ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৯ ডিসেম্বর ॥ মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ। ‘৭১-এর এই দিনে একটানা ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধে পর্যুদস্ত হানাদারবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জেলা শত্রুমুক্ত হয়। এ সংবাদে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সবক’টি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণেই হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এ.আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখে। ৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের ড্রাইভার আলাউদ্দিন কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌঁছে দেয় যে, ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকবাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে ৪ কিমি.ব্যাপী অবস্থান নেয়। এদিকে সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারাদিন সারারাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সম্মুখযুদ্ধ চলে মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদারবাহিনীর মধ্যে। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদারবাহিনীর গোলাবারুদ স্তিমিত হয়ে এলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকযোগে পাকবাহিনীকে আত্মসর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এতে সাড়া দিয়ে হানাদারবাহিনী রাইফেলের মাথায় সাদা কাপড় উড়িয়ে বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে এবং পাশের খাল থেকে পানি, গাড়ি থেকে শুকনো খাবার ও গোলাবারুদ নিয়ে পুনরায় বাঙ্কারে ঢুকে গোলাগুলি শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ধ্যার আগেই হানাদারবাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদ, ৩৭ পাকসেনা, ১৪ জন মুজাহিদ নিয়ে মোট ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা খলিলবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মিত্রবাহিনী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল খলিলবাহিনী। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। এ যুদ্ধে ২০ হানাদার সেনা নিহত হয়। রানীনগর নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, ১০ ডিসেম্বর নওগাঁর রানীনগর হানাদারমুক্ত দিবস। বাঙালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বরের বাকি আর মাত্র ৬ দিন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রানীনগরবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন। আজকের এই দিনে নওগাঁর রানীনগর উপজেলা ৩৭ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সাড়া দিয়ে সারাদেশের ন্যায় এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর নওগাঁর রানীনগর উপজেলাবাসী আজকের এ দিনে শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস আর ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ জয়ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিলেন রানীনগর উপজেলার আকাশ-বাতাস। এ এলাকা পাক হানাদারমুক্ত করতে অসংখ্য জীবন বলিদান এবং কত অসহায় মা বোনের সম্ভ্রম লুন্ঠিত হয়েছিল সেই ভয়াবহ দিনে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানে না। নড়াইল নিজস্ব সংবাদদাতা নড়াইল থেকে জানান, আজ ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নড়াইলের মুক্তি পাগল দামাল ছেলেরা মিত্রবাহিনীর কোন প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীকে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করে নড়াইলকে মুক্ত করে। ১৪ ডিসেম্বর মেজর মঞ্জুর নড়াইলে আসেন এবং মুক্তিপাগল হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ডাক বাংলো প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। দিবসটি পালন উপলক্ষে নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চিত্রা থিয়েটার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ৯ ডিসেম্বর বিজয়ের তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে নড়াইলের মুজিববাহিনীর কমান্ডার শরীফ হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ভবানীপুর গ্রামের শরীফ বাড়িতে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা জড়ো হয়ে হানাদারবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে সম্মুখযুদ্ধে বাগডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন। ওই দিনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত পাকিস্তান মিলিটারির ৪০ জন সদস্যকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে প্রচ- গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এখানে একজন পাক মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত শহরে টহল দিয়ে বিজয় উল্লাস করে। ১০ ডিসেম্বর নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে।
×