ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবন্ধীদের জন্য ঢাকায় বসেছিল একদিনের চাকরিমেলা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রতিবন্ধীদের জন্য ঢাকায় বসেছিল একদিনের চাকরিমেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রতন সূত্রধর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হয়েও স্বপ্ন দেখেছে অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজে উপার্জন করার। লেখাপড়া করে এইচএসসি পাসও করেছেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২২ বছর বয়সেই উর্মি গ্রুপে কম্পিউটারে চাকরি পেয়েছেন। হুইলচেয়ারে বসে বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, আমাকে প্রতিবন্ধী বলে পেছনে রাখা যাবে না, আমিও কাজ পারি, আয় করতে পারি। এই উচ্ছ্বাস শুধু রতনের নয়, তার মতো আরও শতাধিক প্রতিবন্ধীর কণ্ঠেও ছিল উচ্ছ্বাসের হাসি। হাবিবা আক্তার, রাবেয়া সুলতানা, কাজী বিল্লাল কিংবা জহিরুল ইসলাম সবাই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছেন। তারা পেয়েছেন কাক্সিক্ষত চাকরি আর মেতে ওঠেন বিজয়ের আনন্দে। চাকরি পাওয়া এমন অসংখ্য প্রতিবন্ধীর উচ্ছ্বাস আর চাকরিদাতাদের আগ্রহ দুই মিলে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে চাকরি মেলা। ‘প্রতিবন্ধিতা নয়, সক্ষমতাই হোক নিয়োগের মাপকাঠি’ এই সেøাগানে বাংলাদেশ বিজনেস এ্যান্ড ডিজএ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন), ক্যাম্পেন ফর এডুকেশন ও এ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে বিজিএমইএ ভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য এই চাকরি মেলার আয়োজন করে। শনিবার দিনব্যাপী এই মেলা বসে। নিয়োগকর্তা আর চাকরিপ্রার্থী উভয়ের এক মেলবন্ধন ছিল এই চাকরিমেলা। আয়োজকরা জানান, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোকে উপেক্ষার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের প্রায় ৯.০৭ ভাগ প্রতিবন্ধী রয়েছেন যারা কাজের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন। এছাড়াও দেশের উন্নয়নের সঙ্গে এই মানুষদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর মেলার মাধ্যমে চাকরি পেয়ে একদিকে যেমন প্রতিবন্ধীদের উপকার হচ্ছে, ভোগান্তি কম হচ্ছে, তেমনি ভাল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে গর্ববোধ করছে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। মেলা ঘুরে দেখা যায়, কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কেউ শ্রবণ, কেউ আবার বাক প্রতিবন্ধী। যারা চলাফেরা করতে পারেন না এমন তরুণ বা তরুণীরা এসেছেন হুইলচেয়ারে করে। সবার লক্ষ্য একটাইÑ যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাওয়া। মেলায় বিভিন্ন বুথে নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন। বুথের কর্মকর্তারা তাদের বায়োডাটা জমা নিয়ে সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। জানা গেছে, মেলায় ২০ কোম্পানি তাদের বুথে এই সেবা দিচ্ছেন। যাদের সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে তাদের পরবর্তীতে তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। এছাড়াও মেলায় ৮০ জনের হাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হয়। প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই এ চাকরি মেলার অন্যতম উদ্দেশ্যে। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের কাজের দক্ষতা ও সামর্থ্য বিষয়ে নিয়োগকর্তাদের জানানো এবং নিয়োগকারীদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সম্পর্কে সচেতন করাও চাকরি মেলার উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা কাজ করছেন এবং তারা ভাল কাজ করছেন। এই বিষয়ে একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। ভিডিওতে প্রতিবন্ধীদের কাজ নিয়ে নানা ধারণা দেয়া হয়। আয়োজকরা জানান, দেশে কেয়া গ্রুপ শারীরিক, শ্রবণ এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রায় ১৫০০ ব্যক্তিকে চাকরি দিয়েছে।
×