ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরের সুরক্ষা ও সুবিধা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

বিমানবন্দরের সুরক্ষা ও সুবিধা

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কি চোরাচালান বান্ধব? এটি কি হৃদয়শূন্য রোবটেরা পরিচালনা করে থাকে? এমন প্রশ্ন উত্থাপন কাউকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং নাগরিকবৃন্দ যে বিরক্ত-বিব্রত-বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত সেই অসহায়ত্ব থেকে বের হয়ে এসেছে এমন প্রশ্ন। রোবটের হৃদয় থাকে না, সে মানবিক নয়। মানুষ মানবিক হবে। তাই ঢাকার মাটিতে নেমে বিদেশ প্রত্যাগত কোন ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় জরুরী চিকিৎসা পাবেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক থাকবেন, তাকে বহন করার জন্য অন্তত এ্যাম্বুলেন্স থাকবে এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। অথচ বাস্তবে রয়েছে এসবের অনুপস্থিতি। গত শুক্রবারের ঘটনা। চিকিৎসক ও এ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেলেন মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রী মোঃ সানাউল্লাহ। ইমিগ্রেশনে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ব্যাগেজ বেল্টে এসে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিমানবন্দরের মেডিক্যাল সেন্টারে ছিলেন না কোন চিকিৎসক। হাসপাতালে নেয়ার জন্য পাওয়া যায়নি কোন এ্যাম্বুলেন্স। বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে ওঠানোর পরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আসা যাক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। বিমানবন্দরের ভিআইপি চেক-ইন পয়েন্টের স্ক্যানার অচল। ৮ নং গেটে নেই ভেহিকল স্ক্যানার। এমনকি নেই ম্যানুয়াল স্ক্যানারও। কার্গো গেটের অবস্থাও অনুরূপ। এয়ারসাইট থেকে গাড়ি বের হচ্ছে কোন ধরনের চেক ছাড়াই। গোটা এয়ারপোর্টের অনেক পয়েন্ট রয়ে গেছে সিসিটিভির আওতার বাইরে। এই হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা! একটি এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মানদ- নির্ভর করে অর্থ, বিস্ফোরকদ্রব্য, গোলাবারদ ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচার এবং চোরাচালানের হারের ওপর। কিন্তু শাহজালালে রেডলাইন নামক সংস্থা কাজ করছে শুধু যেন লন্ডন ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে। এ বিষয়ে বিমানের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠ প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরীভিত্তিতে রেডলাইন নিয়োগ দেয়া সম্ভব হলেও মাত্র এক কোটি টাকা ব্যয়ে গোটা বিমানবন্দরে সিসি ক্যামেরা কেন লাগায়নি সিভিল এ্যাভিয়েশন? মনে রাখতে হবে যে কোন দেশের বিমানবন্দর স্পর্শকাতর এলাকা। তাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্য। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বারবার সংশয়বাণী উচ্চারিত হচ্ছে। সেসব যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণও মিলেছে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ঘাটতির প্রশ্ন তুলে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে বিমানে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত আগস্টে বিমানন্দরের মূল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা বিমান উড্ডয়নসহ টার্মিনাল ভবনে বহির্গমন কার্যক্রম ছিল বন্ধ। কথায় বলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। আমাদের প্রধান বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমনই কিনা এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর সুসংবাদ পাওয়া গিয়েছিল অনেক আগেই। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এক বছর আগে বলেছিলেন, ‘সরকার বিমান এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতোমধ্যেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ বিমানবন্দরে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।’ আসলেই কি তাই? বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং যাত্রীসুবিধা যথোপযুক্ত করার লক্ষ্যে যা যা করা দরকার সেসব জরুরীভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে এটাই প্রত্যাশা।
×