ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পিডিবির মিটার রিডারদের হয়রানি ॥ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে পিডিবির মিটার রিডারদের হয়রানি ॥ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পিডিবি’র মিটার রিডারদের হয়রানিতে চরম অসন্তোষ গ্রাহকদের মাঝে। মিটারে শূন্য রিডিং এমনকি বিদ্যুত ব্যবহার না করলেও মিনিমাম বিল দিচ্ছে না মিটার রিডাররা। তবে অফিসে ধর্ণা দিলেই বিল কমানো হয়। আবার মিটার রিডারদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ না রাখলে অবৈধদের বিল চেপে দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান গ্রাহক। কর্তৃপক্ষের কোন অভিযান না থাকায় মিটার রিডারদের সঙ্গে যোগসাজস অবৈধদের। এদিকে, যেসব এলাকায় প্রিপেইড মিটার নেই সে সব এলাকায় বিদ্যুত বিল নিয়ে এ ধরনের জালিয়াতি ও কারসাজি চলছে চট্টগ্রামে। তবে, গ্রাহক সচেতন না হলে এবং মিটারের রিডিং সম্পর্কে জ্ঞাত না হলে বিলের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয় গ্রাহক। আরও অভিযোগ রয়েছে, মিটার রিডাররা ব্যাক্তিগত অর্থে লোক নিয়োগ করার ঘটনাও প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরীর আকবরশাহ মাজার এলাকার বাণিজ্যিক গ্রাহক নং- ৮২১১৭৮৭১, বিল নং-২১৯০৩২১৭, সিডি-২১ এর আওতায় গত অক্টোবর মাসে পরিশোধিত শূন্য ইউনিটের বাণিজ্যিক বিল দেয়া হয়েছে ২৭৩ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসের ২৭৩ টাকা, সংশোধনের পর আগস্ট মাসে মাত্র ১৩ টাকা, জুলাই মাসে ৫৯২ টাকা ও জুন মাসে ৯৮৯ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে বাণিজ্যিক বিল প্রতিইউনিট সরকার যা নির্ধারণ করেছে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এই গ্রাহককে। একইভাবে গ্রাহক নং- ৮২১১৭৮৯৯, বিল নং-২১৭৪৩৫৪৭, সিডি-২০ এ গত জুন মাসে শূন্য রিডিংয়ের জন্য ১৩৪৯ টাকা, জুলাই মাসে ৮৪৭ টাকা, আগস্ট মাসে ২৭৩ টাকার কম্পিউটারাইজড বিল দেয়া হয়েছে। অপর আরেকটি বিলে দেখা গেছে, গ্রাহক নং- ৮২১১৭৮৮৪, বিল নং-২১৭৪৩৫৪৭, সিডি-১৪ এর আওতায় শূন্য ইউনিটের বিল দেয়া হয়েছে আগস্ট মাসে ২৭৩ টাকা, জুলাই মাসে ৫০২ টাকা ও জুন মাসে ৫৭৮ টাকা। অসাধু মিটার রিডার ওইসব মিটারে রিডিং না দেখেই এমন অসামঞ্জস্য বিল দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মূলত ওই এলাকায় থাকা অসাধুদের সুবিধা দিতে গিয়ে ও পিডিবি’র টার্গেট ঠিক রাখতে গিয়ে যোগসাজসের মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব মিটারের গ্রাহক খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের মিটার রিডার আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ব্যাক্তিগতভাবে যে দুজন নিয়োগ দিয়েছেন তারা যত ইউনিটের বিল দিয়েছে তত ইউনিটেরই কম্পিউটার বিল হয়েছে। মিটারে উল্লেখিত রিডিং নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিল নিয়ে আসলে ঠিক করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন জুয়েল জনকণ্ঠকে জানান, মিটার রিডাররা মিটার না দেখে ইচ্ছামত রিডিংয়ে বিল দেয়ার ঘটনার অভিযোগ আছে। তবে অবৈধদের বিল বৈধদের উপর দেখানোর কোন ঘটনা ঘটে না। অবৈধদের বিদ্যুত ব্যবহার সরকারের সিস্টেম লস হিসেবে থেকে যায়। এরপরও গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে মিটার রিডিংয়ের উপর তা সংশোধন করা হয়। আরও অভিযোগ রয়েছে, পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ খুলশীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ মিটার রিডারদের কারসাজির কারণে অতিরিক্ত অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। শুধু খুলশীই নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও তিন পার্বত্য জেলাসহ ২০টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ কানে তুলছে না প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলীরাও। অথচ, অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীরা দিব্যি মিটার রিডারদের ও তাদের নিয়োগকৃত অবৈধ রিডারদের মাধ্যমে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। আবার মিটার নেই, তবে অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে ২শটি পরিবারের গৃহে। এমন নজির রয়েছে নগরীর আকবরশাহ মাজার সংলগ্ন শহীদ স্মরণী আবাসিক এলাকায়।
×