  যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান প্লানেট সামিটে যোগ দিতে আজ সোমবার প্যারিস যাচ্ছেন। এই সামিটে অংশ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করবেন। রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্যারিস সফর অবহিত করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে সরকারী সফর করবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের যৌথ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল মঙ্গলবার প্যারিসে আয়োজিত ওয়ান প্লানেট সামিটে অংশগ্রহণ করবেন। সফরকালে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশকে যেসব ইউরোপিয়ান দেশসমূহ দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান করেছিল তাদের মধ্যে ফ্রান্স ছিল অন্যতম। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্স স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফ্রান্সসহ জোটবদ্ধভাবে ইউরোপিয়ান দেশসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সার্বভৌম উপস্থিতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনেও ফ্রান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এছাড়া ফ্রান্সের জনগণ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফরাসি বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আন্দ্রে মালরো। এর পরপরই ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশ ফ্রান্সে আবাসিক দূতাবাস স্থাপন করে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনের ২১তম অধিবেশনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি গৃহীত হয়। এই চুক্তির দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ওয়ান প্লানেট সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনে উদ্ভাবনী ও বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করবেন। সম্মেলনের হাই লেভেল সেগমেন্টে প্রধানমন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ অংশগ্রহণ করবেন। এই সেগমেন্টে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ সাতটি সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করবেন। উদ্যোগগুলো হলো-কার্বন নিরপেক্ষতা জোট, কয়লা পরিত্যাগ জোট, উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের যৌথ ঘোষণা, জলবায়ু প্রতিবেদন পেশ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সরকারী-বেসরকারী নতুন জোট, প্যারিস চুক্তির আলোকে পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে সার্বভৌম তহবিল গঠন জোট, কার্বন মূল্যমান নির্ধারণ জোট এবং জলবায়ু সহনশীলতা ও অভিযোজন বিষয়ে নতুন অঙ্গীকার গ্রহণকারী দেশসমূহের জোট। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের সরকার ইতোমধ্যে জলবায়ু অভিযোজন এবং উপশম বিষয়ে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। একটি উন্নয়নশীল ও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিযোজন বিষয়টি বাংলাদেশ সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মসূচীতে বাংলাদেশের অর্জন এবং সাফল্য বিশ্ব পরিম-লে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে। সম্মেলনের হাই লেভেল সেগমেন্টে প্রধানমন্ত্রী অভিযোজন ও জলবায়ু সহনশীলতা বিষয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ঘোষণা করবেন। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ ও সাফল্যের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরবেন। বন্ধুপ্রতিম দেশ ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহকে অধিকতর শক্তিশালী ও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সমুদ্র অর্থনীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট উৎক্ষেপণসহ সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দূরদর্শী ও কার্যকরী নেতৃত্বের অনবদ্য স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রীকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ সম্মানে ভূষিত করে। ওয়ান প্লানেট সামিটে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বিশ্ব দরবারে আরও একবার তুলে ধরা সম্ভব হবে। এছাড়াও এ সম্মেলন হতে বিশ্বের উন্নত দেশসহ সকলকে প্যারিস চুক্তির কার্যকরী বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হবে। পাশাপাশি এই সফরের ফলে ফ্রান্স-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত অধিকতর মজবুত হবে বলে আশা করা যায়। ফলে সার্বিক বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এ সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশা করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আজ সোমবার সকালে প্যারিসের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটির দুবাই হয়ে চার্লস্ ডি গল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্যারিসে নিযুক্ত বাংলদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্যারিস লা গ্রান্ড হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলে অবস্থান করবেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরবেন।
×