ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

মুন্সীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে গৌরবোজ্জ্বল দিন আজ সোমবার। ’৭১ এর দিনে মুন্সীগঞ্জ হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়েছিল। তাই দিবসটি পালনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ১৯৭১-এ রক্তঝরা দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলাও গর্জে উঠেছিল। ২৯ মার্চ হরগঙ্গা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান কলেজের শহীদ মিনারে সংগ্রামী ছাত্র জনতার সম্মুখে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ঐদিনই ছাত্র জনতা মুন্সীগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে মুন্সীগঞ্জের প্রতি পাকসেনাদের তীক্ষè দৃষ্টি ছিল। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় পাক বাহিনী এলাকাটিতে দখল রাখতে চেয়েছিল। পাক বাহিনী যাতে ঘাঁটি করতে না পারে তাই সেজন্য ধলেশ্বরী তীর এলাকায় বাংকার তৈরি করে মুক্তিবাহিনী পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনী মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রবেশ করে পয়লা মে। একযোগে ধলেশ্বরী তীরের মুন্সীগঞ্জ শহর এবং আব্দুল্লাপুর লঞ্চঘাট দিয়ে পাকিবাহিনী প্রবেশ করে। এর পরই চালায় ধ্বংসযজ্ঞ। হরগঙ্গা কলেজে ছিল মুন্সীগঞ্জে হানাদার বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প। কলেজটি নারকীয় নানা তা-বের সাক্ষী। কলেজের পূর্ব পাশের বদ্ধভূমিতে নির্মাণ হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। নির্যাতন-হত্যা ছাড়াও অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারায় এখানে। ক্যাম্পে বসেই নীলনক্সা করে ক্যাপ্টেন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী। অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তৎকালীন মহকুমা জুড়ে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধ ছড়িয়ে পরে চারদিকে। ক্রমেই কোণ্ঠাসা হতে থাকে পাকিস্তানী বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার আানিস-উজ-জামান জানান, পাকবাহিনী ’৭১ এর ৯ মে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায় গজারিয়া উপজেলার ১০ গ্রামে। হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা ৩শ’ ৬০ নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। গা ঢাকা দেয় পাক বাহিনীর দোসর রাজাকাররাও। আর ১১ ডিসেম্বর কাক ডাকা ভোরে মুন্সীগঞ্জের আকাশে ওড়ে বিজয় কেতন। মুক্ত হয় মুন্সীগঞ্জ। টাঙ্গাইল নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল সূর্য সন্তানরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। জয় বাংলা সেøাগানে মুখোরিত হয় সারা জেলা। মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ। যুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পার হয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই দেশ শত্রু মুক্ত করতে টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে পৌলিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় ২ হাজার সেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারা ছুটতে থাকে ঢাকার দিকে। সেই রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এমপি টাঙ্গাইল থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকেন এবং সারা শহর নিজেদের দখলে নিয়ে হানাদারদের ধরতে থাকেন। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লসিত মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে টাঙ্গাইল শহর। হিলিস্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, আজ ১১ ডিসেম্বর হিলি শত্রু মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ভারত সীমান্তবর্তী এই এলাকায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আকাশ ও স্থলপথে প্রচ- যুদ্ধের পর ৭নং সেক্টরের আওতায় হিলি শত্রুমুক্ত হয়। এ সময় এখানে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ৩শ’ ৪৫ ভারতীয় সেনা সদস্য ও দেড়শতাধিক নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পক্ষান্তরে তিন শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। অনেক পাক সেনা এখানে আত্মসমর্পণ করে। উদ্ধার হয় পাক সেনাদের ব্যবহৃত ৩০টি ট্যাংকসহ বিপুলসংখ্যক ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ। হিলির সীমান্তবর্তী মুহাড়াপাড়া এলাকায় শহীদ ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি ‘সম্মুখ সমর’ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। হিলি মুক্ত দিবস উপলক্ষে সম্মুখ সমরে ফুল দেয়া, র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
×