ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পর্দা নামল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ॥ শেষ দিনেও স্টলে স্টলে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

পর্দা নামল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ॥ শেষ দিনেও স্টলে স্টলে উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পর্দা নামল ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’র। শনিবার প্রদর্শনীর শেষ দিনেও রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে প্রযুক্তিপ্রেমীদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন ও অর্জন বিষয়ক ধারণা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল এই আয়োজন। মেলার শেষ দিনেও সরকারী-বেসরকারী স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। যার মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পুলিশ, দুই সিটি কর্পোরেশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্টলে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, দেশের ডিজিটাইলেজেশন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও পদক্ষেপসমূহ দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭ শুরু হয়েছিল ৬ ডিসেম্বর। চার দিনব্যাপী এ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের শেষ দিনের আয়োজনেও ছিল ৯টি সেশন। সেশনগুলো হলো- আইটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প, দ্য প্রেসপেক্ট এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডিজিটাল কারেন্সি ইন বাংলাদেশ, এপিআইসিটিএ ইয়ুথ কার্নিভাল, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এ্যান্ড ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফিউচার, ডিজিটাল অপরচুনিটি অব ইয়ুথ, টুমরোস স্কিল টু গেট রেডি ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশন, ইনোভেশন ইন গবর্নমেন্ট এবং ক্লোজিং সিরিমনি (এ্যাওয়ার্ডস নাইট)। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ এই আয়োজনের অংশীদার এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড হচ্ছে। এর ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসন্ন। এই বিপ্লব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ ভীত নয় বরং বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে বলে ‘আগামী দিনের দক্ষতা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ শীর্ষক এক সেমিনারে মন্তব্য করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের চতুর্থ দিন সকালে আয়োজিত এক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এক সময় তথ্যপ্রযুক্তি মেলার আয়োজন করলে লোকসমাগম হতো না। আর এখন আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন মানুষের ভিড়। তার মানে কি আমরা পিছিয়ে গেছি? না আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের আরও জ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহণ করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মৃখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, এফবিসিআইয়ের মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিজিএমইএর সিদ্দিকুর রহমান, বিএমইটির সেলিম রেজা, টেকনিক্যাল এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের এমডি আলমগীর, আইএলও সাউথ এশিয়া টেকনিক্যাল টিমের গামরিল এইচ বরদাদোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন সেবা ডিজিটালাইজড হচ্ছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যতটা শিল্প ও প্রযুক্তিতে উন্নয়ন ঘটেছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ততটা উন্নত হয়ে ওঠেনি। এছাড়াও প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবনের ফলে শিল্প ক্ষেত্র খুব দ্রুত অটোমেশন ঘটছে। তবে এই অটোমেশনের কারণে আমাদের বাংলাদেশে অনেক বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনবল উন্নয়নে ক্ষেত্রে নতুন নতুন ট্রেডে মনোনিবেশন করতে হবে। এবং চাহিদা অনুযায়ী সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করাতে হবে। এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মূল আকর্ষণ ছিল সোফিয়া এবং অস্কার বিজয়ী নাফিসকে ঘিরে। এই দুয়ে মিলে তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎসব প্রথম দিন থেকেই জমজমাট। ৬ ডিসেম্বর সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যদিও সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশে ভিড় জমাচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। কেননা, দুপুরে রোবট সোফিয়াকে সকলের সামনে উপস্থাপন করার কথা ছিল। আর এ জন্য দল বেধে হাজার হাজার প্রযুক্তিপ্রেমী সোফিয়ার সঙ্গ পাওয়ার আসায় ভিড় জমান হল অব ফেমে। সেখানে রীতিমতো তিল ধারণের জায়গা ছিল না। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই সোফিয়াকে চাক্ষুস দেখতে পারেনি। ফলে কিছুটা অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যারা রোবটটির কথা কাছ থেকে শুনতে পেরেছিলেন তারা যারপরনাই খুশি হয়েছেন। কেননা, তারা এ ধরনের রোবট এর আগে দেখার সুযোগ পাননি। রোবট সোফিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসনও। রোবটটি বাংলাদেশের জামদানির প্রশংসা করে। এছাড়াও সে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির কথাও সমাগতদের সামনে উপস্থাপন করে। আর ডেভিড হ্যানসন শোনালেন আশার বাণী।
×