ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাসহ ২২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাসহ ২২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর গৌর মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের মামলায় ১৩ মাস ১০ দিনের মাথায় পুলিশ ২২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে। এর মধ্যে ৫ কিশোর অভিযুক্ত রয়েছে। মামলা নং ২২, তারিখ ৩০/১০/১৬ চার্জশীট নং ২৩৯ তারিখ-৫/১২/২০১৭। মামলায় যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ১১ জনকে চার্জশীট থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর সশরীরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাসিরনগর আদালতে হাজির হয়ে কোর্ট পরিদর্শকের কাছে চার্জশীটটি দাখিল করেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর মোঃ মাহাবুব হোসেন পুলিশের অভিযোগপত্র (চার্জশীটের) কপি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর ৩০ অক্টোবর গৌর মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। নাসিরনগরের হরিনবেড় গ্রামের রসরাজ দাস তার মোবাইল ফোন থেকে পবিত্র কাবা শরীফের বিকৃত ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জের ধরে উপজেলা সদরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি ঘরে হামলা হয়। পরে একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ের করা ৮ মামলায় অন্তত ৩ হাজার লোককে আসামি করা হয়। গৌরমন্দির হামলায় ঘটনায় মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে আড়াই থেকে তিন হাজার অঞ্জাতনামা লোকের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ চার্জশীট প্রদান করে। পুলিশের অভিযোগ পত্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের নাম রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেনÑ নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (বহিষ্কারের সুপারিশকৃত) ফারুক মিয়া, চাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (বহিষ্কারের সুপারিশকৃত) হাজী সুরুজ আলী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হান্নান, হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জামাল মিয়া, হরিপুর মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি কাপ্তান মিয়া, বিল্লাল হোসেন, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিরুল হোসেন চকদার, সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল আহাদ, নাসিরনগর সদর কমপ্লেক্স মসজিদের ইমাম মোখলেছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ চৌধুরী। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফর জানান, যথাযথ তদন্ত শেষে ভিডিওফুটেজসহ সাক্ষীর ভিত্তিতেই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। নাসিরনগরে হিন্দু মন্দির ও বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে সরকার দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। জেলা ও নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের চরম দ্বন্দ্বের বিষয়টি ও প্রকাশ পায় এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে। জেলা আওয়ামী লীগ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আবুল হাশেম, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ ফারুক মিয়া ও চাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলীকে বহিষ্কার করে। অন্যদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসিরনগরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল সরকারকে বেকায়দায় ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে। তাই পরিকল্পিতভাবে সেদিন তা-ব চালানো হয়েছিল। স্থানীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণেই এমনটি ঘটেছে। সূত্র বলছে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে নিয়ে স্থানীয় মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুর হকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ হয়। আঁখিকে মৎস্যমন্ত্রী স্থানীয়ভাবে মনোনয়ন দেননি। আর জেলা নেতারা মনোনয়ন প্রদান করেন আঁখিকে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রীর দূরত্ব বাড়ে। বিভিন্ন কারণে মৎস্যমন্ত্রীকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই ঘটে নাসিরনগর তা-ব। ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেয়া নিয়ে হিন্দু বাড়ি ঘর ও মন্দির ভাংচুর করা হয়। দেশ-বিদেশে প্রবল ভাবে নাড়া দেয় এ ঘটনা। বিশ্ব মিডিয়ার প্রচারে ঠাঁয় পায়। নাসিরনগর সন্ত্রাসের ৫ দিনের মাথায় মৎস্যমন্ত্রীর সমর্থিত ৩ আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে। এ বহিষ্কার ঘটনায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি ও জেলা পরিষদের নব্য নির্বাচিত সদস্যদের সম্মিলিত নাগরিক সমাজ প্রদত্ত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নাসিরনগরের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন করেন স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে। আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সদর আসনের সংসদ সদস্যের নাম ও দলের সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে বলেন, এক কোটি ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মদ ব্যবসায়ীকে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি ২ জনের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদের কারণে নাসিরনগর বিশ্ব সংবাদে পরিণত হয়েছে। রসরাজের ফেসবুক থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ব্যঙ্গ চিত্রের ঘটনায় ২৯ অক্টোবরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয় তার বিরুদ্ধে।
×