ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিলছে না কৃষিশ্রমিক

কলাপাড়ায় জীবনধারা বদলে গেছে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

কলাপাড়ায় জীবনধারা বদলে গেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ৯ ডিসেম্বর ॥ যেন উল্টোচিত্র। পাঁচ-সাত বছর আগেও আশি^ন-কার্তিকে বেকার থাকত কামলা দেয়া শ্রমিকসহ এ পেশা সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। জমি-জিরাতহীন মানুষ ঘুরত গেরস্থ পরিবারের কাছে। ভূমির মালিকরা পানির দরে শ্রম কিনে নিত। আর এখন বইছে উল্টোচিত্র। ওই দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। খুঁজে বের করতে হচ্ছে কৃষিশ্রমিক। দুই-আড়াই শ’ টাকা দৈনিক মজুরির বদলে এখন কৃষিশ্রমিকের মজুরি সর্বনি¤œ চার থেকে পাঁচ শ’ টাকা। তাও মিলছে না। বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে কৃষিশ্রমিক এনে ভূমির মালিকরা চাষাবাদ থেকে এখন কিষান হিসেবে ধান কাটাচ্ছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। ২০০৯ সালে শুরু। যার গতির ধারা বহমান, বেগবান। এই উন্নয়নযজ্ঞে শামিল হয়েছে কৃষকশ্রেণীর একটি বিরাট অংশ। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ, সড়কের উন্নয়নে মানুষ অটোবাইক, অটোরিক্সা, ক্ষুদে দোকান দিয়ে ব্যবসার পসরা বসিয়েছেন। চাহিদা বাড়ায় সবজির আবাদে ঝুঁকছেন কৃষিশ্রমিক। আবার কৃষকের ছেলে কৃষক হবে এমন ভাবনার ধারা পাল্টে স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন। শিক্ষিত করার স্বপ্নে জীবনধারা পাল্টে যাওয়ার মানসিকতাও প্রখর হয়ে উঠেছে। এছাড়া কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষিশ্রমিকের কর্মপরিধি কমে গেছে। মোদ্দাকথা কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা কলাপাড়ায় শঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মতে, শতকরা ৮৫ ভাগের কৃষিশ্রমিকের হিসাব কমে এখন পৌঁছেছে ৪৪ ভাগ। ভূমির মালিকরা একসনা, বর্গা কিংবা সাত বছরের চুক্তিতে কাউকে দিয়ে জমিজমা আবাদ করছেন। আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাদের জমিজিরাত কম তারা এখন নিজের যা আছে তা নিয়েই ১২ মাস সবজির আবাদ করে জীবনের চাহিদা মেটাচ্ছেন। নির্দিষ্ট কৃষিশ্রমিকের সংখ্য আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ইটবাড়িয়া গ্রামের তৈয়ব আলী জানান, আগে তিনি কৃষিশ্রমিক ছিলেন। হালচাষ করতেন। ধান কাটতেন। এখন আর করেন না। তার ভাষায়, কাদায় কাম করতে ভাল লাগে না। অটো চালান পাকা রাস্তায়। মজুরিও বেশি পায়। মোঃ খোকন জানালেন, কৃষিকাজ ছেড়ে এখন ট্রলারে মাছ ধরেন। আগে আমজেদ মিয়ার হালচাষ করেছেন। কৃষক পরিবারে এখন উৎপাদন খরচ কমাতে যান্ত্রিকীকরণ যোগ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। যাতে কৃষিশ্রমের ক্ষেত্র থাকলেও শ্রমের সময়কাল কমে গেছে। আবার কৃষকরা তাদের এ পেশাকে অনেকটা মর্যাদাহীন কিংবা মানসম্পন্ন নয়, এমন মানসিকতাও রয়েছে। এজন্য তারা তাদের সন্তানদের পেশায় না এনে শিক্ষিত করছেন। এ ক্ষেত্রে আগামী প্রজন্ম পেশা পাল্টে ফেলছে। উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মোঃ মসিউর রহমান জানান, মূলত উৎপাদন খরচ কমানো, সময় কম লাগা, শারীরিক শ্রম কম দেয়ার মধ্য দিয়ে আধুনিকভাবে যান্ত্রিকীকরণের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে কৃষক। প্রযুক্তিগতভাবে তারা দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় এ পেশার শ্রমিক কম লাগছে। পাশাপাশি মর্যাদাসম্পন্ন পেশায় সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের কারণে অন্য পেশায় মজুরি বেশি পাচ্ছে। এ কর্মকর্তার দাবি, সরকার যান্ত্রিকীকরণ সুবিধার জন্য কৃষককে ব্যাপকভাবে আগ্রহী করছে। তবে কৃষিশ্রমিক ক্রমশ কমছে বলে তিনিও স্বীকার করেন।
×