ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে ইটভাঁটি থেকে তিন শ্রমিক উদ্ধার ॥ ম্যানেজার আটক

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

নাটোরে ইটভাঁটি থেকে তিন শ্রমিক উদ্ধার ॥ ম্যানেজার আটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ১০ ডিসেম্বর ॥ মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণকৃত তিন শ্রমিককে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের টিবিএম ইটভাঁটি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে ইটভাঁটি ম্যানেজার মোঃ কালামকে আটক করা হয়। শনিবার রাতে শহরের কান্দিভিটাস্থ টিবিএম ইটভাঁটি থেকে তাদের উদ্ধার ও আটক করা হয়। পরে রবিবার দুপুরে অপহৃতের চাচা কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের এবং আটককৃত ম্যানেজারকে বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তিন শ্রমিককে অপহরণ করে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান তার ইটভাঁটিতে আটক করে রেখেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের কাছে এমন সংবাদ জানতে পেরে তিনি ইটভাঁটিতে অভিযান চালায়। অভিযানকালে ভাঁটি থেকে তিন শ্রমিককে উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ভাঁটির ম্যানেজারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে রবিবার দুপুরে উদ্ধারকৃতদের চাচা কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর বিকেলে উদ্ধারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালত আটককৃত ভাঁটি ম্যানেজারকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। উদ্ধারকৃতরা যশোরের কেশবপুরের বরনডালী গ্রামের পলাশ ,মনিরুল ইসলাম ও টিপু সুলতান। এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি নাটোর জেলার একজন সুনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার ভাঁটি থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তারা সেই ভাঁটির শ্রমিক। তাদের কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণও দাবি করেনি। ভাঁটির প্রায় সব শ্রমিকই অগ্রীম টাকা নিয়ে কাজ করে। প্রকৃত ঘটনা তার ইটভাঁটির লেবার দেওয়ার কথা বলে যশোরের বেল্লাল ৩ লাখ টাকা আগাম গ্রহণ করে। কিন্তু মাত্র ৫জন শ্রমিক দিয়ে বাকী শ্রমিকদের অন্য একটি ইটভাঁটিতে লাগায়। তিনি সাংবাদিকদের কাছে লেবার সরদার বিল্লাল হোসেনকে আগাম প্রদানের চেকের ফটোকপি এবং তিন শ টাকার স্ট্যাম্পে এগ্রিমেন্টের কাগজ প্রদান করেন। গত শনিবার টাকা আদায়ের জন্য তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন একজন শ্রমিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি ভালোভাবেই জানেন শ্রমিকরা কিভাবে টাকা উপার্জন করেন। তাদের কত পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে হয়। তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমন অনেক শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও শ্রমিকদের অগ্রীম টাকা দেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে তার কাছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্যর মাথায় বাঁজ পরেছে। কারণ তিনি জানেন আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মী তার সাঙ্গে নেই। এ জন্য তাকে ভয় পেয়ে এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল সশরীরে থানায় গিয়ে মামলা নেওয়ার জন্য তদবির করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, যশোরের এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সেখানকার সংসদ সদস্য তাকে মোবাইল ফোনে জানায় নাটোরের টি বি এম ইটভাঁটির মালিক তার নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন শ্রমিককে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। তিনি আরও বলেন সেই ইটভাঁটির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা বিষয়টি আপনি একটু দেখবেন। পরে শফিকুল ইসলাম শিমুল ঘটনাটির সত্যতা জানতে নাটোরে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবু হাসনাতকে বলেন। পরে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে শনিবার রাতে শহরের কান্দিভিটাস্থ টি বি এম ইটভাঁটিতে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং সেই ভাঁটির ম্যানেজারকে আটক করে। ইটভাঁটি মালিক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কেউ আইনের উর্ধে নয়। অপরাধ যেই করুক তার শাস্তি দিতে হবে। দলের ভেতরে থেকে আগামী নির্বাচনে তার সুনাম ও অর্জন নষ্ট করতে একটি মহল এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঘটনাটি দলের সব্বোর্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে সে বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×