স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় গ্রিডে প্রথম যোগ হলো সৌর বিদ্যুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে স্থাপিত তিন মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওড়ে ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি ফটোভোল্টাইক বিদ্যুত উৎপাদন মিনি গ্রিড এবং চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ৩২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দশ উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেছেন তিনি।
গণভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। এ কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন করছে। সরিষাবাড়ীর সিমলা বাজারে দেশের প্রথম সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে। ‘এনগ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্লান্ট লিমিটেড’ নামের এই কেন্দ্রের জমি দিয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। আর বিনিয়োগ করেছে জার্মানির আইএফই এরিকসেন এজি, বাংলাদেশের কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড। আট একর জমিতে সাড়ে ১১ হাজার সোলার প্যানেল ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে তিন মেগাওয়াটের এই সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র। আগামী এক বছরের মধ্যে এ রকম আরও পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ৩৩২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সুনামগঞ্জের সাল্লায় ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ফটোভোল্টাইক বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছে দুই হাজার ৩২২টি সোলার প্যানেল। এই কেন্দ্রের ফলে হাওড়ের ৪০০ পরিবার বিদ্যুত সুবিধা পাবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, ভবিষ্যতে সোলার বিদ্যুতের উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে চলে আসবে।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস টারবাইনে ১৫০ এবং স্টিম টারবাইনে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত তৈরি হবে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরার ঝিলিম বাজারে চালু হওয়া নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে আসবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে।
এই অনুষ্ঠানে মাধ্যমে ফরিদপুর সদর উপজেলা, মাদারীপুরের রাজৈর, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সদর, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুর সদর, নেত্রকোনার মদন এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সরকারের সময়ে বিদ্যুত খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা তখন ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট; গ্রাহক ছিল এক কোটি আট লাখ। সেই উৎপাদন ক্ষমতা এখন বেড়ে ১৬ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট হয়েছে। আর গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে বলে জানান বিদ্যুত সচিব।
২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আট বছরে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুত উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএনপি দিয়েছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে ২৭টি বিদ্যুত কেন্দ্র ছিল। এখন ১১২টি বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে বিদ্যুত উৎপাদন একান্ত অপরিহার্য। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল; কত দ্রুত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর থেকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ৩ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। এ উপলক্ষে জামালপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক ডিভিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, রবিবার থেকে শতভাগ বিদ্যুত পাচ্ছে রাজৈর উপজেলা ১৭০ গ্রামের মানুষ। রবিবার সকাল ১০টায় এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেন সরকারী রাজৈর ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তমা কির্ত্তনীয়ার সঙ্গে।
সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এলো মেহেরপুরের সদর উপজেলা। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম রসুল, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনসহ জেলার সরকারী কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীরা।
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ঢাকা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ১০টি উপজেলার সঙ্গে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, রবিবার দুপুর ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁ সদর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে, সদর উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলক উন্মোচন করেন আব্দুল মালেক এমপি।
