ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রি-হায়ারিং কর্মসূচী চলাকালে আটকের ঘটনায় বিস্মিত অনেকেই

মালয়েশিয়ায় দুইদিনে ৬শ’ বাংলাদেশীসহ হাজার বিদেশী আটক

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

মালয়েশিয়ায় দুইদিনে ৬শ’ বাংলাদেশীসহ হাজার বিদেশী আটক

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় ‘রি-হায়ারিং’ কর্মসূচী চলাকালে দেশটির পুলিশ ব্যাপক হারে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। গত দুই দিনে প্রায় এক হাজার অভিবাসীকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের কর্মী রয়েছে ৬শ’র ওপরে। কর্মীরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনুমতি নিয়েই বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাচ্ছিলেন। দেশটির পুলিশ এই কর্মীদের হাইকমিশনের খুব কাছে থেকে আটক করে নিয়ে যায়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রি-হায়ারিং কর্মসূচী চলবে। এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত হতে না পারলে কর্মীদের দেশে ফিরে আসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হাইকমিশন জানিয়েছে, বেশ কিছু কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে এমন খবর তারা পেয়েছেন। তবে ঠিক কতজন আটক হয়েছেন, তার কোন হিসাব মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানানো হয়নি। গত জুলাইতে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের সাড়ে তিন হাজারের বেশি কর্মী আটক করে। আটক কর্মীদের বিভিন্ন ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ রাখা হয়েছে। তখন দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থার সর্বক্ষণিক খবরাখবর রেখেছে পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আটকের বিষয়ে পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে আগে আটককৃতদের বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে- যাতে তারা মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার সুযোগ পান। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। শনি ও রবিবার আটককৃতদের বিষয়েও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা ‘আনুষ্ঠানিক’ কিছু বলেননি। তবে তারা স্বীকার করেছেন, দেশটিতে পুলিশ আটক অভিযান চালিয়েই যাচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের কর্মীদের আটক করে জেলহাজতে পাঠাচ্ছে। যদিও দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, যারা রিহায়ারিং কর্মসূচীতে যোগ দিতে যাবেন তাদের আটক করা হবে না। এখন দেখা যাচ্ছে রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় যারা যাচ্ছেন তাদের অনেককেই আটক করা হচ্ছে। এতে রি-হায়ারিং কর্মসূচী টার্গেট নেয়া হয়েছিল ২ লাখ কর্মীকে বৈধতা দেয়ার। এভাবে আটক অভিযান চলতে থাকলে টার্গেট পূরণ হবে না বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত দুই দিনে পরিচালিত অভিযানে ৬শ’ বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতর দেশটির অন্তত ১৫ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়। আটককৃতদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের আশপাশের এলাকা ও রাস্তা থেকে তাদের আটক করা হয়। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, গত দুই দিনে কত কর্মী আটক হয়েছে তা বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানায়নি। এটি আটক নিয়মিত অভিযানের মতো কোন ঘটনা হতে পারে। তারা অবৈধ কর্মী আটক করলেও ১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধকরণ কর্মসূচী বহাল রয়েছে। তবে যারা ছাত্র, ট্যুরিস্ট ও বিভিন্নভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে তাদের সংখ্যা জানার জন্য ই-কার্ডের ঘোষণা দেয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই সময় সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল। যারা এর আওতায় আসতে পারেনি তারাই আটক হচ্ছে। যারা ই-কার্ডের আওতায় এসেছেন ‘রিহায়ারিং’ কর্মসূচীর মাধ্যমে তারাই বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ পাচ্ছেন। যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের আবার কোম্পানির মালিকরা রিহায়ারিংয়ের মাধ্যমে চাকরিতে নিচ্ছেন।
×